রাহুল রাজ : [২] লক্ষ্য যখন ৮৯ রান। তখন যে কোন দলের জন্যই জয় তুলে নেওয়াটা খুব বেশি কঠিন কাজ না। কিন্তু চট্টগ্রাম যখন জয় নিজেদের করে মাঠ ছাড়ছে তখনও খেলার ৫৫ বল বাকি হাতে অবশিষ্ট ৯ উইকেট। আর এটা দেখেই বোঝা যায় মিরপুরের বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের চতুর্থ খেলায় চট্টহ্রামের পক্ষে ব্যাটসম্যানের কেমন তান্ডব চালিয়েছে। মূল কাজটা করে দিয়েছিলেন বোলাররা। বাকি শুধু ছিল ব্যাটসম্যানদের ম্যাচ শেষ করার দায়িত্ব, যা পালনে কোনো ভুল করেননি গাজী গ্রæপ চট্টগ্রামের দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান সৌম্য সরকার ও লিটন দাস।
[৩] তাদের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে শক্তিশালী বেক্সিমকো ঢাকার বিরুদ্ধে ৫৫ বল হাতে রেখে ৯ উইকেটের বড় ব্যবধানে জিতেছে চট্টগ্রাম।
[৪] নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামা বেক্সিমকো ঢাকা আগে ব্যাট করে চট্টগ্রামের বোলারদের তোপে অলআউট হয়েছে মাত্র ৮৮ রানে। তখনও তাদের ইনিংসের বাকি ছিল ২২টি বৈধ ডেলিভারি। অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম আউট হয়েছেন প্রথম বলে, সাব্বির রহমান ১০ বল খেলেও খুলতে পারেননি রানের খাতা। দুই অঙ্কে যেতে পারেননি ৮ ব্যাটসম্যান।
[৫] ব্যাটসম্যানদের এমন ভয়াবহ পারফরম্যান্সের দিনে বোলারদের তেমন কিছুই করার ছিল না। ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ঝুঁকিহীন ব্যাটিংয়ে সহজেই জয় নিশ্চিত করেন চট্টগ্রামের দুই ওপেনার লিটন দাস ও সৌম্য সরকার। ঢাকার বোলারদের কেউই তেমন বিপদে ফেলতে পারেননি এ দুই ওপেনারকে। সাবলীল ব্যাটিংয়েই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করেন সৌম্য ও লিটন।
দলের জয়ের জন্য যখন মাত্র ১০ রান বাকি, তখন নাসুম আহমেদের বোলিংয়ে বোল্ড হন লিটন। আউট হওয়ার আগে ৩ চার ও ১ ছয়ের মারে ৩৩ বলে করেন ৩৪ রান।
[৬] লিটন ফিরলেও ম্যাচ শেষ করেই ফেরেন সৌম্য। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে ৪টা চার ও ২ ছয়ের মারে ২৯ বলে ৪৪ রান করেন তিনি। দুই চারের মারে ৩ বলে ৮ রান নিয়ে অপরাজিত থাকেন মুমিনুল।
[৭] এর আগে ম্যাচটিতে টস জিতে আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন চট্টগ্রাম অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুন। তার সিদ্ধান্ত সঠিক প্রমাণ করতে একদমই সময় নেননি চট্টগ্রামের বোলাররা। ঢাকার ইনিংসে রানের খাতাই খুলতে পারেননি অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমসহ চার ব্যাটসম্যান। বাঁহাতি ওপেনার মোহাম্মদ নাইম শেখ পাল্টা আক্রমণ করলেও বাকিদের ব্যর্থতায় অল্পেই গুটিয়ে যায় ঢাকা।
[৮] টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই সাজঘরে ফিরে যান ঢাকার তরুণ ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম। বিশ্বজয়ী যুব দলে তার সতীর্থ পেসার শরীফুল ইসলামের বোলিংয়ে দ্বিতীয় ¯িøপে দাঁড়ানো সৌম্য সরকারের হাতে ক্যাচ তুলে দেন তানজিদ। আউট হওয়ার আগে করেন ৬ বলে ২ রান। এরপর ব্যর্থতার নতুন এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন সাব্বির রহমান।
[৯] উইকেটে এসে টানা নয়টি বল খেলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি মারকুটে তকমাধারী এ ব্যাটসম্যান। মুখোমুখি দশম বলে বড় শট খেলতে গিয়ে ধরা পড়েন শামসুর রহমান শুভর হাতে। এরপর সবাইকে চমকে দেন মুশফিকুর রহীম। নাহিদুল ইসলামের মুখোমুখি প্রথম বলেই খেলেন রিভার্স সুইপ, ধরা পড়ে যান স্লিপে দাঁড়ানো সৌম্যর হাতে।
মাত্র ২১ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে তখন কঠিন চাপে ঢাকা। চতুর্থ উইকেট জুটিতে ৪৪ রান যোগ করেন ওপেনার নাইম শেখ ও আকবর আলি। চাপের মুখে পাল্টা আক্রমণ করে মাত্র ২৩ বলে ৪০ রান করেন নাইম। ইনিংসের নবম ওভারের শেষ বলে আউট হন তিনি। মারমুখী এ ইনিংসটিতে তিনটি করে চার ও ছক্কা হাঁকান বাঁহাতি এ ওপেনার।
[১০] নাইমের আগেই দলীয় ৬৫ রানের মাথায় ব্যক্তিগত ১৫ রানে আউট হয়ে যান আকবরও। এরপর আর ঢাকার ব্যাটিংয়ের বেশি কিছু বাকি ছিল না। মুক্তার আলি রয়েসয়ে খেলে পুরো ইনিংস শেষ ওভার সম্ভাবনা জাগালেও, অপরপ্রান্ত থেকে সহায়তা না পাওয়ায় ১৬.২ ওভারেই অলআউট হয়ে যায় ঢাকা। দলের তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে দুই অঙ্কে যাওয়া মুক্তার করেন ১২ রান।
[১১] চট্টগ্রামের পক্ষে বল হাতে ২টি করে উইকেট নেন মোস্তাফিজুর রহমান, শরীফুল ইসলাম, মোসাদ্দেক হোসেন ও তাইজুল ইসলাম। এছাড়া অন্য দুই বোলার সৌম্য সরকার ও নাহিদুল ইসলামের ঝুলিতে যায় ১টি করে উইকেট। ম্যাচ সেরা : মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত