শিরোনাম
◈ অ‌ক্টোব‌রে বাংলাদেশ সফরে ৩‌টি ক‌রে ওয়ান‌ডে ও টি-‌টো‌য়ে‌ন্টি সি‌রিজ খেল‌বে ও‌য়েস্ট ই‌ন্ডিজ ◈ ভুয়া ফুটবল দল সাজিয়ে জাপান-যাত্রা, ধরা পড়ে ফেরত পাঠিয়েছে ২২ জনকে! ◈ উচ্চশিক্ষার আগ্রহী শিক্ষার্থীদের বিনা খরচে জাপানে মাস্টার্স ও পিএইচডি করার সুযোগ, সাথে আর্থিক সহায়তাও মিলবে ◈ সাতরাস্তায় শিক্ষার্থীদের অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ ◈ আঞ্চলিক হুমকি নিয়ে ভারতের সতর্কবার্তা: বাংলাদেশে মৌলবাদ, চীন সীমান্ত অচলাবস্থা ও পাকিস্তানের ভূমিকা ◈ ইরানে অনুপ্রবেশ করে নারী মোসাদের দুর্ধর্ষ অভিযান (ভিডিও) ◈ চ‌্যা‌ম্পিয়ন্স লিগ, বরুশিয়ার নি‌শ্চিত জয় রুখে দিলো জুভেন্টাস ◈ দূর্গা পুজাতে ভারতে গেল ৮ ট্রাক ইলিশ ◈ এমবাপ্পের দুই পেনাল্টি গোলে চ‌্যা‌ম্পিয়ন্স লি‌গে রিয়াল মাদ্রিদের শুভ সূচনা ◈ যে কারণে শিবির ক্যাম্পাসে জিতছে, সেই কারণেই বিএনপি জাতীয় নির্বাচনে জিততে পারে: দ্য ডিপ্লোম্যাটের নিবন্ধ

প্রকাশিত : ১৭ জানুয়ারী, ২০২১, ০১:৪১ রাত
আপডেট : ১৭ জানুয়ারী, ২০২১, ০১:৪১ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

রোগ প্রতিরোধে আমাদের সচেতনতা; ইসলাম কী বলে?

শেখ খালিদ সাইফুল্লাহ: সচেতনতা এমন একটি শব্দ যার অনেক মর্মার্থ রয়েছে৷সাধারণত সচেতনতা বা Awareness /Consciousness বলতে মনের চেতনা,জাগ্রতা অথবা অধিকার সম্বন্ধে সতর্কতা বুঝায়।এর ব্যবহার মূলতঃ চেতনশীল মস্তিষ্কের সাথে সম্পর্কযুক্ত। মানব জীবনে চলার পথে সর্বত্রই তার প্রয়োগ রয়েছে।বিশেষত সুস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে সচেতনতা রোগপ্রতিরোধ হিসেবে কার্য্যকরী ভুমিকা পালন করে৷ সাস্থ্যের ক্ষেত্রে সচেতনতা বলতে মানুষের দৈনন্দিন কাজ-কর্মে ও প্রকৃতিতে এমন কিছু অভ্যাস,আচরণ বা পদ্ধতির অনুসরণ করা বুঝায় যার দ্বারা শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকা যায় এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে।

সুস্বাস্থ্য,এটি মানুষের পার্থিব উন্নতির জন্য যেমন প্রয়োজন, তেমনি কল্যাণময় পরকালের পাথেয় জোগাড়ে আবশ্যক। এজন্য নবীয়ে রহমত সুস্বাস্থ্য কে আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ামত বা অনুগ্রহ বলে আখ্যা দিয়েছেন এবং তার যথাযথ কদর্য বা মুল্যায়ন করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করেছন ৷ আর সুস্থ থাকার প্রথম ও প্রধান শর্ত হলো রোগমুক্ত থাকা।

শরীরকে রোগমুক্ত রাখতে হলে প্রথমেই রোগের উতস চিহ্নিত করতে হবে৷ এবং সে অনুযায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে৷ রোগ সৃষ্টির ব্যাপারে বিজ্ঞানের কথা হলো- পরিবেশগত কারণেই মানুষের রোগের সৃষ্টি।আর ইসলামে বলে- মানুষ যখন অন্যায় ও পাপাচারে লিপ্ত হয়, তখন আল্লাহ তায়ালা তার কারণে রোগ দেন, যাতে সে সংশোধন ও পাপাচারমুক্ত হয় এবং সে ব্যাপারে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করে চলে।
এ ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলা বলেন- পরকালের কঠিন শাস্তির আগে দুনিয়াতে আমি তাদের কিছু শাস্তি দিয়ে থাকি, যেন তারা অনুতপ্ত হয় এবং পাপ কাজ থেকে বিরত থাকে।

সুতরাং মানবদেহে রোগের সঞ্চালন, যেমন পাপাচার-অশ্লীলতার কারণে হয়, তেমনি পরিবেশগত কারণেও হয়ে থাকে। তবে উভয় ক্ষেত্রে রোগ-জীবাণু নিজস্ব ক্ষমতায় মানব দেহে বিস্তার কিংবা সংক্রমণ করতে পারে না বরং এর সাথে আল্লাহু হুকম সম্পর্কযুক্ত রয়েছে৷ অর্থাৎ রোগ-ব্যাধির উতস যাই হউক,কিন্তু শরীর সুস্থ ও অসুস্থ আল্লাহর ইচ্ছায় হয়৷

একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে, যেমন-যারা গাছ তলায়,রেলস্টেশনে, বাসটার্মিনালে কিংবা কুড়েঘরে দূষিত বায়ুকণায় নোংরা পরিবেশে রোগমুক্ত জীবনযাপন করে, অপরদিকে যারা মুক্তবাতাসে সুষ্ঠু পরিবেশে দূষণ মুক্ত বায়ুতে স্বাভাবিক জীবন যাপন করার পরও ওরা এত অসুস্থ হয় কেন? মনোরম পরিবেশে থাকার পরও তাদের রোগ-ব্যাধি আসে কোথা থেকে? নিশ্চয় শুধু পরিবেশের কারণে নয়!

মনকে সধা জাগ্রত রেখে সংজ্ঞাবহ রীতি-নিতির দ্বারা সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশে সৃষ্ট বিভিন্ন রোগ-জীবানুর সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করা যেমন এক প্রকারের রোগ প্রতিরোধ ৷ তেমনি স্ব-জ্ঞানে,হুঁশে শরীয়তের রীতি-নিতি অনুকরণে সবধরনের অন্যায় পাপাচার থেকে নিজেকে মুক্ত রাখাও এক ধরনের রোগ প্রতিরোধ৷ ইসলামের দৃষ্টিতে, ‘অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করার চেয়ে সুস্থ অবস্থায় স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই উত্তম।’ যেমন বলা হয়েছে , ‘الوقاية خير من العلاج’। বর্তমান চিকিৎসাবিজ্ঞান আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে বলে যাওয়া নবীয়ে রহমত মুহাম্মাদ সা: এর সেই থিউরি স্বীকার করে ঘোষণা করে,Prevention is better than cure’ অর্থাৎ, রোগ প্রতিরোধ রোগ নিরাময়ের চেয়ে উত্তম।আবার এ কথাও বলা হয় যে, ‘রোগ প্রতিরোধ রোগ নিরাময়ের চেয়ে সস্তা।’

এ ক্ষেত্রে সবচেয় কর্যকরী ও ফলদায়ক সহায়ক হচ্ছে সচেতনতা অবলম্বন করা৷ তাই কেউ কেউ বলেন – রোগ প্রতিরোধে সচেতনাতার বিকল্প নেই৷ ইসলাম মানুষকে প্রয়োজনীয় সব বিষয়ের সচেতনতার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে। যেমন ভাবে শরিয়ত প্রণেতা ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন হুকুম-আহকাম পালনে সচেতনতার শিক্ষা দিয়েছেন,তেমন ভাবে স্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে সচেতনতাও জরুরী দেখিয়ে দিয়েছেন৷

ইসলামে স্বাস্থ্য-সুরক্ষায় সচেতনতার যে শিক্ষা পাওয়া যায় এমন কয়েকটি দৃষ্টান্ত উল্লেখ করছি যাহা আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায়ও অতিব জরুরি: যেমন, নামাজ হচ্ছে আল্লাহ প্রদত্ত বিধানাবলীর অন্যতম,নামাজ পড়তে হলে অজু জরুরী৷ আর অজু করতে হলে তাকে পানির পবিত্রতার বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে৷ তেমনি পানি ব্যবহারে রোগ বৃদ্ধির আশংকা হলে সে ক্ষেত্রে রোগী অজুর পরিবর্তে তায়াম্মুম করতে হবে যা স্বাস্থ্য সচেতনতার বহিঃপ্রকাশ৷

কোন অসুস্থ ব্যক্তি রমজান মাসে রোজা রাখার কারণে তার রোগ বৃদ্ধির আশংকা হয় অথবা বেড়ে যায় সে ক্ষেত্রে ইসলাম তাকে স্বাস্থ্য রক্ষায় ফিদিয়া প্রদানের ব্যবস্থা করে দিয়েছে ৷ হজ্বের ক্ষেত্রেও অনুরূপ বিধান অর্থাৎ অপারগতায় বদলি হজ্ব করিয়ে নেয়ারও সুযোগ রেখেছে ৷দেখুন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিভিন্ন বিধি-বিধান পালনে ইসলাম কতটুকু সচেতনতা প্রদর্শন করে ৷

পরিবেশ দূষণ মুক্ত ও তার ভারসাম্য রক্ষার্থে পৃথিবীর সূচনালগ্নে মহান আল্লাহ কাকের দ্বারা দেখানো রীতি অনুযায়ী হাবিলের মৃত দেহকে কাবিলকে দিয়ে দাফন করালেন৷ যাতে করে মৃতের পচন ও দুর্গন্ধ থেকে বায়ুদূষণ না হয়,এবং পরিবেশ দূষিত হয়ে বিভিন্ন রোগ-জীবানুর সৃষ্টি না হয়৷ যা যুগ যুগ থেকে অদ্যবধি চলে এসেছে এবং কেয়ামত পর্যন্ত এ প্রচলন অব্যাহত থাকবে৷ ইহা দূষন মুক্ত পরিবেশ গড়তে এক প্রকারের সচেতনতা শিক্ষা।

ইসলামের মৌলিক নির্দেশনাগুলির মধ্যে একটি হলো পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা।পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা হল ঈমানের অঙ্গ। কারণ পরিবেশ দূষণের কারণে মানব সমাজে নানা প্রকার রোগ-জীবাণু ছড়ায়। তাই হাদিস শরিফে আছে, রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘তোমরা তোমাদের বাড়ির আঙ্গিনা সবদিকে পরিষ্কার রাখবে। ইহুদিদের অনুকরণ কর না। তারা বাড়িতে আবর্জনা জমা করে রাখে। (সুনানে তিরমিযি, হাদিস নং ২৭৯৯)

তেমনি করে যত্রতত্র মল-মূত্র ত্যাগ করা নিষেধ করা হয়েছে। কারণ তাতে রোগ-ব্যাধির ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। হাদিস শরিফে আছে, রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা তিন অভিশপ্ত ব্যক্তি থেকে বেঁচে থাক, যে পানির ঘাটে, রাস্তার ওপর ও গাছের ছায়ায় মলমূত্র ত্যাগ করে’। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ২৬)

হাদিস শরিফে আছে, ‘পেট হল সকল রোগের কেন্দ্রস্থল।’ খাওয়া-দাওয়ার ক্ষেত্রে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা সহ সচেতনতা বা মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে ইসলাম নির্দেশ দেয়েছে৷ সাথে সাথে অতিভোজন না করতেও উৎসাহ প্রদান করেছে ৷ তাই খাওয়ার আগে হাত মুখ ধুয়ে কুলি করে বিসমিল্লাহ সহকারে ডান হাত দ্বারা খানা-পিনা শুরু করা এবং শেষে পুণরায় হাত ধৌত করে নেয়া৷ কারণ হাতে বিষাক্ত জীবাণু থাকার কারণে রোগ সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। রাসূল সা.খাদ্যগ্রহণের ব্যাপরে বলেছেন, ‘পেটের এক তৃতীয়াংশ খাদ্য দ্বারা, এক তৃতীয়াংশ পানীয়ের জন্য এবং এক তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য খালি রাখবে’। (সুনানে ইবনে মাজা হাদিস নং ৩৩৪৯) পরিমিত খাবার গ্রহণে অভ্যস্ত হলে সকল প্রকার রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্ত থাকা যায়।

পবিত্র কোরানে আছে, ‘তোমরা খাও ও পান কর এবং অপচয় কর না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সূরা আরাফ, আয়াত নং ৩১)৷খাদ্যদ্রব্য সর্বদা ঢেকে রাখা ও কিছু পান করার সময় তাতে ফুঁ দেয়া নিষেধ করা হয়েছে। কারণ এতে রোগ-ব্যাধি সৃষ্টি হতে পারে। অন্য হাদিসে আছে, ‘খবরদার! তোমরা পানিতে ফুঁ দিয়ো না।’ (তিরমিযি শরিফ)

তাছাড়া কেউ যদি মেসওয়াক,অজু,গোসল,পোশাক-আশাক, বাসস্থান ইত্যাদির ক্ষেত্রে ইসলামি নির্দেশনা পালনে সচেতন হয়,তাহলে সে অপরিচ্ছন্নতাজনিত রোগব্যাধি থেকে নিরাপদ থাকতে পারবে।

হাঁচি ও হাই তুলার ব্যাপারে ইসলাম কেমন শিষ্টাচার প্রদর্শন করে দেখুন ৷হাঁচি দেয়ার সময় হাত বা রুমাল দ্বারা মুখের উপর ধরে রাখবে যাতে শব্দ কম হয় এবং মুখ ও নাকের ময়লা কারও গায়ে ছুটে গিয়ে না লাগে৷ তেমনি হাই আসলে প্রথমে তা ঠেকাতে চেষ্টা করবে ৷ নিরুপায় হলে হাত দ্বারা মুখ ডেকে নিবে যাতে অপরের কোন ক্ষতি না হয়৷

রাসুল সা.ইরশাদ করেন তোমাদের কারো হাই আসলে, তখন সে যেন নিজেরর হাত দ্বারা মুখ বন্ধ রাখে ৷নতুবা শয়তান তার মুখের ভিতরে চলে যায় ৷(মুসলিম -হাঃনং—২৯৯৫)

সর্বশেষ, মহামারীর ব্যাপারেও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুস্পষ্ট করে বলেছেন, ‘যখন কোনো এলাকায় মহামারি ছড়িয়ে পড়ে তখন যদি তোমরা সেখানে থাকো তাহলে সেখান থেকে বের হবে না। আর যদি তোমরা বাইরে থাকো তাহলে তোমরা সেই আক্রান্ত এলাকায় যাবে না।’ (বুখারি ও মুসলিম) ইহাও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সুচিন্তিত সচেতনতা ও সংক্রমণ প্রতিরোধে ফক্স ৷

মোদ্দাকথা,কেউ যদি স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ইসলামের নির্দেশনা মেনে চলে তাহলে সেটা হবে তার জন্য এক ধরনের সচেতনতা প্রদর্শন, এবং চিকিৎসা শাস্ত্রের ভাষায় স্বাস্থ্যবিধি মান্য করা৷ কারণ রোগমুক্ত স্বাস্থ্য গড়তে এসব নির্দেশনা যথাযথভাবে মানা ই হলো স্বাস্থ্য সচেতনতা। আমাদের উচিত প্রকৃত মুসলিম হিসবে ইসলাম প্রদত্ত স্বাস্থ্য নীতি মেনে সুন্দর জীবন যাপনে একজন সচেতন নাগরিক হওয়া ৷আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ ও জ্ঞান দান করুন।

লেখক: শিক্ষক, ঢাকাদক্ষিণ মাদ্রাসা গোলাপগঞ্জ, সিলেট।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়