রাশিদ রিয়াজ : সৌদি আরবের কাছে স্মার্ট বোমা ছাড়া আরও সরঞ্জাম বিক্রির কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার পেন্টাগন এ কথা জানিয়ে বলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ক্ষমতার মেয়াদ এখন প্রায় শেষ। সব মিলে প্রায় ২১ দিন তিনি ক্ষমতায় আছেন। এ সময়ে এই অস্ত্র বিক্রি অনুমোদন দেয়া হলো। তবে সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত জো বাইডেন। পেন্টাগন আরো জানিয়েছে কুয়েতের কাছে আরো ৪.২ বিলিয়ন ডলার অস্ত্র বিক্রি অনুমোদনের কথা জানিয়েছে। কুয়েতের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে এ্যাপাচি হেলিকপ্টার ও প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা। এ্যাপাচি হেলিকপ্টারের জন্যে নেয়া হচ্ছে ৪ বিলিয়ন ডলার এবং ২’শ মিলিয়ন ডলার নেয়া হচ্ছে যন্ত্রাংশের জনে। বাকি অর্থ নেয়া হবে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা উন্নত করতে। রয়টার্স/ডেইলি সাবা
বাইডেন চান ইয়েমেনে যুদ্ধ বন্ধ হোক। ওই যুদ্ধের কারণে বিশ্বে ভয়াবহ এক মানবিক সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। তাই এই যুদ্ধ বন্ধে রিয়াদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে বাইডেন সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রের সবচেয়ে বড় ক্রেতা সৌদি আরব। এই অস্ত্র বিক্রির প্যাকেজের মধ্যে রয়েছে ৩০০০ জিবিইউ-৩৯ স্মল ডায়ামিটার বোম ১ (এসডিবি১), কন্টেইনার, সাপোর্ট সরঞ্জাম, খুচরা যন্ত্রাংশ ও প্রযুক্তিগত সমর্থন। বিবৃতিতে পেন্টাগন বলেছে, প্রস্তাবিত এই অস্ত্র বিক্রির ফলে সৌদি আরব বর্তমান ও ভবিষ্যত হুমকি মোকাবিলায় সক্ষম হবে। এতে আরো বলা হয়, এসডিবি-১ হলো অধিক কার্যকর। তবে কম ক্ষতিকারক বোমা। পেন্টাগনের ডিফেন্স সিকিউরিটি কো-অপারেশন এজেন্সি মঙ্গলবার কংগ্রেসে নোটিশ করেছে এই অস্ত্র বিক্রির বিষয়ে। যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের সদস্যরা ইয়েমেনে বেসামরিক লোকজনের প্রাণহানিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ বছরে তারা রিয়াদের কাছে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রি বন্ধ করতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অস্ত্র বিক্রি অনুমোদন করা সত্ত্বেও এ বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষর বা বোঝাপড়া হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করে বলা হয় নি। পেন্টাগন আরো জানায় সৌদি আরবের কাছে এসব অস্ত্র বিক্রির প্রধান ঠিকাদার হচ্ছে বোয়িং কোম্পানি।
দুদিন আগে আল-জাজিরার এক রিপোর্টে বলা হয় ট্রাম্প প্রশাসন সৌদি আরবের কাছে ৫’শ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির জন্যে চাপ সৃষ্টি করছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল তারচেয়ে অনেক বেশি বরং ২৯০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের অস্ত্র বিক্রি করল ট্রাম্প প্রশাসন। সৌদি আরবের সিনিয়র সাংবাদিক জামাল খাসোগজিকে হত্যা, দেশটিতে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি ও ইয়েমেনে সৌদি আগ্রাসনের কারণে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো রিয়াদের কাছে ওয়াশিংটনের অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করার জন্যে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু তাতে কোনো আমল দেয়নি ট্রাম্প প্রশাসন। ২০১৪ সালে ইয়েমেনে সৌদি সমর্থিত প্রেসিডেন্ট আব্দরাব্বু মনসুর হাদি পালিয়ে সৌদি আরব চলে গেলে হুথি বিদ্রোহীরা দেশটির বেশ কিছু অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে নেন।
এরপর সৌদি জোট সমর্থিত দেশ আমিরাত, মিসর, বাহরাইন ইয়েমেন যুদ্ধে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘ বলছে ইয়েমেনে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবসৃষ্ট বিপর্যয় চলছে। ২০১৫ সালে মার্কিন সেনারাও সৌদি জোটকে ইয়েমেন যুদ্ধে সাহায্য করে। গত বছর এধরনের সহায়তা থেকে মার্কিন সেনাদের বিরত রাখতে কংগ্রেসে একটি বিল উত্থাপন হলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাতে ভেটো দেন। জাতিসংঘ ইতিমধ্যে ইয়েমেনে দুর্ভিক্ষময় পরিস্থিতির জন্যে সতর্ক করেছে। সৌদি আরবের কাছে ফের মার্কিন অস্ত্র বিক্রির পর তা যে ইয়েমেন যুদ্ধে ব্যবহৃত হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।