গুলজার হোসেন উজ্জ্বল: বাংলাদেশে সচরাচর যে ডুমুর পাওয়া যায় তার বৈজ্ঞানিক নাম (Ficus hispida)। এর ফল ছোটো এর আরেক নাম ‘কাকডুমুর’। অযত্নে-অবহেলায় এখানে সেখানে জন্মায়। পাখিরাই প্রধানত এই ডুমুর খেয়ে থাকে এবং পাখির বিষ্ঠার মাধ্যমে বীজের বিস্তার হয়ে থাকে। অনেক এলাকায় এই ডুমুর দিয়ে তরকারি রান্না করে খাওয়া হয়। মধ্যপ্রাচ্যে যে ডুমুর (আঞ্জির) পাওয়া যায় তার বৈজ্ঞানিক নাম Ficus carica. এর ফল বড় আকারের, সুস্বাদু এবং জনপ্রিয়। বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ হয়ে থাকে আফগানিস্তান থেকে পর্তুগাল পর্যন্ত। এর আরবি নাম ‘ত্বীন’। হিন্দি, উর্দু, ফার্সি ও মারাঠি ভাষায় একে ‘আঞ্জির’ বলা হয়। এই গাছ ৬ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এর আদি নিবাস মধ্যপ্রাচ্য। এক সময় আরবে ত্বীন এবং যাইতুন (জল্পাই জাতীয়) ফলের বিশেষ বাণিজ্যিক গুরুত্ব ছিলো।
সিরিয়া ও ইয়েমেনে আরব থেকে যে অল্প কটি ফল রপ্তানি হতো তার মধ্যে এই দুটি ফল ছিলো অন্যতম। এখনো আরব থেকে মিক্স ড্রাই ফ্রুট আসে সেখানে ত্বীন ফলের মেজর শেয়ার থাকে৷জগডুমুর বা যজ্ঞডুমুর নামে আরেক প্রজাতির ডুমুর রয়েছে, যার বৈজ্ঞনিক নাম Ficus racemosa. এটিও মূলত তরকারি করে খাওয়া হয়। অশ্বত্থ বা পিপল নামে আরেকটি ডুমুর জাতীয় গাছ আছে, যার বৈজ্ঞানিক Ficus religiosa. সমস্ত ভারতবর্ষে এটি খুবই পরিচিত৷ এটি বটগোত্রীয় বৃক্ষ। তবে কৌতুহলের বিষয় হলো প্রায় সবগুলো প্রধান ধর্মেই ডুমুরর ফলের বিশেষ স্থান রয়েছে৷ কোরআনে ‘ত্বীন’ (আঞ্জির) নামে একটি সূরা রয়েছে। আল্লাহ পাক পবিত্র গ্রন্থে ত্বীন ফলের নামে শপথ করেছেন। হিন্দু ধর্মেও অশ্বথ একটি বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ গাছ। শ্রী কৃষ্ণ অশ্বথ গাছের নীচে বসে বাঁশি বাজাতেন বলে মধ্যযুগের শ্রী কৃষ্ণ কীর্তনে পাওয়া যায়৷ মীরার ভজনেও আছে পিপল ছায়ে বসে শ্যামের বাঁশিতে রাধা নাম পুকার করার কাহিনী।
বাইবেলে এই ফলের উল্লেখ আছে। সেখানে বলা হয়েছে, ক্ষুধার্ত যীশু একটি ডুমুর (আঞ্জির) গাছ দেখলেন কিন্তু সেখানে কোনো ফল ছিলো না, তাই তিনি গাছকে অভিশাপ দিলেন। বৌদ্ধ ধর্মে এই গাছ পবিত্র হিসেবে গণ্য করা হয়। গৌতম বুদ্ধ যে বোধিবৃক্ষতলে মোক্ষ লাভ করেন, তা ছিলো অশ্বত্থ গাছ, যা একটা ডুমুর জাতীয় গাছ Ficus religiosa বা পিপল। কেবল বাংলাতেই ডুমুর একটি অকাজের ফল। ডুমুরের ফুল বললে একটা অসম্ভব, অদর্শনীয় বস্তু বুঝায়৷ বাংলায় যে ডুমুর ফলে (Ficas Hispida) তার ফল খাওয়ার যোগ্যও না। অতিসম্প্রতি বাংলাদেশে ত্বীন বা আঞ্জিরের বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে৷ শ্রীপুর মাওনাতে বাগান করেছেন একজন উদ্যোক্তা। (তথ্য ঋণ : উইকি ও অন্যান্য) ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :