শিরোনাম
◈ অন্তর্বর্তী সরকারের আহ্বানে সাড়া? বিএনপি–জামায়াতের মধ্যে আলোচনা উদ্যোগ ◈ আজ ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস ◈ ভয়ানক অভিযোগ জাহানারার, তোলপাড় ক্রিকেটাঙ্গন (ভিডিও) ◈ জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও সময়মতো জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিতের আহ্বান বিএনপির স্থায়ী কমিটির ◈ কমিশনের মোট ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৭১ লাখ টাকা, আপ্যায়ন বাবদ ব্যয়  ৪৫ লাখ টাকা ◈ ভার‌তের কা‌ছে পাত্তাই পে‌লো না অস্ট্রেলিয়া, ম‌্যাচ হার‌লো ৪২ রা‌নে ◈ শুল্ক চুক্তির অধীনে মা‌র্কিন উ‌ড়োজাহাজ নির্মাতা বোয়িংয়ের কাছ থেকে ২৫টি বিমান কিনছে বাংলাদেশ ◈ টিটিপাড়ায় ৬ লেনের আন্ডারপাস, গাড়ি চলাচল শুরু শিগগিরই (ভিডিও) ◈ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপূরণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ বার্তা ◈ ভালোবাসার টানে মালিকের সঙ্গে ইতালি যাওয়া হলো না সেই বিড়াল ক্যান্ডির!

প্রকাশিত : ১৬ এপ্রিল, ২০২১, ০৪:৫১ সকাল
আপডেট : ১৬ এপ্রিল, ২০২১, ০৪:৫১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দুস্থের চাল সুস্থের ঘরে

ডেস্ক রিপোর্ট : নীলফামারী সদরের টুপামারী ইউনিয়নের সুখধন গ্রামে ১০ শতক জমির ওপর ছাদ পেটানো পাকা বাড়ি খালেদার (৩০)। স্বামী ওমর ফারুক (৩৫) একজন কর্মক্ষম ব্যক্তি। স্থানীয় রামগঞ্জ বাজারে তার রয়েছে ওয়েলডিং, ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান মেরামতের দোকান। ওই ব্যবসাটিও তিনি জমিয়েছেন ভালো। এর আগে বাইসাইকেল মেকারের কাজ করতেন তিনি। সচ্ছল পরিবারের ওই খালেদাকে প্রদান করা হয়েছে সরকারের সামাজিক কর্মসূচির দুস্থ মাতার ভিজিডির (ভার্নাবেল গ্রম্নপ ডেভেলপমেন্ট) সুবিধা। দুই বছর মেয়াদি ওই সুবিধায় গত জানুয়ারি মাস থেকে ৩০ কেজি করে (প্রতি মাসে) চাল ভক্ষণও করছেন তিনি।

ওই কার্ড পাওয়ার কথা স্বীকার করে খালেদা বলেন, 'আমার স্বামী সাইকেল মেকার। ওই আয় দিয়ে আমরা সংসার চালাই। এছাড়া আমাদের কোনো জমিজমা নেই। গত বছর বাড়িটি নির্মাণ করেছি নয় লাখ টাকা খরচ করে।'

শুধু খালেদা নয়, সরকারের ওই কর্মসূচিটি বাস্তবায়নে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়নটিতে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে কর্মসূচি বাস্তবায়ন নীতিমালা লঙ্ঘন করে দুস্থতের ওই সুবিধা পাচ্ছেন অনেক সুস্থরাও।

ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, আছে পাকাবাড়ি, স্বামী চাকরিজীবী অথবা ব্যবসায়ী এবং সচ্ছল, সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা, ১০ টাকা কজি দরে চালের সুবিধা ভোগ করছে এমন পরিবার পাচ্ছে সরকারের ভিজিডির ৩০ কেজি (প্রতি মাসে) চালের সুবিধা।

ইউনিয়নের দুহুলীপাড়া গ্রামের আজিজুল ইসলাম (আজিবুল) একজন গরু ব্যবসায়ী। সম্প্রতি সুখধন গ্রামে তিন লক্ষাধিক টাকায় ১৫ শতক জমি কিনে নির্মাণ করছেন চার কক্ষের টিনশেডের পাকাবাড়ি। তার পরিবারে উপার্জনক্ষম দুই ছেলে কাজ করেন ঢাকাসহ এলাকার বাইরে। সেই আজিজুল ইসলামের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম পেয়েছেন ভিজিডির চালের সুবিধা।

আজিজুল ইসলাম ওই নতুন বাড়ি নির্মাণ এবং ভিজিডি কার্ড পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, 'আমি গরিব মানুষ। গরুর ব্যবসা আগের মতো নেই। ছেলেদের ইনকামের টাকা দিয়ে বাড়ি করছি।'

অপরদিকে চৌধুরীপাড়া গ্রামের আব্দুলস্নাহ ইউনিয়নটির পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবুল কালামের ছোট ভাই। ইউনিয়নের টুপামারী বাজার নুরানী মাদ্রাসার সুপার এবং স্থানীয় একটি মসজিদের ঈমাম। তার মালিকানাধীন ওই মাদ্রাসাটিতে ছোট ভাই আব্দুস ছালামও শিক্ষকতা করেন। কথা হলে আব্দুস ছালাম জানান, 'মাদ্রাসার আয় থেকে প্রতি মাসে ছয়জন শিক্ষক কর্মচারীকে বেতন প্রদান করেন ছয় থেকে সাত হাজার টাকা করে।

অবশিষ্ট আয় বড় ভাই আব্দুলস্নাহ নেন। সেই আব্দুলস্নাহর স্ত্রী রিনা আক্তারের নামেও রয়েছে ৩০ কেজি চালের ভিজিডি কার্ড।'

একই গ্রামের রেজওয়ান ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী। গ্রামে রয়েছে পাকাবাড়ি। তার স্ত্রী লতা আক্তারের নামে রয়েছ ভিজিডির ৩০ কেজি চালের সুবিধার কার্ড।

কর্মসূচি বাস্তবায়নের নীতিমালা অনুযায়ী 'পরিবারে কর্মক্ষম দুস্থ, বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত ও স্বামী পরিত্যক্তা নারী আছে এবং কোনো উপর্জনক্ষম সদস্য অথবা অন্য কোনো স্থায়ী বা নিয়মিত আয়ের উৎস নেই, সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অন্য কোনো সুবিধা ভোগ করেন না, এমন দুস্থ নারীরা ওই সুবিধা পাবেন।'

অগ্রাধিকারের বিষয়ে বলা হয়েছে, 'ভূমিহীন (বসতভিটাসহ চাষযোগ্য ১৫ শতকের নিচে) পরিবারে দুস্থ ও অসহায় মহিলা, যাদের নিয়মিত আয়ের উৎস নেই, দিনমজুর বিশেষত কৃষিক্ষেত্রে দিনমজুর, এসব পরিবারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত কিশোরী আছে, যে পরিবারের ঘরের দেওয়াল মাটির, পাটকাঠি বা বাঁশের তৈরি, পরিবারে অটিজম, প্রতিবন্ধী সদস্য আছে সেসব পরিবারের মহিলারা অগ্রাধিকার পাবেন। এক্ষেত্রে বয়স ধরা হয়েছে ২০ থেকে ৫০ বছর।'

এবিষয়ে টুপামারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মছিরত আলী শাহ ফকির বলেন, '২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সময়ে ভিজিডির সুবিধাভোগী বাছাই কাজ চলে। নির্বাচনের কারণে আমরা দায়িত্ব পালন করতে না পারায় ইউপি সচিব কাগজপত্র সংগ্রহ করে তালিকা প্রদান করেছেন। ইতোমধ্যে ৩০ কেজি করে দুই মাসের চাল প্রদান করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে এ বিষয়ে একটি অভিযোগও হয়েছে। তিনি তদন্ত কমিটি করে অভিযোগ যাচাই করছেন। নির্বাচন শেষে ক্ষমতা বসার পর আমরা নিজেরাও এসব যাচাই বাছাই করছি। কেউ ওই সুবিধা পাওয়ার উপযুক্ত না হলে বাদ পড়বেন।'

ইউপি সচিব মোস্তাক হোসেন বলেন, 'গত বছরের ১ অক্টোবর থেকে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত অনলাইনে ওই সুবিধার জন্য এক হাজার ৪০০ জন আবেদন করেছিলেন। ওয়ার্ড কমিটি এবং ইউনিয়ন কমিটি যাচাই-বাছাই করে ৪৩০ জনের তালিকা উপজেলা কমিটিকে প্রদান করেছেন। সেখান থেকে ২১৫ জন সুবিধাভোগীর তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। ওই ২১৫ জনকে গত জানুয়ারি এবং ফেব্রয়ারি মাসের ৩০ কেজি করে চাল প্রদান করা হয়েছে।'

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এলিনা আকতার অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, 'বিষয়টি নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।' যায়যায়দিন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়