মাছুম বিল্লাহ: [২] ভারতের নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ও দার্শনিক অমর্ত্য সেনের বক্তৃতা অবলম্বনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ‘কেন তিনি আজ এত প্রাসঙ্গিক’ নিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকায় লিখেছেন পাঁচ লেখক জ্যোৎস্না মুখোপাধ্যায়, সৌপ্তিক অধিকারী, পঙ্কজ কুমার চট্টোপাধ্যায়, সমীরণ ভট্টাচার্য, পার্থসারথি দাশগুপ্ত।
[৩] অমৃত্য সেনের লেখায় বঙ্গবন্ধুর বাঙালির সামাজিক পরম্পরা, মূল্যবোধ ও পারস্পরিক বিশ্বাস, সংস্কৃতিক রুচি ও ভিন্ন ব্যবহারিক যাপন- নিয়ে যে সব বিষয় উঠে এসেছে- তাতে মুগ্ধ হয়ে লেখকরা।
[৪] আনন্দবাজারে জ্যোৎস্না মুখোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘এই জন্যই শেখ মুজিব সফল এবং বিশ্বজনীন এক রাজনৈতিক চিন্তাবিদ। তিনি বিশ্বাস করতেন, জোর করে চাপিয়ে দেওয়া ভাষা, সংস্কৃতি ও সংবিধান অন্য ভাষাগোষ্ঠীর মানুষ- যাঁদের ভিন্ন সংস্কৃতি, রুচি ও ভিন্ন ব্যবহারিক যাপন- তাঁরা কখনও মেনে নেন না। তাঁর প্রজ্ঞা ও সঠিক নেতৃত্ব বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সাফল্য নিয়ে আসে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ভাষা, মুক্তিযুদ্ধ, এবং শেখ মুজিবের আদর্শগত বিশ্বাসের উপর অমর্ত্য সেনের এই নিরপেক্ষ মূল্যায়ন আমাদের কাছে ঐতিহাসিক দলিল।’
[৫] সৌপ্তিক অধিকারী লিখেছেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার মুজিবুর রহমান সাম্প্রদায়িকতার বিষ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পেরেছিলেন। এই সম্প্রীতির বন্ধনে তিনি সকলকে আবদ্ধ করেছিলেন বলেই বিচ্ছিন্নতাবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি।
[৬] পঙ্কজ কুমার চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, আদর্শের বাস্তব রূপায়ণের বিষয়ে নীরব থেকেছেন। আমাদের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা লেখা থাক, আর কফি হাউসের টেবিলে ধর্মনিরপেক্ষতার বিষয়ে তুফান উঠুক- তার সঙ্গে বাস্তবের সম্পর্ক নেই।
[৭] সমীরণ ভট্টাচায লিখেছেন, হয়তো কোনও দিন শুনব, সোনার বাংলার গণমানস প্রায় ঝেড়ে ফেলে দিয়েছে বঙ্গবন্ধু আর তাঁর ধর্মনিরপেক্ষতাকে। তাঁরই কন্যা দেশের সাংবিধানিক প্রধান হয়েও রাজধানীতে বঙ্গবন্ধুর একটি মর্মর মূর্তি স্থাপন করতে পারেন না, দেশের আইনসভায় তীব্র বিরোধিতা হয়। ঝলসে-উঠে নিবে যাওয়া শাহবাগ, নাকি লক্ষ মানুষের ভারতবিরোধী মিছিলে স্তব্ধ হয়ে যাওয়া ঢাকা মহানগরী- কোনটা আজকের প্রকৃত বাংলাদেশ?
[৮] পার্থসারথি দাশগুপ্ত লিখেছেন, মোগল সম্রাট আকবর এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, দু’জনেই রাষ্ট্রক্ষমতার শীর্ষে অধিষ্ঠিত ছিলেন, এবং ইসলাম ধর্মের অনুসারী ছিলেন। দু’জনেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের ব্যবহারের বিরোধী। অমর্ত্য সেনের দার্শনিক তথা সামাজিক বোধের শিকড় যে ভারত তথা জন্মভূমি বাংলার গভীরে প্রোথিত, এই ব্যাখ্যা তার সাক্ষী।