শিরোনাম
◈ পারস্পরিক শুল্ক সংকট: চূড়ান্ত দর-কষাকষিতে বাংলাদেশ ◈ আরব আমিরাতের আবুধাবিতে প্রবাসী বাংলাদেশির ভাগ্যবদল: লটারিতে জিতলেন ৮০ কোটি টাকা ◈ ২৪ ঘণ্টায় গাজায় নিহত ১১৮, যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পর্যালোচনায় হামাস ◈ ‘মব এবং জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হলে কঠোর পদক্ষেপ নেবে সেনাবাহিনী’ ◈ হোটেলে নারীকে মারধর করা বহিষ্কৃত যুবদল নেতার বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তারের চেষ্টায় পুলিশ ◈ বনানীর জাকারিয়া হোটেলে ঢুকে নারীদের ওপর যুবদল নেতার হামলা, ভিডিও ◈ দাঁড়িপাল্লা প্রতীকসহ জামায়াতের নিবন্ধন পুনর্বহালের গেজেট প্রকাশ ◈ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও শহীদ দিবস পালনের নির্দেশ ◈ তিন দিনের ছুটিতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, পাবেন না যারা ◈ উচ্চ ও নিম্ন আদালতকে ফ্যাসিস্টমুক্ত করতে হবে: সালাহউদ্দিন

প্রকাশিত : ০২ মার্চ, ২০২১, ১২:১৫ দুপুর
আপডেট : ০২ মার্চ, ২০২১, ১২:১৫ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

শেখ মুন: কোনো ভাষাকে ধর্মের সিল মারা সাম্প্রদায়িক এবং বর্ণবাদী

শেখ মুন : আমি আমার বাচ্চাদের সারাজীবন বলি ‘আমার জানবাচ্চা’। আমি আমার পাশের বাড়ির মাকে চিৎকার করে বলতে শুনেছি, ‘তোর জবান বন্ধ ক্যারে? এ শব্দগুলো কবে কীভাবে কখন আমাদের ভাষায় স্থান করে নিয়েছে। আমার দাদী কোনোদিন পরিশ্রম বলতে পারতেন না, বলতেন ‘মেহনত’। অনেক কষ্ট হয়ে গেলে তিনি বলতেন ‘পেরেশান’। আমাদের বাসায় একবার এলাকায় মিটিং শেষে শেখ হাসিনা বিরাট দল নিয়ে দুপুরের ভাত খেলেন। ভাত খাবেন কী, মানুষ ঢেলে নেমে ভেঙে আমাদের গরিব বাসার দরোজা জানালা ভেঙে গেলো। আমার মনে আছে জাস্ট খিচুড়ি। আমাদের বড় খাটে বিছানার ওপর গামলায় খিচুড়ি আনা হলো। বসেছেন শেখ হাসিনা আর তার কাজিন শেখ নাসিরের ছেলে। তারা দুজনই খাবার বিষয়ে টুকটাক কথা প্রসঙ্গে ‘এঁটো’ না বলে ‘ঝুটা’ বললেন। আমি তখন অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। খুব অবাক হলাম। পরে আমি ভেবে বের করলাম শেখ হাসিনা অনেকদিন ভারতে ছিলেন। ঝুটা বলেছেন নিশ্চয়ই সেখানে থাকার কারণে হয়তো। আমি মফস্বলের একটি মেয়ে জীবনেও ‘এঁটো’ খাবারকে ঝুটা বলবো না। এখনও বলি না। আমার বিদেশে অবস্থান ৩০ বছরের। আমি এতো ভাষার সান্নিধ্যে এসেছি এবং ভাষা বিষয়ে সামান্য অধ্যয়ন করতে গিয়ে দেখেছি, ভাষার রুট খুব ইন্টারেস্টিং। স্ক্যান্ডেনাভিয়ান ভাষার একটি বুঝলে আরেকটি বুঝা যায়। অফিসের কাজে আমাকে নরওয়েজিয়ান এবং ডেনিশদেরদের সাথে কথা বলতে হতো, আমি সুইডিশ বলতাম তারা তাদের ভাষা বলতো। কোনো সমস্যা হয় না আমাদের বুঝতে কিন্তু যার যার ভাষা বলে যাচ্ছি। উত্তরও আসছে নিজস্ব ভাষায়। সুইডিশ ভাষার ৭৫ শতাংশ শব্দ জার্মান ভাষার শব্দের থেকে আসা। তাদের বলে রিলেটিভ ভাষা। জার্মান পরিবারভুক্ত। ফরাসী গ্রামার আলাদা হলেও অনেক প্রভাব আছে এ ভাষার, সাহিত্য এবং কালচারাল সেন্টার থাকার কারণে। এমন কি রুশ ভাষার বিশাল প্রভাব আছে তাদের সাহিত্য ভাল্ডারের কারণে।

ভাষা যে বিদ্বেষ নয় সেটা এখানে ৩০ বছর বাস করে বুঝছি। কিন্তু আমাদের এ বিদ্বেষের উৎস কোথায়? প্রথমে বলি, আমরা একটি রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ পার হয়ে এসেছি। এবং সে ইতিহাস এখনও ৫০ বছর হয়নি। আমাদের প্যারানইয়া থাকা কিন্তু অমূলক নয়। আমাদের উপর সাহিত্য বলুন, ভাষা বলুন, অর্থনীতি বলুন, নির্যাতন ছিল সীমাহীন। পাকিস্তান হবার আগে ছিল শিক্ষা সাহিত্য সেন্টার কোলকাতা থেকে। আমাদের এ এলাকার মানুষ মুসলমান হওয়াতেই প্রমাণ করে আমরা আরয ছিলাম না। আমরা ছিলাম অনার্য শুদ্র ডোম। মুসলমান হয়েও তারা জাতে উঠে নাই। তার ভেতর কিছু মুসলমান আরব থেকে পারস্য থেকে আসছে বলে দাবি করে অন্যদের চাষাভুষা নিচু জাতের মুসলমান হিসেবে ট্রিট করতো। তারা ঘরে উর্দু এবং ফার্সি বলতেন। পূর্ব-পাকিস্তানের তরুণ মানুষদের স্বপ্ন হয় একটি নিজেদের একটি ঐতিহ্য গড়ে তোলার। তারা পাকিস্তানের প্রভাব থেকে নিজেদের মুক্ত রাখার একটি কালচারাল, ভাষা, সাহিত্য এবং সংস্কৃতির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলো। এটা করতে অভাবিত ৭১ কে ফেইস করতে হলো জাতিকে। ঘটনা ঘটলো দ্রুত। সব প্রত্যশার ঘটি উলটে জাতিকে দু দুটো সামরিক জান্তা ডেকেডস ধরে ফেইস করে শুধু ভাষা নয়, কালচার নয়, সাহিত্য নয়, রাজনীতি হয়ে উঠলো সবচাইতে কঠিন একটি বিষয়। সামরিকরা ধর্মকে পুঁজি করলো। ভারত বিদ্বেষ এবং মুসলিম আইডেন্টিকে প্রকট করে পাকিস্তানের জেসচার চালু করা হলো। একচেটিয়া ধর্মিয় আচরণে একটি ধর্মের শব্দাবলি আমদানী হলো। মানুষের মুখে পুরে দেওয়া হলো কিছু ধর্মিয় শব্দ।

খোদা হাফেজের পরিবর্তে আল্লাহ হাফেজ, সুবানাল্লাহ, ইনশাআল্লাহ, জাজাকাল্লাহ, ফি আমানিল্লাহ এরকম শব্দ আমরা কোনদিন ছোটবেলায় বলিনি সেগুলো সর্বস্তরে চালু হলো এমনভাবে সেটি বলে আর বাতুলতা করতে চাই না। আমরা ছোটবেলায় বলতাম আদাপ আর নমস্কার। সেগুলো উঠে গেল। ভাষার ভেতরে ঢুকলো একচেটিয়া ইসলাম। কবিতায় শশ্মানের পরিবর্তে আসলো গোরস্তান। লক্ষ্মীপুরকে করা হলো ইসলামপুর। ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে সংক্ষেপে বলা হয় বি-বাড়িয়া। আরও আছে। হিজাবের প্রাদুর্ভাবে আমাদের এলাকার চির চেনা রূপটিই হারিয়ে গেছে। ঠিক সে মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ কোনো মুভমেন্টে নিজ ভাষার ব্যবহার না দেখলে মানুষের মনে সন্দেহ জাগে বৈকি। সেই সন্দেহ অমূলক সেটা কিন্তু নয়। এবং আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাস সেটা সাহায্য করেছে। করে। কিন্তু ভাষার ইতিহাস তুলে নিজেদের ভাষা বিষয়ে সীমিত জ্ঞানকে জানতে হয় এটাও সত্য। এবং এটাও সত্য যে আমাদের ভাষার কোনটি বাংলা আর কোনটি বিদেশি সেটা আলাদা করা আজ সত্যি কঠিন।
কিন্তু মূল বিষয়টি এখানে ভাষা নয়, বরং রাজনৈতিক সেটি যদি অনুধাবন করি তাহলে এ বিতর্কের কারণ আমরা বুঝতে পারব। আমি যদি সুইডেনে বসে বলি, আমি হিব্রু ভাষা ঘৃণা করি কারণ এটা ইজরায়েলের ভাষা এবং সেখানে ইহুদী বেশি। আমি কি ভেবে দেখেছেন? আমি হবো রেসিস্ট। আমাদের ভাষায় যে ভাষাসমুহের অনুপ্রবেশ করেছে তার একটি লিস্ট করে দেখবো তার ইতিহাস বহিরাগত। সে ব্যবসা হোক, রাজনীতি হোক, অর্থনৈতিক হোক, সাহিত্য হোক, ধর্ম হোক। এগুলো উপনিবেশবাদের কারণে। আগ্রাসনের কারণে। এখন ভাষা আমাদের সবটাই বিদেশি ভাষার ভান্ডার। নিজের বলে কিছু নেই। তবু আমরা জাতি হিসেবে এই যে সিনিক্যাল, প্যারানয়েড তার কি কারণ নেই? নেই আমাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র? সেখানে মনের ভাব প্রকাশ করতে আমাদের কথ্য ভাষার কমতি রয়েছে কি? সেটাই মনে ধাক্কা লাগে। কিন্তু প্রতিটি ভাষা এক একটি ট্রেজার তাকে অসম্মান করতে আমরা পারি না। আর কোনো ভাষাকে ধর্মের সিল মারা সাম্প্রদায়িক এবং বর্ণবাদী। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়