আমিনুল ইসলাম : ছেলেটা ফিরবে তো, আচ্ছা ছেলেটা কি বেঁচে আছে? আর্মেনিয়া থেকে আসা ছেলেটা আমার এখানকার ছাত্র। কতো হবে বয়স? ২৫-২৮ হবে হয়তো। যাবার আগে দেখা করে গিয়েছিলো। বলেছিলো দেশের জন্য যুদ্ধে যাচ্ছি। বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই আবার দেখা হবে। আমি খুব অবাক হয়ে তাকে প্রশ্ন করেছি। ইউরোপের এই আলো ঝলমলে জীবন ছেড়ে তুমি নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও কেন যুদ্ধে যাচ্ছো? নিজ দেশের জন্য।
আমরা সংখ্যায় অনেক কম। আমার দেশের এখন আমাকে প্রয়োজন। ইউনিভার্সিটি থেকে বোধকরি বিশেষ শিক্ষা ছুটি পেয়েছিলো। যাতে যুদ্ধ শেষে ফিরে এসে আবার পড়তে পারে। নগরনো কারাবাখ নিয়ে আর্মেনিয়া-আজারবাইজানের মাঝে গত প্রায় দেড় মাস ধরে যুদ্ধ চলছে। এই যুদ্ধে খুব কম জনসংখ্যার দেশ আর্মেনিয়ার শত শত প্রবাসী জনগণ ইউরোপ-আমেরিকা থেকে অংশ নিয়েছে। আমার ওই ছাত্রও এদের একজন। সপ্তাহ খানেক আগে জানতে পেরেছি আর্মেনিয়া এই যুদ্ধে পুরোপুরি ভাবে পরাজিত হয়েছে। আজারবাইজানকে কারাবাখের অনেকটুকু এলাকা ছেড়ে দিতে হবে তাদের।
যুদ্ধে কে জয়ী হলো, না হলো এই নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যাথা নেই। আমি সপ্তাহ খানেক ধরে প্রতিদিন মেইল চেক করি, ছেলেটা মেইল দিয়েছে কিনা। শেষ যে দিন তার সঙ্গে কথা হয়েছিলো, তার চোখে আমি স্বদেশ প্রেমের যে ছবি দেখেছি, সেটা বোধকরি ব্যাখ্যা করা সম্ভব না। যাবার আগে তাকে বলেছিলাম। যুদ্ধ শেষ হলে আমাকে একটা মেইল করো। ছেলেটা কথা দিয়েছে, সে আমাকে মেইল করবে। আচ্ছা ছেলেটা বেঁচে আছে তো?
এই ছেলেটার কথা মনে হচ্ছে আর বার বার একাত্তরে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের কথা মনে হচ্ছে। যে বাবা-মা যুদ্ধে যাওয়া তাদের সন্তানদের অপেক্ষায় ছিলো, তাদের কথা মনে হচ্ছে। এ যে এক অনন্ত অপেক্ষা। পৃথিবী থেকে সকল রকম যুদ্ধ বিদায় নিক। ভালো-খারাপ, সে যেমনই হোক মানুষগুলো বেঁচে থাকুক।