শহিদুল ইসলাম: [২] চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষে সাড়ে আট কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেনের সড়ক ও চাক্তাই খালের মুখে জলকপাটের (স্লুইসগেট) নির্মাণ করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। চাক্তাই খাল থেকে কালুরঘাট সেতু পর্যন্ত চার লেনের দীর্ঘ এই সড়কের সঙ্গে ১২টি খালের মুখে জলকপাটের (স্লুইসগেট) নির্মাণ হলেই বাকলিয়া-চান্দগাঁও- মোহারা এলাকার দৃষ্পট পাল্টে যাবে। সড়কটি বাস্তবায়ন হলে অল্প সময়ের মধ্যে কালুরঘাট থেকে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করা যাবে। এই সড়ক ঘেঁষে চান্দগাঁও হামিদচরেই নির্মিত হচ্ছে দেশের একমাত্র মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া কালুরঘাট ভারী শিল্প এলাকার দিকে একটি সংযোগ রাস্তা রাখা হচ্ছে।
[৩] ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা যানবাহন ‘চিটাগং সিটি আউটার রিং রোড় দিয়ে কালুরঘাট এলাকায় চলে আসতে পারবে সহজে। কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষে পড়ে থাকা একসময়ের পরিত্যাক্ত ভূমি। যেখানে ছিল না মানুষের বিচরণ। কিন্তু এখন চোখে পড়বে বদলে যাওয়া দৃশ্যপট।
[৪] চার লেনের একটি সড়ক যে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে কিভাবে আন্দোলিত করতে পারে এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে চাক্তাই থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত সড়ক কাম উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্পটি। নির্মাণাধীন সড়কের পাশে বসবাসকারী মানুষের অভিব্যক্তি ও তাদের উচ্ছ¡াস, বদলে যাবে পিছিয়ে পড়া এই এলাকাটি। গড়ে উঠবে নতুন নতুন ছোট বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান। কর্মসংস্থান হবে হাজার হাজার লোকের।
[৫] চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নির্বাহী প্রকৌশলী রাজীব দাশ বলেন, এ পর্যন্ত ৪২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আমরা ২০২২ সালের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগুচ্ছি। চাক্তাই খাল থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত সাড়ে ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩০ ফুট উচ্চতায় থাকবে এই সড়ক।
[৬] প্রকল্পটি একদিকে যেমন যাতায়াত ব্যবস্থায় যোগাযোগ রক্ষা করবে অপরদিকে বিশাল এলাকার মানুষকে জলাবদ্ধতা দুর্ভোগ থেকে রক্ষা করবে। এই প্রকল্পের আওতায় ১২টি খালের মুখে স্লুইসগেট বসছে। এতে জোয়ারের পানি আর নগরীতে প্রবেশ করতে পারবে না বলে তিনি জানান।
[৭] নির্মাণাধীন সড়কের পাশে বসবাসকারী পূর্ব বাকলিয়া এলাকার মো: হাসান বলেন, বিশাল এই সড়কটি কাজ শেষ হলে আমাদের এলাকায় আর জোয়ারের পানিতে ডুববে না। আমাদের পাশে খালের মৃখে স্লুইস গেটে নির্মাণ হচ্ছে। আর সড়ক দিয়ে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত অনেক সহজ হবে।
[৮] সিডিএ সূত্রে জানাগেছে, ২০১৭ জুলাই, থেকে ২০২১ জুনের প্রকল্পটি সর্ম্পন্ন করার কথা ছিল। কিন্তৃ নির্দিষ্ট মেয়াদে কাজ শেষ করতে না পারলেও বিপরীতে বেড়েছে প্রকল্পের ব্যয়। তাই আরও এক বছর প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২২ সাল করা হয়েছ। এদিকে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিভুক্ত প্রকল্পগুলোর নিম্নে অগ্রাধিকার শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত থাকায় প্রকল্পটি অনিশ্চয়তা আরও বেড়েছে। যদিও জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম শহরের খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য নেওয়া পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার প্রকল্প ও দুই হাজার ৪২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘চিটাগং সিটি আউটার রিং রোড’ প্রকল্প; দুটিই সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিভুক্ত প্রকল্পগুলোর উচ্চ অগ্রাধিকার শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কিন্তু প্রায় একই সময়ের ‘কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুঘাট সেতু হতে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সয়ক নির্মাণ’ প্রকল্পটি সরকারের নিম্ন অগ্রাধিকার শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে প্রথম দুটি প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ হলেও তৃতীয় প্রকল্পটি শেষ হতে অনেক সময় লাগবে এবং ব্যয়ও বেড়ে যাবে বলে জানা গেছে।
[৯] জানা গেছে, জলাবদ্ধতা নিরসনসহ কর্ণফুলী নদীর তীরে আট দশমিক পাঁচ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ কাম সড়ক নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল একনেক সভায় অনুমোদন পায়। যার মেয়াদকাল ধরা হয় জুলাই ২০১৭ থেকে জুন ২০২০ পর্যন্ত। প্রকল্পটি শুরুতে ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ না হলেও পরবর্তীতে আরও ৩৩০ কোটি ২৪ লক্ষ টাকা বাড়িয়ে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৩১০ কোটি ২৪ লক্ষ টাকা। তাতেও শেষ হয়নি প্রকল্পের কাজ। গত বছর মার্চ থেকে করোনার কারণে কাজ কিছুটা ধীরগতিতে চললেও গত বছরের শেষের দিক থেকে পুরোদমে শুরু হয়।
[১০] সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস জানান, এই প্রকল্পে অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনসহ কর্ণফুলী নদীর তীরে আট দশমিক পাঁচ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ কাম সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে আমরা যথাযথভাবে অর্থ পাচ্ছি না। আর এতে বিলম্বিত হচ্ছে প্রকল্পের কাজ। গত অর্থবছরে ১৯৫ কোটি টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও সম্পূর্ণ অর্থ ছাড় হয়নি। অর্থ ছাড়া প্রকল্প এগিয়ে নেয়া সম্ভব নয়।
[১১] গত বুধবার কল্পলোক আবাসিক এলাকা শেষ প্রান্তে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সড়কের উপর বালি আর মাটি ভরাটের কাজ চলছে। অন্যদিকে চাক্তাই খালের মুখে স্লুইসগেট নির্মাণের কাজও চলছে। একইসাথে ড্রামট্রাক দিয়ে দ্রুত গতিতে এক স্থান থেকে মাটি অপর স্থানে পরিবাহিত হচ্ছে। রোলার দিয়ে আবার চলছে মাটি চাপার কাজ। আরেকটি রোলার দিয়ে মাটি সমান করার কাজ। স্কেভেটর দিয়ে চলছে মাটি উত্তোলনের কাজ। অর্থাৎ মাটি উত্তোলন, পরিবহন এবং সড়ক তৈরির কাজ সমান তালে চলছে। কল্পলোক আবাসিক এলাকা ও পূর্ব বাকলিয়া চেয়ারম্যান ঘাটার মধ্যবর্তী এলাকায় দুটি স্ল্ইুস গেটের নিচের অংশের কাজ প্রায় শেষ। বজ্রঘোনা এলাকার স্লুইস গেটে কাজ চলছে। বলিরহাট এলাকায় ডোমখালী খালের মুখে একটি বড় স্লুইসগেট নির্মাণের কাজও এগুচ্ছে। সম্পাদনা: হ্যাপি