শিরোনাম
◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন ◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে ◈ সেনা গোয়েন্দাসংস্থার বিরুদ্ধে ৬ পাক বিচারপতির ভয় দেখানোর অভিযোগ ◈ নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিরা সাদা পতাকা উড়াচ্ছিল, তাদের বূলডোজার দিয়ে মাটি চাপা দিল ইসরায়েলী সেনারা ◈ যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত

প্রকাশিত : ২৮ মার্চ, ২০২১, ০৪:২৩ সকাল
আপডেট : ২৮ মার্চ, ২০২১, ০৪:২৩ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

চট্টগ্রামে ওয়্যার হাউজে অগ্নিকাণ্ড: ক্ষতিপূরণের ‘অবাস্তব’ প্রতিবেদনে তোলপাড়

নিউজ ডেস্ক: চট্টগ্রামে প্রিমিয়ার এক্সেসরিজ নামে একটি বন্ডেড ওয়্যার হাউজে আগুন লাগার ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের প্রদত্ত ক্ষতিপূরণ সনদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন উঠেছে। যে গুদাম পূর্ণ থাকলেও এক কোটি থেকে দেড় কোটি টাকার বেশি পণ্য রাখার সুযোগ নেই সেখানে অগ্নিকাণ্ডে ৯ কোটি ২১ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে সনদ দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। বিমা দাবির জন্যই ওয়্যার হাউজ প্রতিষ্ঠান প্রভাবিত করে এমন সনদ আদায় করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। ওই গুদামে প্রকৃত অর্থে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা পুনঃতদন্তের জন্য আবেদন জানিয়েছে চট্টগ্রামে গার্মেন্ট এক্সেসরিজ গ্রুপ নামে একটি সংগঠন। সরকারি রাজস্ব সুরক্ষার স্বার্থেই সংগঠনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের কাছে এ আবেদন করে। আবেদনে সংগঠনটি একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করে এ অগ্নিদুর্ঘটনার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পুনর্নির্ণয় করতে বলেছে।

চট্টগ্রাম বন্ড কাস্টম কর্তৃপক্ষও ফায়ার সার্ভিসের কাছে ওই গুদামের ক্ষতির খাত ওয়ারি প্রতিবেদন বা ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য চিঠি দিয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সিআইসি (সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল) ও প্রিমিয়ার এক্সেসরিজের অগ্নিদুর্ঘটনার বিস্তারিত প্রতিবেদন চেয়েছে বলে জানা গেছে।

নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার জালালাবাদে মেসার্স প্রিমিয়ার এক্সেসরিজ লিমিটেডের গুদাম রয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানের মালিকের নাম খন্দকার লতিফুর রহমান আজিম। প্রতিষ্ঠানটি বন্ড সুবিধায় পলিস্টার ইয়ার্ন (সুতা), কটন ইয়ান, ডুপ্লেক্স বোর্ড, প্লাস্টিকদানাসহ বিভিন্ন পণ্য ও কাঁচামাল আমদানি করে। ওয়্যার হাউজটির এককালীন প্রাপ্যতা হচ্ছে ১৮৬ টন। গুদামটিতে গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের দিন অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ঘটনার পর বন্ড রেজিস্ট্রার যাচাই করতে গিয়ে বন্ড কাস্টমস দেখতে পায় গুদামে ৪৪৩ টন পণ্য থাকার তথ্য রয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, বন্ড নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান শুল্কমুক্ত সুবিধায় পণ্য বা কাঁচামাল আমদানি করতে পারে। নিবন্ধিত লাইসেন্সে উল্লেখিত প্রাপ্যতা থেকে বেশি পণ্য আনার সুযোগ নেই। আবার কোনো গুদাম বা ওয়্যার হাউজ পুড়ে গেলে এর ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে তদন্ত কমিটি গঠন করতে হয়। কমিটি ক্ষয়ক্ষতি যাচাই করে প্রতিবেদন না দেওয়া পর্যন্ত নতুন করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে অস্থায়ী ওয়্যার হাউজের অনুমোদন দেওয়ার যেমন সুযোগ নেই তেমনি নতুন করে ওই প্রতিষ্ঠান পণ্যও আমদানি করতে পারে না। কারণ এ ক্ষেত্রে শুল্ক ফাঁকির সুযোগ সৃষ্টি হয়। অভিযোগ আছে, প্রিমিয়ার এক্সেসরিজের ক্ষেত্রে এ সব বিধিবিধানের কোনো তোয়াক্কাই করা হয়নি।

চট্টগ্রাম বন্ড কাস্টমসের নতুন কমিশনার একেএম মাহবুবুর রহমান যোগ দেওয়ার পর জালিয়াতির এ ঘটনা উদ্ঘাটন করেন। ওই প্রতিষ্ঠানের এককালীন প্রাপ্যতা কত, কারখানার মাসিক উৎপাদন ক্ষমতা কত, কারখানা পুড়ে যাওয়ার পরও কিভাবে ইউপি (ইউটিলাইজেশন পারমিশন) নেওয়া হলো, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ ছাড়াই কিভাবে নতুন ওয়্যার হাউজের অনুমোদন দেওয়া হলো- এ সব বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রদানের জন্য চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেন। ওই কমিটি এরই মধ্যে তদন্ত শুরু করেছে।

তদন্ত কমিটির প্রধান বন্ড কাস্টমসের সহকারী কমিশনার দ্বৈপায়ন চাকমা  বলেন, ঘটনাটি এনবিআর-এর সিআই সেল তদন্ত করছে। অভ্যন্তরীণভাবে তারা নিজেরাও তদন্ত করছেন। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স দপ্তর ৯ কোটি ২১ লাখ টাকার আনুমানিক ক্ষতিপূরণ উল্লেখ করে প্রিমিয়ার এক্সেসরিজকে সনদ দিয়েছে। কী পরিমাণ কাঁচামাল গুদামে ছিল, ফিনিস গুড কী পরিমাণ ছিল, কোন খাতে আর্থিক ক্ষতি কত তার বিশদ ব্যাখ্যা চেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কাছে চিঠি লিখেছেন তারা। তিনি বলেন, যেহেতু এখানে শুল্ক মওকুফের বিষয় জড়িত তাই এ বিষয়টিকে হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে ওই গুদামের ফায়ার সেফটি ছিল না বলে সনদে উল্লেখ করা হয়েছে।

সূত্র অভিযোগ করেছে, ওই প্রতিষ্ঠানের এককালীন প্রাপ্যতার সব পণ্যও যদি গুদামে থাকে তাও ক্ষতির পরিমাণ এক থেকে দেড় কোটি টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। সেখানে ৯ কোটি ২১ লাখ টাকার ক্ষতি অবিশ্বাস্য।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক আজিজুল ইসলাম প্রিমিয়ারকে দেওয়া ৯ কোটি ২১ লাখ টাকার ক্ষতিপূরণ সনদ প্রসঙ্গে বলেন, ইন্স্যুরেন্সের কাগজপত্র দেখে ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেই ক্ষতিপূরণ নির্ণয় করা হয়েছে। তবে ওই গুদামে কী পরিমাণ পণ্য ছিল তা যাচাই করার কাজ বিমা কোম্পানিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। ক্ষতিপূরণের বিশদ ব্যাখ্যা তাদের রয়েছে। প্রিমিয়ার এক্সেসরিজের মালিক লতিফুর রহমান আজিম বলেন, ‘আমার গুদামে কী ছিল কী ছিল না ক্ষতি কী পরিমাণ হয়েছে সব কিছুরই কাগজপত্র রয়েছে। যখন যেখানে প্রয়োজন তা উপস্থাপন করা হবে। কিন্তু একটি মহল ইচ্ছাকৃতভাবে গুদাম পুড়ে যাওয়ার ঘটনা নিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার অমানবিক চেষ্টা করছে।’ - যুগান্তর

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়