শাহজালাল ভূঞা: [২] ইট-কাঠের চাপে শহর থেকে দ্রুতই হারিয়ে যাচ্ছে সবুজগাছ। কিন্তু মানুষ তার শিকড়কে সহজে ভুলতে পারে না। সবুজে ভরা গ্রাম বাংলায় বেড়ে উঠা নাগরিক সমাজের একটা অংশ সবুজকে ধরে রাখতে চায় আবাসস্থলে। শৌখিন মানুষরা তাদের ঘর বাড়িতে সবুজকে ধরে রাখার জন্য একান্ত নিজস্ব ভাবনা আর প্রচেষ্টায় আপন আপন বাড়ির ছাদে তৈরি করছে ছাদ বাগান।
[৩] ছাদ বাগানের প্রয়াস এখন আর শুধু আবাসস্থলেই সীমাবদ্ধ নেই, ছড়িয়ে পড়েছে কর্মস্থলেও। ব্যতিক্রমী এমন একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ফেনী অঞ্চলের মুখ্য আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
[৪] ব্যক্তিগত উদ্যোগে কৃষি ব্যাংক ফেনী শাখার ছাদে গড়ে তুলেছেন ফুল-ফল আর সবজিতে সমৃদ্ধ বাগান। ২৫শ বর্গফুটের ছাদে শোভা পাচ্ছে পুদিনাগাছ, বেগুন, মাল্টা, স্ট্রবেরি, ক্যাপসিকাম, কমলা, সূর্যমুখী, আম-লিচুসহ ফুল-ফল, সবজি মিলিয়ে প্রায় ৪৪ প্রজাতির গাছ। গাছে গাছে ঝুলে আছে বিভিন্ন ধরনের ফল, ফুলসহ নানান ধরনের সবজি।
[৫] উদ্যোক্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কৃষি তার অনেক পছন্দের। তাই কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার উদ্দেশ্য আমার নিজ চেষ্টায় মাত্র ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে ছাদে এ বাগান করেছি। কীটনাশকমুক্ত সবজি ও ফল উৎপাদন করাই আমার লক্ষ্য। একটি ফল খেলে সবজি থেকে কীটনাশকমুক্ত খাবো।
[৬] তিনি বলেন, এখানে প্রায় ৪৪ প্রজাতির ফুল-ফল সবজির গাছ রয়েছে। আজ থেকে ৬০ দিন আগে এগুলো লাগিয়েছিলাম। ইতোমধ্যে তিন বার শাকসবজি আমরা রান্না করে খেয়েছি। মোস্তাফিজুর রহমান সবাইকে সবুজায়ন ও কীটনাশকমুক্ত খাবার নিশ্চিত করতে এমন ছাদকৃষি করার আহ্বান জানান।
[৭] এছাড়াও শহরে বসে বাসার ছাদকে কাজে লাগিয়ে এমন বাগান করলে পরিবেশসহ মানুষ উপকৃত হবে বলে যোগ করেন ওই কর্মকর্তা। এ ছাদ বাগানে শোভা পাচ্ছে পুদিনা, ধনিয়া পাতা, টমেটো, লাল, পালংশাক, লেটুসপাতা, গোল, লাল আলু, পেঁয়াজ, শসা, বরবটি, করলা, সরিষা, আম, পেয়ারা, লেবু, মাল্টা, স্ট্রবেরি, লিচু, কমলা, ডালিম, জাম্বুরা, আমলকি, মিষ্টি তেঁতুল, কাঁঠাল, সফেদা, আমড়া, গাঁদা, ডালিয়া, সূর্যমুখী, পেঁপে, চিচিঙ্গা, শালগম, শিম, ঢেঁডস, মূলাসহ নানা ধরনের ফুল-ফল ও সবজির গাছ।
[৮] ব্যতিক্রমী এ ছাদ বাগানটি সম্প্রতি পরিদর্শন করেন ফেনী জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজজামান, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক ড. মোহাম্মদ মঞ্জুরুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. গোলাম জাকারিয়া, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সুজন চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আজগর আলী, ফেনী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরীন সুলতানা, পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াছমিন আক্তারসহ কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
[৯] পরিদর্শনকালে জেলা প্রশাসক বলেন, জমিতেও যেসব সবজি মানুষ চাষ করার কথা চিন্তা করতে পারে না সেসব প্রজাতির সবজি ফুল-ফলের দেখা মিলছে এই ছাদে যেটি খুবই মনোমুগ্ধকর। এর ফলে ছাদ কৃষিতে আগ্রহ বাড়বে এবং অর্থণীতির চাকা সচল হবে। এছাড়াও এমন ছাদকৃষির ফলে মানুষ তার দৈনন্দিন সাংসারিক জীবনের খাবারের যে প্রয়োজন তা মিটাতে পারবেন।
[১০] জেলা প্রশাসক বলেন, এই ছাদে স্ট্রবেরি থেকে শুরু করে ক্যাপসিকাম যেগুলো বাজারে অনেক দাম ওগুলোসহ অনেক ধরনের ফুল-ফল সবজির গাছের দেখা মিলছে। যেগুলোর মানও খুব বেশি ভালো। স্বাস্থ্যকর পরিবেশে এগুলো বেড়ে উঠছে। এ সময় তিনি যাদের বাসার ছাদে খালি জায়গা আছে অথবা বাসার আশ-পাশে খালি জায়গায় বাগান করার পরামর্শ দেন। সম্পাদনা: সাদেক আলী