মাছুম বিল্লাহ: [২] ভারতের আসামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ইউনাটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম বা উলফা’র (আই) সামরিক প্রধান পরেশ বড়ুয়া আত্মজীবনীমুলক বই লিখেছেন। ‘উলফা সম্পর্কিত সত্যতা, আমার শৈশব এবং কেন আমি লড়াই চালিয়ে যাব’ নামে তার আত্মজীবনী আগামী ২০ দিন অথবা এক মাসের মধ্যে বাজারে আসবে বলে পরেশ বড়ুয়া জানিয়েছেন।
[৩] ভারতের গণমাধ্যম দ্য প্রিন্টকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেছেন, ‘ বইটি লেখা সম্পন্ন হয়েছে। তবে প্রুফ রিডিং এবং সম্পাদনা এখনো শেষ হয়নি।
[৪] বাংলাদেশের ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পরেশ বড়ুয়া একসময় ওয়েল ইন্ডিয়ার হয়ে ফুটবল খেলেছেন এবং আসামের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক ছিলেন। তিনি ১৯৮১ সালে উলফায় যোগ দিয়েছেন।
[৫] কেন তিনি আত্মজীবনী লিখলেন, তার ব্যাখ্যায় বলেন, ‘বিগত বছরগুলিতে উলফা সম্পর্কে তথ্যের অপব্যবহারের বিষয়ে উদ্বিগ্ন ছিলাম। প্রকৃত সত্যটা জনগনকে জানানোর জন্য এই লেখা। এটি সত্য গল্প।
[৬] তিনি আরও বলেন, ‘আমি এর আগে চিন্তা করেছি। সত্যের একটি ভুল উপস্থাপনা হয়েছে, মানুষ বিভিন্নভাবে লিখেছেন - কেউ কম জানেন, অন্যরা খুব বেশি জানেন, তবে সত্যটি কে জানে? আমি যখন এটি বলি তখন আমি অহংকারের সাথে কথা বলি না। আমি কেবল তথ্য রেকর্ড করার চেষ্টা করেছি।
[৭] বইটি লেখার জন্য তিনি তিন মাসের সময়কালে প্রতিদিন ৪-৫ ঘন্টা অডিওতে তাঁর পুরানো স্মৃতিগুলো রেকর্ড করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি একজন লেখক নই, আমি আমার স্মৃতিকথা রেকর্ড করেছি। তথ্যগুলি থাকা উচিত। যাতে আসামের জনগনকে অবহিত করা যায় এবং উলফার ইতিহাস রেকর্ড থাকে।
[৮] পরেশ বড়ুয়া বলেন, ‘আমি আমার শৈশব সম্পর্কেও বলেছি। কোন পরিস্থিতিতে আমি বিপ্লবে যোগ দিয়েছে। অনেকেই আমাকে নিয়ে লিখেছেন। আমার জন্ম তারিখ ভুলভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।’
[৯] তিন দশক ধরে পলাতক পরেশ বড়ুয়া আসামের একজন প্রখ্যাত সাহিত্যিককে দিয়ে তার আত্মজীবনীমূলক বইটি সম্পাদনা করাচ্ছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা যুদ্ধের কৌশল তৈরি করতে পারি, বই লিখতে পারি না।’
[১০] আসামের স্বাধীনতার দাবিতে উলফা গঠিত হয়েছিল ১৯৭৯ সালে। বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি স্পষ্টতই রাজনৈতিক ও সামরিক শাখা বিভক্ত করেছিল। পরেশ বড়ুয়া সামরিক শাখার নেতৃত্বে ছিলেন সেনাপতি প্রধান হিসেবে এবং রাজখোয়া রাজনৈতিক ইউনিটের প্রধান ছিলেন। আরবিন্দ রাজখোয়া, অনুপ চেটিয়াসহ উলফার শীর্ষ নেতারা বাংলাদেশে দীর্ঘদিন অবস্থান করেছেন। পরে তারা ভারত সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় অংশ নেন। তবে এখনো স্বাধীনতার দাবিতে সশস্ত্র বিপ্লব অব্যাহত রেখেছেন পরেশ বড়ুয়া।
[১১] তিনি মূলধারায় ফিরে আসতে পারেন কিনা জানতে চাইলে বড়ুয়া বলেন, ‘আমি যদি নীতিহীন মানুষ হই, তবে আমি হাল ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবতে পারি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমি আমার নীতিগুলি থেকে দূরে থাকব না, লড়াই অব্যাহত থাকবে। সশস্ত্র সংগ্রাম অহিংসার থেকে পৃথক। আমি সুভাষচন্দ্র বসু জওহরলাল নেহেরু বা মহাত্মা গান্ধী হতে চাই না।’