শিরোনাম
◈ ঝালকাঠিতে ট্রাকচাপায় নিহতদের ৬ জন একই পরিবারের ◈ গাজীপুরের টঙ্গি বাজারে আলুর গুদামে আগুন ◈ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনোয়ারুল হক মারা গেছেন ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শনিবার ঢাকা আসছেন ◈ দুই এক পশলা বৃষ্টি হলেও তাপদাহ আরো তীব্র হতে পারে  ◈ এথেন্স সম্মেলন: দায়িত্বশীল ও টেকসই সমুদ্র ব্যবস্থাপনায় সম্মিলিত প্রয়াসের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ◈ কেএনএফ চাইলে আবারও আলোচনায় বসার সুযোগ দেওয়া হবে: র‌্যাবের ডিজি ◈ ওবায়দুল কাদেরের হৃদয় দুর্বল, তাই বেশি অবান্তর কথা বলেন: রিজভী ◈ মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী ◈ বাংলাদেশ সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে: অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত : ০৯ জানুয়ারী, ২০২১, ০৬:০৯ সকাল
আপডেট : ০৯ জানুয়ারী, ২০২১, ০৬:০৯ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

যে দম্পতির জীবনগল্প দেখেন লাখো মানুষ

ফেসবুক প্রোফাইলে যেমন ‘মিউচুয়াল ফ্রেন্ড’ থাকে, তেমনই এক বন্ধুর মাধ্যমে মারিয়া ও শেহ্ওয়ার হোসেইনের পরিচয়। বছর তিনেকের বেশি তো হলোই। তবে কে কাকে আগে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছেন, তার মীমাংসা তাঁরা আজও করতে পারেননি। ইউটিউবে তাঁদের ভিডিওগুলো যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা জানেন, এ নিয়ে প্রায়ই দুজনের কপট লড়াই চলে। তা চলুক। সেটাও তো তাঁদের সম্পর্কের রসায়নেরই অংশ। আর ইউটিউব ও ফেসবুকে এই রসায়নই বোধ হয় ভক্তরা সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন।

সম্পর্কের কথা যখন এলই, মারিয়া আর শেহ্ওয়ারকে আমরা ইউটিউবে যেমন দেখি, তাঁরা কি আসলে তেমনই? মারিয়ার ভাষ্য, ‘ইউটিউব আমাদের সম্পর্কের ভার্চ্যুয়াল দরজামাত্র। আপনারা যেমন দেখেন, আমরা ঠিক তেমনই। একে-অপরকে পাওয়া আমাদের সৌভাগ্যই বলতে হবে।’ শেহ্ওয়ার সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘ক্যামেরার সামনে আমরা অকৃত্রিম বলেই হয়তো মানুষ আমাদের সাদরে গ্রহণ করেছে।’

শেহ্ওয়ার অ্যান্ড মারিয়া। ইউটিউব ও ফেসবুকে তাঁরা এভাবেই পরিচিত। শেহ্ওয়ারের জন্ম ও বেড়ে ওঠা বাংলাদেশেই। মারিয়ার জন্ম রোমানিয়ায়। তবে বাংলা ভাষাটা বেশ রপ্ত করেছেন মারিয়া। গত বছর ঢাকায় তাঁরা বিয়ে করেছেন। এখন যুক্তরাজ্যের লন্ডনে তাঁদের সংসার। করোনার দিনগুলোর সিংহভাগ ঘরে কাটিয়েছেন, নিজেদের জীবনযাপনের ভিডিও দিয়েছেন ইউটিউব ও ফেসবুক পেজে। আর এভাবেই সুদূর বিলেত থেকে পৌঁছে গেছেন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা বাংলাভাষীদের কাছে।

যে দম্পতির জীবনগল্প দেখেন লাখো মানুষ

বাংলার প্রতি ভালোবাসা

মারিয়া ও শেহ্ওয়ারের ভিডিওগুলোর একটি উল্লেখযোগ্য, কিংবা বলা যেতে পারে, আকর্ষণীয় দিক হলো মারিয়ার বলা চমৎকার বাংলা। বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ভাষা ভালো লাগে বলে জানিয়েছেন মারিয়া। বাংলাদেশ ও রোমানিয়ার মধ্যে অনেক মিলও খুঁজে পান তিনি। তা ছাড়া দুটি দেশের মানুষই পরিবারকে অগ্রাধিকার দেয়, সেটাও ভালো লাগে তাঁর।

মারিয়া বাংলা শিখেছেন নিজে নিজেই। নতুন ভাষা শেখার আগ্রহ থেকেই বাংলায় বেশি ব্যবহৃত হয়, এমন শব্দ ও বাক্য শিখতে শুরু করেন তিনি। এরপর যত বেশি বাংলাদেশির সঙ্গে মিশেছেন, যত বাংলা শুনেছেন, তত বুঝেছেন। মারিয়ার ভাষায়, ‘বাংলা অনেক বেশি মিষ্টি।’

খাবারের মীমাংসা টেবিলে

ভাষার বাধা না হয় দূর হলো। তবে খাবার? এক টেবিলে কি দুই দেশের খাবার পরিবেশিত হয়? ব্যাপারটা ঠিক তেমন নয়। কারণ, তাঁরা দুজনই নতুন খাবার চেখে দেখতে ভালোবাসেন। মারিয়া অবশ্য শর্ত জুড়ে দিয়েছেন, বেশি ঝাল হওয়া চলবে না। সাফ জবাব। আর শেহ্ওয়ারের যখন খুব দেশি খাবার খেতে মন চায়, মারিয়াকে সঙ্গে নিয়ে মায়ের কাছে চলে যান। তা ছাড়া পূর্ব লন্ডনে বাঙালি রেস্তোরাঁর সংখ্যা মোটেই কম নয় বলেও জানালেন।

শেহ্‌ওয়ার হোসেইন ও মারিয়া হোসেইন

শেহ্‌ওয়ার হোসেইন ও মারিয়া হোসেইন

গন্তব্য এবার পর্তুগাল

দুজনই ভ্রমণপোকা। তাঁদের ভিডিও দেখলেই বোঝা যায়। একসঙ্গে অনেক দেশ ঘুরেছেন বলেও জানালেন ই–মেইলে। একসঙ্গে গিয়েছেন, এমন গন্তব্যগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পছন্দের কোনটি? ইতালির ভেনিস, মারিয়া বললেন। আর শেহ্ওয়ারে কাছে গ্রিসের সান্তোরিনি স্মরণীয় হয়ে আছে। করোনাকাল পেরোলে তাঁরা যেতে চান পর্তুগাল।

প্রশ্ন রাখি, করোনাকালের দিন কেমন কাটছে? দুজনই ঘরে থেকে কাজ করছেন বলে জানালেন। যখন কাজ থাকে না, গল্প করেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যাচ্ছে, নেটফ্লিক্স দেখছেন, খাবার তৈরি আর খেতে খেতে চলছে আড্ডা। এই ঘরে থাকা থেকেই গত বছর জুলাইয়ে তাঁদের ইউটিউব চ্যানেলটি চালু। এরপর ফেসবুকের ভিডিও দেওয়া শুরু করেন। ফেসবুক তাঁদের একটি ভিডিও ৩৬ লাখবারের বেশি দেখা হয়েছে।

যা অজানা

খুব আগ্রহ নিয়ে লিখলাম, আপনাদের ভক্তরা জানে না, এমন কিছু জানাতে চাই। বলুন কী লিখব? শেহ্ওয়ার বললেন, ‘মারিয়া কিন্তু পাঁচটি ভাষা জানে। আরেকটি ব্যাপার, যদিও ক্রেডিটটা আমিই পাই, তবে সত্য হলো, মারিয়া কিন্তু নিজে নিজেই বাংলা শিখেছে।’ আর নিজের সম্পর্কে? ‘আমি আগে এসেক্স প্রিমিয়ার লিগে ক্রিকেট খেলতাম। স্কুলের ক্রিকেট ও ফুটবল দলের ক্যাপ্টেন ছিলাম।’

মারিয়ার জন্ম রোমানিয়ার প্লয়েশতি শহরে। সেখানেই বড় হয়েছেন। ২০১৩ সাল থেকে বছর দুয়েক ইরাকের কুর্দিস্তানে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করেছেন। লন্ডনে আসেন ২০১৫ সালে। এখন পেশায় তিনি স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা উপদেষ্টা। আর শেহ্ওয়ারের কাজ মানবসম্পদ নিয়ে। ২০০৫ সাল থেকে আছেন লন্ডনে। জন্ম ঢাকায়। বাবা সৈয়দ এহ্‌মার হোসাইনের সেনাবাহিনীর চাকরির সুবাদে ঢাকা, কুমিল্লা, যশোর, বগুড়া, সিলেটসহ দেশের নানা প্রান্তে শৈশব-কৈশোর কেটেছে শেহ্ওয়ারের। তিনি বলেন, ‘হয়তো সে থেকেই ভ্রমণ মাথায় ঢুকে গেছে। শৈশবে প্রতি শুক্রবার সকালে বাবা আমাদের জন্য হাজির বিরিয়ানি আনতেন। সেটাই আমার মধুরতম স্মৃতি। বাবা আমার শৈশবের নায়ক। সব সময় আমি তাঁর মতো হতে চেয়েছি। এখন মা আমার সবকিছু। একসময় তিনি বাংলাদেশ বেতারে সংবাদ পাঠ করতেন। এখন ঘরে সবাইকে আগলে রেখেছেন। আমার তিন সহোদরের সবাই আমার চেয়ে ছোট। যুক্তরাজ্যেই থাকে সবাই।’

নতুন একটা বছর শুরু হলো। মারিয়া ও শেহ্ওয়ারের নতুন বছরের সংকল্প কী? মারিয়া ও শেহ্ওয়ারও সে অপেক্ষায় আছেন বাংলাদেশে আসবেন বলে। ইউটিউবে তাঁদের চ্যানেল যখন এক লাখ সাবস্ক্রাইবারের মাইলফলক পেরিয়েছিল, এক শিশুর ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়েছিলেন তাঁরা। সে শিশুর সঙ্গে দেখা করতে চান। সে সঙ্গে বাংলাদেশ নিয়ে অনেক ভিডিও বানাবেন বলে জানালেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়