ডেস্ক রিপোর্ট : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রাশীদ মাহমুদ মারা গেছেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। বুধবার (৩১ মার্চ) সাতক্ষীরায় গবেষণার কাজে গিয়ে ব্রেইন স্ট্রোক করে মারা যান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আসিফ ইমতিয়াজ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সম্প্রতি বিদেশ থেকে দেশে ফেরেন রাশীদ মাহমুদ। এরপর সাতক্ষীরার শ্যামনগরে গিয়েছিলেন গবেষণার কাজে।
তিনি আরও জানান, সেখানেই আজ হঠাৎ করে স্ট্রোক করেন তিনি। এরপরই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
অধ্যাপক রাশীদ মাহমুদের পৈতৃক বাড়ি ফেনী জেলাতে। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ও দুই সন্তান রেখে গেছেন।
এদিকে অধ্যাপক রাশীদ মাহমুদের ইন্তেকালের পর ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন। সেখানে তিনি লিখেছেন, এইমাত্রই জানতে পারলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকর্মী রাশীদ মাহমুদ আমাদের মাঝে আর নেই।’
তিনি লেখেন, ‘কতবার যে ফোনে কত বিষয়ে কথা হয়েছে! কত স্মৃতি। এমন সদা হাস্যময় একজন তরতাজা মানুষ এমনিভাবে নাই হয়ে যাবে? বিশ্বাস করতে পারছি না। মনে হচ্ছে হঠাৎ করে সব লন্ডভন্ড হয়ে যাচ্ছে। তাঁর পরিবারকে কি ভাষায় সমবেদনা জানাব?’
সাংবাদিক ও উন্নয়ন কর্মী শরীফুল হাসানও ফেসবুকে একটি আবেগঘণ স্ট্যাটাস দিয়েছেন । স্ট্যাটাসটি নিচে দেওয়া হলো:
ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজেউন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক রাশীদ মাহমুদ মারা গেছেন। খবরটি প্রথম দেখি Mohammad Tanzimuddin Khan স্যারের ওয়ালে। এরপর ক্রমাগতভাবে তা ছড়িয়ে পড়েছে।
ব্যক্তিগতভাবে রাশিদ স্যারের সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা ছিল না। তবে স্যারের ছোট বোন সদা হাস্যজ্জল Salma Ahmed আপা আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় আপা যিনি আবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক। আপাসহ পরিবারের সবার সাথে সমব্যথী। এই কষ্ট সামলানো কঠিন।
রাশিদ স্যারের মৃত্যুর পর তার সহকর্মীরা যেভাবে আফসোস করছেন, তার ছাত্রছাত্রীরা যেভাবে হাহাকার করছে তাতে বোঝা যায় এ শিক্ষককে সবাই কতটা ভালোবাসতেন। আফসোস, আমরা হয়তো বেঁচে থাকতে এই তীব্র ভালোবাসাগুলো সেভাবে প্রকাশ করি না। তাই রাশিদ স্যারকে আমাদের অনেকের চেনা হয়ে ওঠে না। হয়ে ওঠেনা ঘনিষ্ঠতা।
আফসোসগুলোয় বেড়ে যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এতো শিক্ষককে চিনি অথচ রাশিদ স্যারের সাথে ঘনিষ্ঠতা হলো না। এই আফসোসটা আমাকে বহুদিন তাড়িয়ে বেড়াবে। আপনারা যারা স্যারকে চেনেন কেন আড্ডাতে হলেও আমাদের জানাননি। কেন দেশবাসীকে জানাননি! ভীষন আফসোস হচ্ছে। এমন একজন শিক্ষকের সাথে কখনো আড্ডা হলো না!
Mazharul Kabir Shayon লিখেছে,স্যার যে কি ছিলেন বলে বোঝাতে পারবো না। উনি ডক্টরেট ছিলেন না তাই শিক্ষক হিসেবে ডিপার্টমেন্টের বাইরে আন্ডাররেটেড ছিলেন। তারপরেও বাইরের বিভাগের যারা জানতেন তারা হানা দিতেন তার ক্লাসে। পিএইচডি থিসিস নিয়ে কাজ করছিলেন এক স্লোভেনিয়ার ইউনিভার্সিটির হয়ে । আমার ধারণা ছিলো নামের পাশে ডক্টরেট হয়ে গেলেই অল্প কয়েক বছরের মধ্যে শিক্ষক হিসেবে কিংবদন্তী হয়ে যেতেন। আফসোস তার কিংবদন্তি হওয়া হলো না!
ফেসবুকে দেখলাম, রাশিদ স্যারের মৃত্যুর পর তার এক ছাত্র লিখেছে, মাত্র সপ্তাহখানেক আগে কোন একজন মৃত্যুতে স্যার নাকি বলছিলেন এভাবে ঘুমের মধ্যে যদি মরে যাওয়া যেত! আচ্ছা মানুষ কি তার মৃত্যুর কথা আগে জানতে পারে! তা না হলে এই ধরনের ভাবনা আসে কি করে?
আল্লাহ রাশিদ স্যারকে জান্নাতবাসি করুন। তাঁর পরিবারকে শোক সইবার ক্ষমতা দিন। আর আমাদের দেশে এমন মানবিক শিক্ষক আরও বেশি হোক যারা আলো ছড়াবে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে। যে শিক্ষক বেঁচে থাকবে তার শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে।
ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজেউন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক রাশীদ মাহমুদ মারা গেছেন।...
Posted by Shariful Hasan on Wednesday, March 31, 2021