আতাউর অপু : ভুক্তভোগী অনেকেই এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাসও দিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, পুলিশের আইজিপি বেনজীর আহমেদের নির্দেশনা তৃণমূল পুলিশ সদস্যরা মানছেন না। তারা আরও জানায়, কঠোর বিধিনিষেধের এই সময়ে চিকিৎসকদের জন্য সরকারিভাবে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি।
চিকিৎসকদের বাইরে বের হতে বাধা নেই এবং মুভমেন্ট (চলাচল) পাস লাগবে না বলে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ জানালেও সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধের প্রথম দিনে হয়রানির শিকার হয়েছেন চিকিৎসকরা। চিকিৎসকরা ব্যক্তিগত গাড়িতে বা সিএনজিতে করে যাওয়ার সময় পুলিশের জেরার মুখোমুখি হয়েছেন। এমনকী ব্যক্তিগত গাড়িতে করে হাসপাতালে আসার সময় চিকিৎসক পরিচয় দেওয়ার পরও পুলিশের কাছ থেকে মামলা খেয়েছেন—এমনটাও দাবি তাদের।
স্কয়ার হাসপাতালের চিকিৎসক নাজমুল ইসলামের স্ত্রী চিকিৎসক ইসরাত জাহান ফেসবুকে স্ট্যাটাসও দিয়েছেন। সঙ্গে তার স্বামীকে যে তিন হাজার টাকার জরিমানা গুণতে হয়েছে সেই স্লিপও যুক্ত করেছেন।
ইসরাত জাহান লিখেছেন, ‘আমার হাসবেন্ড স্কয়ার হসপিটালের কোভিড ইউনিটে কর্তব্যরত আছেন। আজকে সকাল ৮টা থেকে তার ডিউটি ছিল। আমাদের বাসায় আমার শ্বশুর কোভিড পজিটিভ হওয়ায় আমার হাসবেন্ড বাসা (মুন্সিগঞ্জ) থেকে নিজেদের গাড়ি নিয়ে ডিউটিতে যাচ্ছেন বেশ কিছুদিন ধরে। সকালে আমাদের গাড়ি সাইনবোর্ডের একটু পরে থামায় পুলিশ এবং তিন হাজার টাকা জরিমানা করে। আমার হাসবেন্ডের সঙ্গে তার কর্মস্থলের আইডি কার্ড ছিল। স্কয়ার হাসপাতালের ট্রান্সপোর্ট অবশ্যই মুন্সিগঞ্জ আসবে না। আর হঠাৎ একটা অ্যাপ বানিয়ে বলল নেন মুভমেন্ট পাস নামক সার্কাস নিয়া বাইর বের হবেন, যেখানে তাদের ওয়েবসাইটেই ঢোকাই যায় না। এমতাবস্থায় ডাক্তাররা কি সারাদিন ডিউটি বাদ দিয়ে পাস পাস খেলবে নাকি?’
চিকিৎসক রিয়াজ আহমেদ তমাল লিখেছেন, সকাল সাতটায় গাজীপুরের টঙ্গী কলেজ গেট থেকে টঙ্গী স্টেশন রোডে পুলিশ আটকায়। তখন হাসপাতালের আইডি কার্ড দেখাই। পুলিশ উত্তর দেয়, আমাদেরও বের হওয়া নিষেধ। হাসপাতালে ডিউটি করতে হলে সেখান থেকেই করতে হবে এবং এটাই ফার্স্ট অ্যান্ড লাস্ট ওয়ার্নিং।
করোনা ডেডিকেটেড কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের একজন নার্স জানান, এই হাসপাতালের আইসিইউর দায়িত্বে থাকা নার্সদের গাড়ি আটকায় পুলিশ। সে গাড়িতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের স্টিকার লাগানো ছিল। পুলিশ জানায়, মুভমেন্ট পাস ছাড়া গাড়ি ছাড়বে না।তিনি বলেন, আমরা কোভিড আইসিইউতে কাজ করি, অনেকবার বলার পরেও তারা গাড়ি আটকিয়ে রাখে। হাসপাতালে জানাই, দুঘণ্টা আটকে রাখার পর তারা গাড়ি ছাড়ে।
এফডিআরএসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চিকিৎসকদের কর্মস্থলে যাওয়ার পথে বিভিন্ন স্থানে পুলিশি হয়রানির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিকভাবে এফডিএসআরের পক্ষ থেকে পুলিশের ঊর্ধ্বতন মহলে বিভিন্ন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। পুলিশের আইজিপি এ বিষয়ে অবহিত হয়েছেন।
বলা হয়েছে, বিচ্ছিন্নভাবে আজ বিভিন্ন স্থানে যেসব হয়রানির শিকার হয়েছেন সব চিকিৎসকের প্রতি আমাদের সহমর্মিতা। আমরা এ অভিযোগ পাওয়ার পর থেকে গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে আমাদের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছি, অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জোর দাবি জানিয়েছি। তারা আগামীতে যেন কোনো চিকিৎসককে এমন হয়রানি না করেন সে বিষয়ে সব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
এফডিএসআরের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা বলা হয়েছে। তিনি কেবিনেট সচিবকে বিষয়টি অবহিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। যেসব চিকিৎসকদের কাছ থেকে জরিমানা নেওয়া হয়েছে সেই রশিদ দেখালে জরিমানার টাকা ফেরত দেবেন বলেও জানিয়েছেন। এরপর এমন অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থার মুখোমুখি হলে জানানোর (01711048475, 01916896490) জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :