শিরোনাম
◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ চলচ্চিত্র ও টিভি খাতে ভারতের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করলেই ব্যবস্থা: ইসি আলমগীর  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো

প্রকাশিত : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ০৬:৪০ সকাল
আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ০৬:৪০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বিনিয়োগ আগ্রহের শীর্ষে ইউনাইটেড গ্রুপ

ডেস্ক নিউজ: গত অর্থবছরের শেষার্ধে (জানুয়ারি-জুন) বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বকেই স্থবির করে দিয়েছিল কোভিড-১৯ মহামারী। তবে এর মধ্যেও আগ্রাসী বিনিয়োগ প্রবণতা বজায় রেখেছেন অনেক উদ্যোক্তা।

বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে স্থবির অর্থনীতিতেও জ্বালানির সঞ্চার করেছে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান। এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) বার্ষিক প্রতিবেদনেও। সূত্র:বণিক বার্তা

সংস্থাটির প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বেসরকারি খাতের প্রস্তাবিত শীর্ষ ১০ প্রকল্পেই বিনিয়োগ নিবন্ধন হয়েছে প্রায় ১১ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকার। এর মধ্যে শীর্ষ তিন বিনিয়োগ প্রস্তাবের মধ্যে দুটিই ছিল ইউনাইটেড গ্রুপের।

মহামারীকালে অদম্য বিনিয়োগ মেজাজে ছিল ইউনাইটেড গ্রুপ। ইউনাইটেড চট্টগ্রাম পাওয়ার লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি নিবন্ধন করেছে গ্রুপটি। গত অর্থবছরে কোম্পানিটির বিনিয়োগ নিবন্ধন হয়েছে ৪ হাজার ২৫৮ কোটি ৫০ লাখ টাকার।

শুধু ইউনাইটেড চট্টগ্রাম পাওয়ার লিমিটেডেই থমকে ছিল না ইউনাইটেড গ্রুপের নতুন বিনিয়োগ প্রস্তাব। ২০১৮-১৯ সালে নিবন্ধিত ইউনাইটেড পায়রা পাওয়ার লিমিটেডের বিনিয়োগ সম্প্রসারণের জন্য গত অর্থবছরে বড় একটি প্রস্তাব দিয়েছে গ্রুপটি। এ সময় ইউনাইটেড পায়রা পাওয়ার লিমিটেডে গ্রুপটির আরো ১ হাজার ১৫৬ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব নিবন্ধন দিয়েছে বিডা।

এ বিষয়ে ইউনাইটেড গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঈনউদ্দীন হাসান রশিদ বণিক বার্তাকে বলেন, ইউনাইটেড চট্টগ্রাম পাওয়ার লিমিটেডের কোম্পানি গঠন করে রেখেছি আমরা। নিবন্ধিত প্রকল্পটি চুক্তি সই হওয়ার পর বাস্তবায়নে তিন বছর লাগতে পারে। কভিডকালে আমরা বিনিয়োগ থেকে বিরত থাকিনি।

একের পর এক প্রকল্পের কাজ আমরা করে যাচ্ছি। বিনিয়োগ শ্লথ করার কোনো কারণ আছে বলে আমরা মনে করিনি। এটা ঠিক যে এ পরিস্থিতিতে নতুন কোনো ঋণের দিকে আমরা ঝুঁকিনি। কিন্তু আমাদের বিনিয়োগ ক্ষুধাও কমেনি।

কোভিডের মধ্যেও আমরা এমন কোনো সূচক দেখিনি, যাতে অর্থনীতি খারাপ হচ্ছে। বরং তা শক্তিশালী হচ্ছে। সরকারও কিছু সঠিক নীতিসহায়তা দিয়েছে। এর প্রভাবে যে ভয় পাওয়ার মতো পরিস্থিতি এসেছিল, পরে সেটার কোনো কার্যকারিতা আর দেখা যায়নি।

কভিডকালে ইউনাইটেড গ্রুপের মতো বড় বিনিয়োগ প্রকল্প নিয়ে এগিয়ে এসেছে আরো অনেক প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে বিডায় নিবন্ধিত দেশী বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে অনন্ত হোটেল অ্যান্ড পাওয়ার রিসোর্ট লিমিটেড, ইউনাইটেড পায়রা পাওয়ার লিমিটেড, সেখ আকিজউদ্দিন লিমিটেড, মেঘনা হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট লিমিটেড, এনপিএম পায়রা হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট লিমিটেড, জেএএল এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, সালাম স্টিল কনকাস্ট রি-রোলিং মিলস, দ্য ক্রাউন হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট ও যমুনা পেপার মিলস লিমিটেড।

ঢাকায় একটি বহুমুখী প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ১ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকার প্রকল্প নিবন্ধন করেছে অনন্ত হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ৩০০ রুমবিশিষ্ট একটি বিজনেস হোটেল, ১৫ অফিস ফ্লোরবিশিষ্ট একটি কমার্শিয়াল বিল্ডিং এবং তিন-চার রুমের ৭১টি ইউনিটবিশিষ্ট একটি আবাসিক ভবন নির্মাণ। বাংলাদেশের স্থানীয় ব্যাংকের পাশাপাশি ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনও (আইএফসি) এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে বলে জানা গিয়েছে।

গত অর্থবছরে সেখ আকিজ উদ্দিন লিমিটেডের নতুন বিনিয়োগ প্রস্তাব নিবন্ধন হয়েছে ৯৭৭ কোটি ১৬ লাখ টাকার। একই সময়ে মেঘনা গ্রুপের মেঘনা হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস লিমিটেডের বিনিয়োগ প্রস্তাব নিবন্ধন হয়েছে ৯৩১ কোটি ৫১ লাখ টাকার।

যমুনা পেপার মিলস লিমিটেডে বিনিয়োগের জন্য এ সময় যমুনা গ্রুপের প্রস্তাব এসেছে ৪১৯ কোটি ১৫ লাখ টাকার।

এ প্রসঙ্গে যমুনা গ্রপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শামীম ইসলাম বলেন, মহামারী এখনো চলছে। কিন্তু সবকিছু তো থেমে থাকবে না, থাকেওনি। একটা প্রকল্প সচল করতে ন্যূনতম দুই বছর সময় লাগে। কারণ জমি উন্নয়ন থেকে শুরু করে ভবন অবকাঠামো উন্নয়নসহ অনেক কাজ থাকে।

এরই মধ্যে কারখানা স্থাপনের কাজ শুরু হয়ে যন্ত্রপাতি স্থাপন চলছে। উৎপাদনে আসতে আরো তিন-চার মাস লাগবে। কভিডের কারণে লোকবল কাজে লাগানো যায়নি। ফলে কিছুটা পিছিয়েছে। সরকারের নীতিসহায়তা আমাদের বিনিয়োগ অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে কিছুটা সহায়তা করেছে।

এছাড়া গত অর্থবছরে এনপিএম পায়রা হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস লিমিটেডে বিনিয়োগ প্রস্তাব নিবন্ধন হয়েছে ৮৪৪ কোটি ৫০ লাখ টাকার। এর বাইরেও এ সময় বেসরকারি খাতে বিডার নিবন্ধনকৃত উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে জেএএল এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে ৫৭৯ কোটি ২৬ লাখ টাকার, সালাম স্টিল কনকাস্ট রি-রোলিং মিলসে ৪৮৪ কোটি ৩৮ লাখ ও দ্য ক্রাউন হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টে ৪৩৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব।

বিডার প্রতিবেদনে দেখা গেছে, করোনার মধ্যেও গত অর্থবছরে দেশে স্থানীয় ও বিদেশী মিলিয়ে ৯০৫টি প্রকল্পে মোট ১ হাজার ৩৭৯ কোটি ডলারের (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় ১ লাখ ১৬ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা) বিনিয়োগ নিবন্ধিত হয়েছে।

এরমধ্যে ৭৩৯টি প্রকল্পে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ নিবন্ধিত হয়েছে ৭৪ হাজার ৬২৪ কোটি টাকার। ১৬৬টি প্রকল্পে বিদেশী বিনিয়োগ প্রস্তাবে উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ নিবন্ধন হয়েছে ৪২ হাজার ৩১৫ কোটি ২০ লাখ টাকার। গত অর্থবছরের প্রস্তাবিত দেশী-বিদেশী এসব বিনিয়োগ প্রকল্পে মোট কর্মসংস্থান হবে ১ লাখ ৩৮ হাজার ১৭৭ জনের।

দেশে বিনিয়োগ সম্পৃক্ত খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের অনেক কিছুই নির্ভর করে পরিস্থিতির ওপর। গত অর্থবছরে চ্যালেঞ্জ বলতে ছিল মূলত কভিড-১৯, যা নানাভাবে বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে রফতানিমুখী শিল্পে এর প্রভাব পড়েছে বেশি। দেশের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগেও স্থবিরতা ছিল।

তবে এ স্থবিরতা ছিল অন্যান্য দেশের তুলনায় স্বল্প সময়ের জন্য। এ স্বল্প সময়ে বিনিয়োগ পরিবেশে নাজুক পরিস্থিতির লক্ষণ দেখা দিলেও অর্থনীতি সচল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা দ্রুত কাটতে শুরু করে।

সরকারের নীতিসহায়তাও এক্ষেত্রে কার্যকর প্রভাবকের ভূমিকা রেখেছে। সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে অর্থনৈতিক স্থবিরতা যাতে দীর্ঘায়িত না হয়, সে বিষয়েও ব্যবসায়ীরা সচেষ্ট ছিলেন। এর প্রতিফলন হিসেবেই স্থানীয় অনেক বড় প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেই বিনিয়োগ প্রবণতায় কোনো পরিবর্তন আসেনি।

এ বিষয়ে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, গত বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত তিন মাসে আমরা দেখেছি, বিনিয়োগ নিবন্ধন একেবারেই কম। কিন্তু জুলাইয়ের পর থেকে এটা বাড়তে থাকে।

অর্থাৎ ব্যবসায়ীদের বসে থাকার কথা না। তারা বসেও থাকেননি। সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজও এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে। প্যাকেজটি অর্থনৈতিক চাঞ্চল্য ফিরিয়ে এনেছে খুব দ্রুত। এর ফলে ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ মেজাজও ধরে রাখা গিয়েছে। আরেকটি দিক হলো মহামারী একসময় চলে যাবে, এমন মানসিকতা সবার মধ্যেই ছিল। সভ্যতার বিকাশে যে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন হয়েছে তার প্রভাবে টিকা আবিষ্কারেও আগের চেয়ে সময় কম লেগেছে। এটাও স্থানীয় উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে সাহস জুগিয়েছে।

এছাড়া বিনিয়োগকারীরা এটাও ভেবে দেখেছেন, মহামারী যাওয়ার অপেক্ষায় বসে থাকলে তারা সম্ভাবনা কাজে লাগানোর সুযোগ হারাবেন। কারণ করোনাকালে অনেক বড় সম্ভাবনারও দেখা মিলেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়