ইসমাইল হোসেন:[২] করোনার কারণে লকডাউন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেক্স-টয় বিক্রয় দেশজুড়েই বেড়েছে। অনলাইনসহ কিছু প্রতিষ্ঠান এসব পণ্যের হোম ডেলিভারি দেওয়ায় সেক্স টয়ের চাহিদা দ্রুতগতিতে বাড়ছে। নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও প্রচুর চাহিদা থাকায় চোরাপথে নানা রকম সেক্সটয়ের আমদানিও গেছে বেড়ে। পুলিশসহ একাধিক সূত্রেও পাওয়া গেছে এমন তথ্য।
[৩] জানা গেছে, ফেসবুকসহ সামাজিক বিভিন্ন মাধ্যমে যৌনশক্তি বৃদ্ধির নানা ওষুধের বিজ্ঞাপন দিয়ে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের সঙ্গে আলাপচারিতা শুরু করেন। পরে তারা সম্ভাব্য ক্রেতাকে সেক্সটয় অফার করেন। ইচ্ছুক ক্রেতারা সম্মতি জানালে এসব পণ্য চলে যাচ্ছে তাদের দুয়ারে। নানা রকম সেক্সটয় বিক্রির জন্য সামাজিকমাধ্যমেও গড়ে উঠেছে অর্থলোভীদের বেশ কিছু সিন্ডিকেট। তারা অনলাইনে অর্ডার নেন। এর পর ‘হোম ডেলিভারি’ সার্ভিস দিয়ে থাকেন। আর অভ্যস্ত যারা, তারা বিভিন্ন অনলাইন শপিংয়ের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিজেরাই পণ্য ক্রয় ও হোম ডেলিভারির অর্ডার দিয়ে থাকেন।
[৪] ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর. লকডাউনপরবর্তী জীবনে দেশটিতে সেক্সটয় কেনার প্রবণতা বেড়েছে প্রায় ৬৫ শতাংশ। পার্টনারের সঙ্গে মেলামেশায় করোনা সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থাকায় সেক্সটয়কে ‘নিরাপদ’ মনে করছেন অনেকেই। এ কারণেও গত এক বছরে অনেকে সেক্সটয় ব্যবহারে ঝুঁকে পড়েছেন। আবার অনেকে সঙ্গীকে ব্যতিক্রম যৌনসুখ দিতে এটি ব্যবহারে উৎসাহিত করেন। বলাবাহুল্য, তাদের অধিকাংশই মানসিকভাবে অসুস্থ; কেউ কেউ একটা সময়ে এসে তা বুঝতে পেরে চিকিৎসকের শরণাপন্নও হচ্ছেন।
[৫] সেক্সটয়ের বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাকৃতিক বিষয়ে কৃত্রিম বডির ব্যবহার অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। পর্নোগ্রাফি ও বিকৃত যৌনাচারে শরীরের মারাত্মক ক্ষতিও হয়ে যেতে পারে। এ জন্য পর্যাপ্ত যৌনশিক্ষাও প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা।
[৬] জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, সেক্সটয় বা কৃত্রিম যে কোনো বস্তুর সঙ্গে যৌনাচার হলো বিকৃত মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। এটি মাদকদ্রব্য সেবনের মতোই ভয়াবহ এক আসক্তি। এতে করে পারিবারিক বন্ধন নষ্ট হয়ে যায়। কারণ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসার যে বন্ধন গড়ে ওঠে, সেক্সটয় ব্যবহার করলে তা হ্রাস পেতে থাকে। সেক্সটয়ের সঙ্গে পর্নোগ্রাফির প্রতি আসক্তির একটা সাদৃশ্য রয়েছে। এ ধরনের চর্চায় স্বাস্থ্যঝুঁকিও থেকে যায়। সেক্সটয় আমদানি বন্ধ করতে কঠোরভাবে আইনের প্রয়োগ করতে হবে। পাশাপাশি পারিবারিক সুদৃঢ় বন্ধন, সুষ্ঠু বিনোদনচর্চার প্রতি অধিকতর গুরুত্ব দিতে হবে।
[৭] ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ও কাউন্টার টেররিজম বিভাগের ডিআইজি মনিরুল ইসলাম বলেন, বিকৃত যৌনাচার বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ। এ বিষয়ে কেউ যদি অভিযোগ করেন তা হলে আইন অনুযায়ী পুলিশের ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
[৮] এছাড়া সেক্সটয় রয়েছে মেশিনারি (ভাইব্রেটর) ও নন-মেশিনারি। স্বাভাবিক যৌন আচরণ যখন আটপৌরে মনে হয়, যখন আর উপভোগ্য মনে হয় না। আর তখনই মনে বাসা বাঁধে বিকৃত যৌনাচার। আর এহেন যৌনাচারের দিকে ধাবিত হওয়ার পথ দেখিয়ে দেয় পর্নোগ্রাফি।