ফিরে দেখা, ১৬ নভেম্বর ১৯৭২
শহীদদের স্মৃতি আমাদের অনুপ্রেরণা জোগায়: বঙ্গবন্ধু
উদিসা ইসলাম : বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন, আজ পড়ুন ‘আমাদের নতুন সময়’ ওই বছরের ১৬ নভেম্বরের ঘটনা। শহীদের অবদান আমাদের যাত্রাপথে আলোর দিশারী। দেশের স্বাধীনতার বেদিমূলে আত্মদানকারী শহীদদের চিরন্তন অনুপ্রেরণা সূত্র হিসেবে আমাদের কাছে চির জাগরূক হয়ে থাকবে। বিখ্যাত চিত্রশিল্পী নুরুল হকের একক চিত্রপ্রদর্শনী অনুষ্ঠান উপলক্ষে এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক শাখা বাংলাদেশ আর্টস কাউন্সিল মিলনায়তনে এক প্রদর্শনীর আয়োজন করে।
তথ্যমন্ত্রী মিজানুর রহমান চৌধুরী ২০ নভেম্বর প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন। প্রদর্শনীর সাফল্য কামনা করে বঙ্গবন্ধু বলেন, বাঙালিরা শহীদদের নিকট চিরকৃতজ্ঞ থাকবে। শহীদদের স্মৃতি আমাদের অনুপ্রেরণা জোগায় এবং সারা বিশ্বের জনগণকে মুক্তির পথ দেখাবে। নতুন বেতন স্কেল আসছে
১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের দিন জাতীয় দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি বেতন হার ঘোষণা করতে পারেন বলে পত্রিকার খবরে প্রকাশ করা হয়। এই দিনে পত্রিকার খবরে উল্লেখ করা হয় যে সরকার কর্তৃক গঠিত জাতীয় বেতন কমিশন গঠনের কাজ প্রায় শেষ করে নিয়েছে। বিশ্বস্ত সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়, জাতীয় বেতন কমিশন কর্তৃক উপস্থাপিত বেতন কাঠামো অনুযায়ী সাতটি স্কেল থাকবে।
উল্লেখ্য, কিছু দিন আগে প্রধানমন্ত্রী বক্তৃতাকালে বলেন, বেতন হারের সংখ্যা কমিয়ে সাতটি করা হবে। বর্তমানে সে সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। এছাড়া আরও ৭৪টি নির্ধারিত সর্বসাকুল্যে বেতনের ব্যবস্থা রয়েছে। এমন অনেক নজির রয়েছে যে ব্যক্তিবিশেষের চাহিদা পূরণের জন্য পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ নতুন নতুন স্কেল প্রবর্তন করেছে। রায়েরবাজারে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, মিরপুরে স্মৃতিফলক মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রস্তাবিত স্মৃতিফলক স্থাপন স্থান হিসেবে নির্বাচন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৪ ডিসেম্বর এই ফলক উদ্বোধন করবেন বলে খবরে বলা হয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আত্মসমর্পণের পূর্বে ঢাকায় পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের আলবদর আলশামসের হাতে যেসব বুদ্ধিজীবী শহীদ হয়েছিলেন, স্মৃতিফলকে তাদের নাম লেখা থাকবে। এর আগে রায়েরবাজারে বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। সুইডেনের সমর্থন থাকবে সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টার উইকম্যান বলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের প্রতি তাদের সমর্থন অব্যাহত থাকবে। এই দিনে তিনি দুদিনের সফরে বাংলাদেশে এসে গণভবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
এ সময় তিনি বঙ্গবন্ধুকে তার দেশের প্রধানমন্ত্রীর বাণী পৌঁছে দেন। কলকাতা থেকে ঢাকা আগমনের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশের প্রতি তার দেশবাসীর সমর্থন রয়েছে এবং সমর্থন অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশের জনগণের প্রতি যে সমর্থন ও ভ্রাতৃত্বমূলক মনোভাব রয়েছে তার ফলে সুইডেনের পার্লামেন্টে বাংলাদেশ সংক্রান্ত প্রশ্ন উত্থাপন করতে তাদের কোনো অসুবিধা মোকাবিলা করতে হয় না।
উপমহাদেশে বিশ্বের শক্তিদ্বন্দ্ব চলবে না বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ এইদিনে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেন, উপমহাদেশের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক শক্তিদ্বন্দ্বের অনুপ্রবেশের আমরা তীব্র বিরোধিতা করি। অতীতের ইতিহাস উল্লেখ করে তিনি বলেন, অতীতে উপমহাদেশের ব্যাপারে বাইরের প্রভাব যথেষ্ট উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে এবং উপমহাদেশের এক প্রতিবেশীকে অপর প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টেনের সম্মানার্থে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ভাষণদানকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ এসব কথা বলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ বলেন, ভারতীয় উপমহাদেশে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ একান্ত আগ্রহী। চারটি বিদেশি কোম্পানি এদেশে ওষুধ তৈরি করবে সরকার বাংলাদেশে ওষুধ প্রস্তুত করার জন্য চারটি বিদেশি কোম্পানিকে লাইসেন্স মঞ্জুর করেছে। বাংলাদেশে ওষুধের বিশেষ করে জীবন রক্ষাকারী ওষুধের অভাব পূরণের জন্য সরকার এই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। কোম্পানিগুলো আপাতত বাংলাদেশের ওষুধ প্রস্তুতকারী বিভিন্ন কোম্পানির যেসব কারখানা রয়েছে সেখানে নিজেদের ওষুধ তৈরি করবে।