শিরোনাম
◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও

প্রকাশিত : ১২ নভেম্বর, ২০২০, ০৮:২৮ সকাল
আপডেট : ১২ নভেম্বর, ২০২০, ০৮:২৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১]নিরাময় কেন্দ্রের প্রধান চিকিৎসা গণপিটুনি! [২]রোগী পেটাতে ভাড়া করা হয় বাউন্সার

নিউজ ডেস্ক : [৩]অপচিকিৎসার নামে নৈরাজ্য চলছে মাদকাসক্ত রোগীদের সুস্থ করে তোলার নিরাময় কেন্দ্রগুলোতে । বেশির ভাগ নিরাময় কেন্দ্রে রোগী পেটানো যেন নিয়মিত স্বাভাবিক ঘটনা। রিমান্ডের আসামির চেয়েও ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হয় তাদের ওপর। এমনকি নির্যাতন চালানোর জন্য মারধরে বিশেষ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মী বা বাউন্সার নিয়োগ দেয় অনেক নিরাময় কেন্দ্রগুলো। মানসিক হাসপাতালগুলোয় অলিখিতভাবে একই ব্যবস্থা আছে, যা অমানবিক তো বটেই, অবশ্যই বেআইনি।

[৪]খোদ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মাঠপর্যায়ের অনুসন্ধানে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র চালাতে হলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের লাইসেন্স বাধ্যতামূলক। কিন্তু রাজধানীতেই অসংখ্য প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স ছাড়াই নিরাময় কেন্দ্র চালাচ্ছে। আর যারা লাইসেন্স নিয়েছেন, তারাও নিয়মনীতির পরোয়া করেন না।

[৫]প্রসঙ্গত, রাজধানীর আদাবরে মাইন্ড এইড নামের মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে সোমবার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আনিসুল করিমের নির্মম মৃত্যুর পর দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের নানা অনিয়ম।

[৬]তবে সচেতন মহলের অনেকের প্রশ্ন- সবার জ্ঞাতসারেই তো এতদিন এসব বেআইনি কর্মকাণ্ড চলে আসছিল। তাহলে যাদের এ বিষয়গুলো দেখার কথা, তারা কী করেছেন। তারাও তাদের দায় এড়াতে পারবেন না। এ বিষয়ে প্রত্যেকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত হওয়া জরুরি।

সূত্র জানায়, রাজধানীতে বেসরকারি লাইসেন্সপ্রাপ্ত নিরাময় কেন্দ্রের সংখ্যা ১০৩টি। লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করছে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা আরও প্রায় ২০০। সারা দেশে লাইসেন্সপ্রাপ্ত এবং লাইসেন্সবিহীন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অন্তত দেড় হাজার। এই বিশাল সংখ্যক নিরাময় কেন্দ্রের মধ্যে হাতেগোনা ৪/৫টি প্রতিষ্ঠান মানসম্পন্ন। বাকিরা নিরাময় কেন্দ্রের সাইনবোর্ডে ভিন্ন রকমের ব্যবসা খুলে বসেছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নেশার ঘোরে মাদকাসক্তরা অনেক সময় পশুর মতো আচরণ করে। কিন্তু বেশির ভাগ নিরাময় কেন্দ্রে উগ্র আচরণের সময় রোগীদের সামাল দেয়ার সক্ষমতা থাকে না। ফলে তারাও রোগীর সঙ্গে উগ্র এবং পশুর মতো আচরণ করে। অমানুষিকভাবে পিটিয়ে রোগীকে শান্ত করার নির্মম পথ বেছে নেয়। ভয়ানক নির্যাতনের কারণে রোগীর মধ্যে প্রচণ্ড ট্রমা তৈরি হয়। নেশার জগৎ থেকে বের হওয়ার জন্য রোগী তখন মনোবল হারিয়ে ফেলে। ধীরে ধীরে সে মানসিক রোগীতে পরিণত হয়।

সূত্র বলছে, মাঠপর্যায়ে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রগুলোর ওপর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের নজরদারি নেই বললেই চলে। নারকোটিক্স থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত সব প্রতিষ্ঠানের দেখভালের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট সার্কেল ইন্সপেক্টর হলেও নিরাময় কেন্দ্র দেখভাল করে থাকেন সহকারী পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তারা।

কিন্তু অধিদফতরে সহকারী পরিচালক পদ মর্যাদার কর্মকর্তার সংখ্যা হাতে গোনা কয়েকজন। ফলে নিরাময় কেন্দ্রগুলোর পর্যবেক্ষণ সহকারী পরিচালকরাও করেন না। আবার সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব না থাকায় সার্কেল ইন্সপেক্টররাও নিরাময় কেন্দ্রমুখী হন না। ফলে যা হওয়ার তা-ই হচ্ছে। একেবারে পর্দার আড়ালে থেকে গেছে ভয়াবহ এমন একটি দিক, যা আমাদের সবার চোখের সামনে ঘটছে।

সূত্র বলছে, রাজধানীর উত্তরা, যাত্রাবাড়ী, মোহাম্মদপুর এবং খিলগাঁও এলাকায় নিরাময় কেন্দ্রের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এসব এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে অসংখ্য নিরাময় কেন্দ্র। কোনোটি লাইসেন্সপ্রাপ্ত, কোনোটি লাইসেন্স ছাড়াই বীরদর্পে চালিয়ে যাচ্ছে ব্যবসা।

একবার নিরাময় কেন্দ্র খুলতে পারলে দু’হাতে টাকা কামানোর দীর্ঘমেয়াদি পথ খুলে যায়। শুধু তা-ই নয়, অভিযোগ আছে-এসব নিরাময় কেন্দ্র ও মানসিক হাসপাতালগুলোয় রোগীর সঙ্গে স্বজনদের দেখা-সাক্ষাতে রয়েছে বিশেষ কড়াকড়ি। বিশেষ করে নারী রোগী হলে এ ধরনের বেরিয়ার তৈরি করা হয়। এ নিয়ে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ।

সূত্র জানায়, নিরাময় কেন্দ্রগুলোয় রোগীর ভর্তির পর প্রতিমাসে সর্বনিম্ন ২৫ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়। এর বাইরে আরও নানা কৌশলে সেবা ফির নামে অর্থ আদায় করা হয়। অসাধু নিরাময় কেন্দ্রগুলো রোগী ভর্তি করার পর আর ছাড়তে রাজি হয় না।

বছরের পর বছর রোগী আটকে রেখে চিকিৎসার নামে অর্থ আদায় করতে থাকে তারা। মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে চিকিৎসা করাতে গিয়ে অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়ে। অনেক মা-বাবা সন্তানকে সুস্থ করে তুলতে নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করলেও সুস্থ হওয়ার বদলে শেষ পর্যন্ত সে মানসিক রোগীতে পরিণত হয়।

সূত্র বলছে, নিরাময় কেন্দ্রের লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে নানা ধরনের অনিয়ম রয়েছে। যথাযথ যাচাই-বাছাই ছাড়াই ঘুষের বিনিময়ে যাকে-তাকে লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে। এছাড়া অজ্ঞাত কারণে অতীতে মাদকসেবী ছিলেন, (রিকভারি এডিক্ট) এমন ব্যক্তিদের নিরাময় কেন্দ্রের লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া হয়।

সারা দেশে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ৫ শতাধিক নিরাময় কেন্দ্রের মধ্যে ৮০ ভাগ লাইসেন্স পেয়েছেন রিকভারি এডিক্টরা। বাকি ২০ ভাগ লাইসেন্সও যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে দেয়া হয় নি। রাজনৈতিক তদবিরে মহল্লার মাস্তান বা প্রভাবশালীরা লাইসেন্স পান। ফলে নিরাময় কেন্দ্রের মাধ্যমে মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে সুস্থ করে সমাজের মূল ধারায় ফিরিয়ে দেয়ার মূল উদ্দেশ্য অর্জিত হচ্ছে না।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন শাখা থেকে জানা যায়, নিরাময় কেন্দ্রের লাইসেন্স পেতে অন্তত ১২টি শর্ত পূরণ করতে হয়। এর মধ্যে সার্বক্ষণিক একাধিক চিকিৎসক, নার্স, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, প্যাথলজি, পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা, সার্বক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্স ও চিত্তবিনোদন কেন্দ্র থাকা বাধ্যতামূলক।

কিন্তু বাস্তবে ৯৮ শতাংশ নিরাময় কেন্দ্র এসবের ধারে-কাছেও নেই। বছরের পর বছর অনিয়মের মধ্য দিয়ে চলে এলেও কেন্দ্রগুলোকে নিয়মের মধ্যে আনতে পারছে না মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। যুগান্তর

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়