শিরোনাম
◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন ◈ ইরানের ইস্পাহান ও তাব্রিজে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত (ভিডিও) ◈ ভেটোর তীব্র নিন্দা,মার্কিন নীতি আন্তর্জাতিক আইনের নির্লজ্জ লংঘন : ফিলিস্তিন ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো

প্রকাশিত : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:১১ দুপুর
আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:১১ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

হাসান শান্তনু : বিদেশি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন এভাবে ‘গ্রহণ’, কিংবা ‘বর্জন’সাংবাদিকদের কাজ নয়

হাসান শান্তনু : প্রধানমন্ত্রী তখন খালেদা জিয়া। তার সরকারের অন্যতম প্রভাবশালী বিএনপির এক নেতার ‘কর্তৃত্ব কমে যায়’প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে, বিএনপির নীতিনির্ধারক তারেক রহমানের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জের ধরে। বিষয়টি নিয়ে তখন সাপ্তাহিক শীর্ষ কাগজ প্রতিবেদন ছাপে, ‘একটি নক্ষত্রের পতন’শিরোনামে (সম্ভাব্য)। ওই সাপ্তাহিক থেকে নেওয়া প্রতিবেদনটি দৈনিক জনকণ্ঠ পূর্ণমুদ্রণ করলেও পত্রিকাটি সরকারি রোষানল, নির্যাতনের শিকার হয়। ১৯৯৭ সালে দৈনিক দিনকাল ‘অনুসন্ধানী প্রতিবেদন’ছাপে-নির্মল সেন, শফিক রেহমানসহ বিশিষ্ট প্রায় ষাট সাংবাদিক, কলাম লেখক প্রতি মাসে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন থেকে ‘পাঁচ-সাত হাজার টাকা মাসোহারা নেন ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার দালালির বিনিময়ে’।

দিনকালের ‘প্রতিবেদনটি’যে অসৎ উদ্দেশ্যে করা হয় নষ্ট রাজনৈতিকপল্লির সূত্র থেকে, তা প্রমাণিত হতে বেশিদিন লাগেনি। অন্যদিকে জন এফ কেনেডি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি থাকাকালে কিউবায় আক্রমণ করে দেশটির অবিসংবাদিত নেতা বিপ্লবী ফিদেল কাস্ত্রোর সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ‘নিউইয়র্ক টাইমস’ পত্রিকার সাংবাদিক গোয়েন্দাসূত্রে বিষয়টি জেনে প্রতিবেদন প্রকাশের প্রস্তুতি নেন। পত্রিকাটির প্রতিবেদন প্রকাশে অনুসন্ধানের তথ্য রাষ্ট্রপতির কার্যালয়েও পৌঁছায়। যুক্তরাষ্ট্রের তখনকার অনেক সাংবাদিকের লেখায় উঠে এসেছে-কেনেডি ব্যক্তিগতভাবে নিউইয়র্ক টাইমসের সম্পাদককে প্রতিবেদনটি প্রকাশ না করতে অনুরোধ করেন।

রাষ্ট্রপতির অনুরোধ উপেক্ষা করেও পত্রিকাটি শেষ পর্যন্ত সেটা ছাপায়। সেজন্য পত্রিকাটির কোনো সাংবাদিক কারাবন্দী হননি। রাজ্যে রাজ্যে নিজেদের রাষ্ট্রপতির ‘খাসলোক’প্রমাণে কেনেডির দলের নেতাকর্মীরা মামলার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েননি। ‘নিউইয়র্ক টাইমসের’ বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার একটা মামলাও হয়নি। দেশটির সরকার সমর্থক সাংবাদিকরা পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধের দাবি জানাননি। প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্য প্রমাণের আগেই সরকারবিরোধী সাংবাদিকরা ‘প্রতিবেদনটির’কারণে ‘সরকার পতনের দিনক্ষণ’ গুণতে শুরু করেননি। কোনো সাংবাদিক নিজেকে ‘রাষ্ট্রপতির লোক’দাবি করে যুক্তরাষ্ট্রের পথে-ঘাটে স্লোগান দেননি। প্রতিবেদনটিও মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়নি।

দক্ষিণ এশিয়ায় নৈতিক সাংবাদিকতার অন্যতম উদাহরণ অ্যান্থনি মাসকারেনহাস। তার সাংবাদিকতায় নৈতিকতার অনন্য উদাহরণও বাংলাদেশকে ঘিরে, ১৯৭১ সালে। পাক সামরিক জান্তা বিদেশি কয়েক সাংবাদিককে তখনকার পূর্ব পাকিস্তানে আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে আসে, ‘বাঙালি বিশ্বাসঘাতকদের’ হাত থেকে ‘পাকিস্তানকে বাঁচাতে’ পাকসেনারা কীভাবে লড়াই করছে, তা দেখাতে। নিজ দেশে ফিরে অন্য সাংবাদিকরা পাক সেনাদের গুণগান করলেও অ্যান্থনি মাসকারেনহাস লেখেন, ‘দ্য রেপ অব বাংলাদেশ’।

সেই বাংলাদেশ জন্মের পঞ্চাশ বছর পর কয়েক ডজন স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল, এতো এতো দৈনিক পত্রিকা, বেতার স্টেশন, পাড়ায় পাড়ায় ব্যাঙয়ের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা আইপি টিভি, সংবাদ পোর্টাল থাকা সত্তে¡ও অনেকের পেশাগত নৈতিকতা কোন পর্যায়ে আছে, তা আবারও সামনে এনেছে আল-জাজিরার প্রতিবেদন- ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’। পেশাগতভাবে মর্যাদাপূর্ণ নৈতিক অবস্থান এদেশের অনেক সাংবাদিকের নেই, তাদের ‘অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার গরজও প্রায় সময় উপরে উল্লেখিত দিনকালের ‘অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের’মতো সস্তা দলীয় চিন্তার বৃত্তে আটকে থাকে।

এদেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাও ঘুরেফিরে জনকণ্ঠের ওই প্রতিবেদন পূর্ণমুদ্রণের পরের অবস্থার মতো। অবশ্য নব্বইয়ের দশকে গণতন্ত্রের নতুন যাত্রার পর থেকে এখন গণমাধ্যম কর্তৃত্ববাদী চাপে বেশি আছে। আল-জাজিরার প্রতিবেদনটিকে সাংবাদিকদের একাংশের যুক্তিহীন প্রত্যাখ্যান, আরেক অংশের নাটকীয় গ্রহণ সরাসরিই তাদের রাজনীতি অবস্থান থেকে। কারণ বিদেশি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন এভাবে ‘গ্রহণ’, ‘বর্জন’ সাংবাদিকদের কাজ নয়। বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর বিষয়ে আল-জাজিরা, ইকোনোমিস্ট ইত্যাদি প্রচারমাধ্যম মোটা অংকের টাকায় চুক্তি করে প্রতিবেদন প্রচার, প্রকাশ করে। প্রখ্যাত সাংবাদিক মাহফুজ আনামের ভাষায়, ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’সর্বোচ্চ মানের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা নয়। (নট এ টপক্লাস ওয়ার্ক অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম)। এতে অনেক দুর্বলতা, প্রকৃত প্রমাণের ঘাটতি আছে।

তথ্যের বদলে সেনাপ্রধানের পরিবারের বিরুদ্ধে বিষোদগার এতে ঠেসে দেওয়া হয়েছে। তবুও এর কিছু দিক নিয়ে প্রশ্ন তোলা হবে বলে সাংবাদিকদের কাছ থেকে যে আশা করেছিলেন পাঠকরা, এর বাস্তবতা তেমন দেখা যায়নি। শুরুর কাল থেকেই সাংবাদিকতার বিশেষ মানে প্রশ্ন করা। যেকোনো প্রশ্ন করলেই যেমন সরকারের বিরোধিতা হয় না, তেমনই বিনা প্রশ্নে দলীয় অবস্থান থেকে সরকারবিরোধী প্রতিবেদন গ্রহণ করলেই সরকারের পতন ঘটে যায় না। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়