চিররঞ্জন সরকার : প্রথমেই বলে নেওয়া ভালো যে, করোনা প্রতিরোধের জন্য উদ্ভাবিত টিকা কোনো পানি-পড়া বা স্বপ্নে পাওয়া ‘শ্রীপুরের বটিকা’ নয়। এর পেছনে রয়েছে বিজ্ঞানীদের দীর্ঘদিনের গভীর গবেষণা। অনেকগুলো ধাপ অতিক্রম করে তবেই এই টিকা ছাড়পত্র পেয়েছে। আর যাই হোক, মানুষের শরীরের জন্য ন্যূনতম ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে এই টিকা অনুমোদন পেতো না। ইতোমধ্যে ফাইজার, মডার্না ও অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত টিকা বিভিন্ন উন্নত দেশের যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেয়ে লাখ লাখ মানুষের ওপর প্রয়োগ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশেও অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি টিকা প্রয়োগের প্রস্তুতি চলছে। করোনা টিকা প্রয়োগের প্রাক্কালে বাংলাদেশে এক অভাবনীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সংকীর্ণতা, স্বার্থপরতা ও নিজের পাতে ঝোল টানার ব্যাপারে সিদ্ধহস্ত বাঙালি করোনা টিকা গ্রহণের ক্ষেত্রে উদার্যের এক চরম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
রাজনীতিবিদ, আমলা, বড়লোক গরিব, সবাই এক্ষেত্রে সীমাহীন উদারতা প্রকাশ করছেন। অতীতে কখনো কেউ অন্যের জন্য এতো দরদ দেখিয়েছে বলে মনে পড়ে না। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ বলছে, বিএনপিকে আগে টিকা দেওয়া হোক। ওদিকে বিএনপি বলছে, আওয়ামী লীগাররা আগে টিকা গ্রহণ করুক। এমনকি আমলা-ব্যবসায়ী-বড়লোকরা পর্যন্ত বলছেন, সাধারণ মানুষকে আগে টিকা দেওয়া হোক। ওদিকে সাধারণরা বলছেন, আমলা-ব্যবসায়ী-বড়লোকরা দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তাদেরই আগে টিকা দেওয়া হোক। বয়স্করা বলছেন, আমাদের সময় তো প্রায় শেষ। আমাদের আর বাঁচিয়ে রেখে কী হবে?
আগে কমবয়সীদের দেওয়া হোক। কম বয়সীরা বলছেন, না না, বয়স্করা এমনিতেই ভালনারেবল। আমাদের তো এমনিতেই প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। কাজেই আগে দেশের সিনিয়র সিটিজেনদের টিকা দেওয়া হোক! অপরের জন্য মনপ্রাণ কাঁদার এ যেন এক অনন্য দৃষ্টান্ত। এমন একটা শুভদিনের কথা চিন্তা করেই বুঝি কবি কামিনী রায় লিখেছিলেন: পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি/এ জীবন মন সকলি দাও/তার মতো সুখ কোথাও কি আছে?আপনার কথা ভুলিয়া যাও/আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে/আসে নাই কেহ অবনী পরে/সকলের তরে সকলে আমরা/প্রত্যেকে আমরা পরের তরে। আহ্, আমাদের এমন মানসিকতা যদি সব ক্ষেত্রে হতো! ফেসবুক থেকে