শিরোনাম
◈ সি‌লে‌টে নয়, ঢাকা পর্ব দি‌য়ে শুরু হচ্ছে বিপিএল ◈ মধ্যরাতে এভারকেয়ার হাসপাতালে বাড়ানো হলো নিরাপত্তা ◈ মোদির শুভেচ্ছায় কৃতজ্ঞতা জানালো বিএনপি ◈ রাঙ্গামাটিতে কয়েক সেকেন্ডের মাঝারি ভূকম্পন অনুভূত ◈ বিদেশে আশ্রয় আবেদনে শীর্ষে বাংলাদেশিরা: বাড়ছে আবেদন, কমছে স্বীকৃতি ◈ মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে গুম অধ্যাদেশের গেজেট প্রকাশ ◈ মাঝরাতে কক্সবাজারে ৪.৯ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত ◈ যেসব সুবিধা পান রাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা  ◈ আইআরআই জরিপ: ইউনূস সরকারের প্রতি আস্থা অটুট, ৮০% বাংলাদেশি অবাধ–সুষ্ঠু নির্বাচনে আশাবাদী ◈ খালেদা জিয়ার দ্রুত আরোগ্য কামনায় মোদির বার্তা: চিকিৎসায় সর্বাত্মক সহযোগিতায় প্রস্তুত ভারত

প্রকাশিত : ০২ এপ্রিল, ২০২১, ০৯:১৯ রাত
আপডেট : ০২ এপ্রিল, ২০২১, ০৯:১৯ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অগ্রসর মানুষ সলিমুল্লাহ খানের প্রতি আহবান

প্রবীর বিকাশ সরকার, ফেসবুক থেকে: সলিমুল্লাহ খান (জন্ম: ১৮ আগস্ট ১৯৫৮) একজন প্রথিতযশা বাংলাদেশী চিন্তাবিদ ও লেখক। তিনি পণ্ডিত ও গণবুদ্ধিজীবী হিসেবে প্রসিদ্ধ। তার রচনা ও বক্তৃতায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমাজ, রাজনীতি, সংস্কৃতি ও সাহিত্যের বিশ্লেষণ মানুষকে প্রবলভাবে আকৃষ্ট করে। বাংলাদেশের তরুণ লেখক ও চিন্তকদের মাঝে সলিমুল্লাহ খানের অনুসারী রয়েছে। (উইকিপেডিয়া থেকে অতিসংক্ষিপ্ত পরিচিতি দিলাম।)

আমার জন্ম ১৯৫৯ সালে, তিনি আমার এক বছরের অগ্রজ। আমি যখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তখন তাঁকে চিনি তাঁর সম্পাদিত “প্র্যাক্সিস জার্নাল” এর মাধ্যমে। সাম্যবাদী চিন্তাধারার এই ম্যাগাজিনটি যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। ১৯৮৪ সালে জাপানি ভাষা ও সংস্কৃতি শিক্ষার ছাত্র হিসেবে চলে আসার পর আর ম্যাগাজিনটি পড়া হয়ে ওঠেনি। তাঁর সঙ্গে আমার তখন একবারও দেখা হয়নি। অনেক বছর পর দেখা হয়েছিল দু-একবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে চলতি পথে ক্ষণিকের জন্য। শুভেচ্ছা বিনিময় হয়েছে। বছর দুয়েক আগে তিনি জাপানে এসেছিলেন আমার দুর্ভাগ্য সাক্ষাৎ হয়নি।

বর্তমান সময়ে সলিমুল্লাহ খান একজন বিদগ্ধ পণ্ডিত এবং গবেষক। দেশবিদেশে তাঁর খ্যাতি ক্রমবর্ধমান। একজন পাণ্ডিত্যপূর্ণ গ্রন্থকার, মেধাবী শিক্ষক এবং সমালোচক হিসেবেই আমার কাছে তিনি প্রধানত গ্রহণযোগ্য। আমি তাঁর একজন একনিষ্ঠ ভক্ত এবং শুভাকাঙ্ক্ষী। অসীম শ্রদ্ধার পাত্রও তিনি আমার কাছে। সাম্প্রতিককালে ইউইটউব এর কল্যাণে তাঁর বক্তব্য ও আলোচনা শুনে আসছি। সন্দেহ নেই, তাঁর আলোচনা ও যুক্তিতর্ক জ্ঞানলব্ধ, জ্ঞানগর্ভ। তবে সবই যে সঠিক বা যথার্থ তাও নয়। কিন্তু তাঁর যুক্তি খণ্ডন করা শক্ত। বাংলাদেশের কোনো রাজনীতিবিদই তাঁর সঙ্গে কথায় ও যুক্তিতে টিকতে পারবেন না বলাই বাহুল্য, কিন্তু তারা ছলাকলা বা জোরাজুরি করে জিতে যাবেন, এবং এটাই হয় অনুন্নত সমাজে।

আমি যেটা বলতে চাই শ্রদ্ধাভাজন সলিমুল্লাহ খানকে সেটা হল, উলু বনে মুক্তো ছড়িয়ে লাভ হবে না। সরকার যা করবে না সেটা ব্যক্তিকে করতে হয় যদি তার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। সরকার সবকিছু করবে বা করতে হবে এটাও ঠিক নয়। সরকার যেমন জনগণকে সাহায্য-সহযোগিতা করবে, তেমনি জনগণও সরকারকে সহযোগিতা করবে। পরস্পরকে অনুধাবন করা ও বোঝার ক্ষমতাকে কার্যকরি করাটাই হচ্ছে গণতন্ত্রের প্রথম শর্ত। তবে সরকার যেহেতু সকল ক্ষমতার অধিকারী এবং রাষ্ট্রকে পরিচালনা করে রাজনীতিবিদরা তারা যদি ভুল করেন, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তার পরিকল্পনাসমূহ বাস্তবায়ন না করেন তাহলে সেটা একটি পঙ্গু, অসুস্থ এবং ব্যর্থ সরকার। তার স্থায়িত্ব সুদীর্ঘ হয় না। তাছাড়াও রাজনীতির মারপ্যাঁচের কারণে সরকার পরিবর্তনশীল। পরমেশ্বর ছাড়া জগতের সবকিছুই পরিবর্তনশীল। পার্থিব পরিবর্তনে ব্যর্থ মানুষ বন্যজন্তুতুল্য।

তাহলে কী করতে হবে? উপায়টা কী? সমস্যা আছে তার সমাধানও আছে প্রকৃতির মধ্যে, মানুষের মধ্যে। শুধু দরকার আন্তরিকতা এবং মানবিক তাগিদ তাহলে সমাধান খুঁজে পাওয়া কঠিন কিছু নয়। সমাধান একটাই আছে তাহল ব্যক্তি উদ্যোগ গ্রহণ। আপনি যেমন বুঝতে পারছেন সরকার মৌলিক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না বা করতে ব্যর্থ একটি আধুনিক এবং উন্নত রাষ্ট্র ও জাতি গঠনে, আমিও তা বুঝতে পেরেছিলাম ১৯৯৬ সালেই যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। যেদলে শৃঙ্খলা নেই, পরিবেশ নেই, উদ্ভাবনী শক্তি নেই, সৃজনশীলতার তাগিদ নেই, সেদল যে জাতিকে নেতৃত্ব দিতে পারবে না তা বলাই বাহুল্য।

যেকোনো উন্নত রাষ্ট্রের ইতিহাস পড়ে দেখুন কীভাবে সেই রাষ্ট্রটি উন্নত হয়েছে, আধুনিক হয়েছে, মনুষ্যবসবাসযোগ্য হয়ে উঠেছে তাহলে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। তাদের দেশ ও জাতি গঠনের প্রথম পদক্ষেপটি ছিল শিশুদের নিয়ে। শিশুরা সুশিক্ষা পেলে তারাই দেশ ও জাতি গঠনে দায়িত্ব পালন করবে। অন্যদলের কথা বাদ দিয়েই বলি, আওয়ামী লীগ এই দেশের স্বাধীনতার লড়াই ও যুদ্ধে প্রধানত নেতৃত্ব দিয়েছে, স্বাধীনতার পর তার হাজার হাজার নেতা ও কর্মী কী দায়িত্ব পালন করেছে রাষ্ট্র ও জাতির উন্নয়নে? জাতিগঠনের কথা বাদই দিলাম। এসব সচেতন ব্যক্তিমাত্রই জানেন। আপনিও জানেন, আমিও জানি। কিন্তু এসব বলে এখন আর কোনো লাভ হবে না। গঙ্গার জলকে আর উজানে ফেরানো যাবে না, আপনিই প্রায়শ বলে থাকেন।

সব শক্তির পেছনে চুম্বক কাজ করে থাকে, এই চুম্বককে ধারণ করে এক অদৃশ্য শক্তি। বেশি ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। আওয়ামী লীগ সরকার ছলেবলেকৌশলে দেশকে উন্নত করতে চাইছে, এটা এশিয়ায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপান করেছিল, চীনও করেছে। কিন্তু মৌলিক শিক্ষা তাদের ছিল যেকারণে তারা শত বিপদে ও দুর্যোগেও টিকে গেছে, টিকে যাবেও। বাংলাদেশ পারবে না। মৌলিক শিক্ষার সেই ভিত বাঙালির জীবনে কোনোকালেই ছিল না, রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে শুরু করেছিলেন, এখন কোন পর্যায়ে আছে তা বলার আর দরকার নেই। একজন রবীন্দ্রনাথ রাষ্ট্র বা জাতি গঠন করতে পারেন না শত চেষ্টা করেও, সম্ভবও নয়। যা করতে পারেন শিশুদেরকে সঠিক শিক্ষা দিতে পারেন জাতি গঠনের আন্দোলনে সক্রিয় হওয়ার জন্য। সচেতন করতে পারেন অভিভাবককে। তিনি তাই করেছিলেন। তাঁর শিক্ষা যারা লাভ করেছিলেন তারা দেশ-বিদেশে খ্যাতিমান হয়েছেন, কিন্তু গুরুর পথ অনুসরণ করেননি। এটা দুর্ভাগ্য।

মৌলিক শিক্ষার বিকল্প নেই। আর মৌলিক শিক্ষা জরুরি শিশুদের জন্য, যাদের বয়স শূন্য থেকে ১৮ পর্যন্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকে মৌলিক শিক্ষা দিয়ে লাভ নেই, সেটা কাজে লাগে না। কাজে লাগে যদি তারা শিশুবয়সে অর্জন করে থাকে।

মৌলিক শিক্ষা হচ্ছে, মাতৃভাষার সঠিক চর্চা প্রথম শর্ত। দ্বিতীয় শর্ত, মাতৃভাষায় চিন্তা করা। তৃতীয় শর্ত, মাতৃভাষায় সঠিক আচার-আচরণ ও শিক্ষালাভ করা। অর্থাৎ পাঠশালা দিয়ে শুরু করতে হবে। কিন্তু পাঠশালা চালানো অত্যন্ত কঠিন কাজ। নার্সারি, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা পর্যন্ত মৌলিক যে শিক্ষা দেয়া হবে তা খেলতে-খেলতে, উন্মুক্ত প্রকৃতির মধ্যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রাণ ও সৌন্দর্য আবিষ্কারের মধ্য থেকে। আর কিছুই শেখাতে হবে না, রাজনীতির পাঠ একছার দরকার নেই। ভদ্র, শালীন ও চরিত্রবান নাগরিক হওয়ার দীক্ষাই তারা নেবে। কোনো প্রতিযোগিতা নয়, কোনো পরীক্ষা নয়। পরীক্ষার সূচনা হবে উচ্চমাধ্যমিক থেকে। কেউ অকৃতকার্য হবে না। আর যাই হোক, হেরে যাওয়ার মানসিকতা তার মধ্যে তৈরি হবে না। সেই শিশুরাই হবে বড় হয়ে প্রকৃত দেশপ্রেমিক ও জাতীয়তাবোধসম্পন্ন। জাতীয়তাবোধের বিকল্প নেই।

এইরকম নাগরিক তৈরি করতে না পারলে কোনো উন্নয়নই টিকবে না। দেশ ও জাতি উন্নত হবে ঠিকই সেটা আর্থিক মানদণ্ডে কিন্তু আধুনিক বর্বর হতে হবে, এরকম দেশ একাধিক রয়েছে এই বিশ্বে।

কাজেই রবীন্দ্রনাথ যেপথে এগিয়েছিলেন, সেইপথেই আসতে হবে। আপনি রবীন্দ্রভক্ত আমি জানি। নেমে আসুন বর্তমান উচ্চতা থেকে। সময় সমাগত। লড়াই শুরু করুন---পাঠাশালা প্রতিষ্ঠা করুন নিজ গ্রামেই। মৌলিক শিক্ষার জন্য আপনার যে চিন্তা ও লড়াই তাকে সাফল্য মণ্ডিত করুন। আপনার মধ্যে অপার সম্ভাবনা আছে। অন্ততপক্ষে, ১০টি বছরও যদি কোনো শিশু সঠিক ও মৌলিক শিক্ষা অর্জন করতে পারে, সে আরও ১০ বছর পর সেই শিক্ষার সুফল দেখাতে বাধ্য হবে আত্মিক তাগিদ ও শক্তির কারণে।

মৌলিক শিক্ষাই আত্মিক, আধ্যাত্মিক ও উদ্ভাবনী শক্তির উৎস। উদ্ভাবন ছাড়া বাঙালির বাঁচার উপায় নেই। এই বিষয়ে আহবান রইল শ্রদ্ধেয় সলিমুল্লাহ খান। শুভেচ্ছা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়