সাদ্দাম হোসেন: [২] জ্ঞান, ধৈর্য্য, নিষ্ঠা, সততা আর অক্লান্ত প্রচেষ্টা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে যিনি হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে তাঁর শিক্ষা ও জ্ঞানের আলো অকাতরে বিলিয়েছেন দিয়েছেন। অবশেষে সেই শিক্ষককে কিনা জীবনের সায়াহ্নে এসে ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকানির্বাহ করতে হচ্ছে।
[৩] জাতির প্রধান চালিকাশক্তি এ শিক্ষকের নাম আব্দুস সালাম (৭০)। বয়সের ভারে অনেকটা নুয়ে পড়েছেন। পায়ের ব্যথায় স্বাভাবিক চলাফেরা করতে অক্ষম, হাঁটেন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।
[৪] প্রবীণ এ শিক্ষকের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলায়। তিনি ওই উপজেলার দারুসসালাম সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ। শিক্ষতার এ মহান পেশায় নিয়োজিত ছিলেন দীর্ঘ ২২ বছর।
[৫] শিক্ষক আব্দুস সালাম জানান, ১৯৯৮ সালে ধান বোঝায় ট্রাক্টর তার পায়ের উপর পড়ে যায়। বা ও ডান পায়ের মাংসপেশিতে অতিরিক্ত চাপ পড়ায় বা পায়ের টিস্যু ছিঁড়ে যাওয়ার কারণে তিনি দীর্ঘদিন চলাফেরা করতে অক্ষম হয়ে পড়েন। পরে বিভিন্ন ডাক্তার- কবিরাজ-হেকিম দেখালেও তারা খুব একটা সুস্থ করে তুলতে পারেননি তাকে। নিজের শারীরিক অক্ষমতার কথা বুঝতে পেরে সরে দাঁড়ান শিক্ষকতা পেশা থেকে। এ দিকে চিকিৎসার অর্থ জোগাড় করতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন তার পরিবার। এক সময় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে পারলেও অভাব-অনটনের মাঝে সংসারের চাকা যেন থমকে দাঁড়িয়েছে। দাম্পত্য জীবনের ১ছেলে ও ১মেয়েকে নিয়ে বিপাকে পড়েন তিনি। খেয়ে না খেয়ে কোনোভাবে দিনাতিপাত করেন। পরে বাধ্য হয়েই নেমে পড়েন ভিক্ষাবৃত্তিতে। লজ্জা আর অপমানে মুখ লুকাতে নিজ এলাকা ছেড়ে দূরে গিয়ে ভিক্ষা করেন তিনি।
[৬] সম্বল বলতে ৩শতক জমি ছিল, তা মসজিদের নামে লিখে দেন। অভাবের কারনে ছেলে- মেয়েকে পড়াশোনা করাতে পারেনি।
[৭] মাধ্যমিকের গণ্ডি না পেরুতে কাঠমিস্ত্রি কাজে লেগে যায় ছেলে। মেয়ের বিয়ের বয়স পেরিয়ে গেছে। কিন্তু খরচের কারনে বিয়ে দিতে পারছেন না বলে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে জানালেন এ শিক্ষক। রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত হয়ে এবং অসুস্থ্ ও বৃদ্ধ শরীর নিয়ে জীবনের এ শেষ সময়ে এসে আব্দুস সালামের মনে এই প্রশ্ন বারবার উঁকি দেয়, দীর্ঘ ২২বছর একটি প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ হয়ে কী পেলেন তিনি?। সম্পাদনা: হ্যাপি