শিরোনাম
◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ চলচ্চিত্র ও টিভি খাতে ভারতের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করলেই ব্যবস্থা: ইসি আলমগীর  ◈ নির্বাচনের মাঝেই ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শনিবার ঢাকা আসছেন ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ মুজিবনগর সরকারের ৪০০ টাকা মাসিক বেতনের কর্মচারি ছিলেন জিয়াউর রহমান: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২৯ অক্টোবর, ২০২০, ০৯:৪৯ সকাল
আপডেট : ২৯ অক্টোবর, ২০২০, ০৯:৪৯ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ঢাকার ১১৩ ওয়ার্ড দাপিয়ে বেড়াচ্ছে উঠতি অপরাধীরা

যায়যায়দিন: সম্প্রতি সরকারের শীর্ষমহলের নির্দেশে রাজধানী ঢাকার কিশোর ও তরুণ বয়সের উঠতি সন্ত্রাসী এবং অপরাধীদের তালিকা তৈরিতে মাঠে নেমেছে পুলিশ। প্রাথমিক পর্যায়ে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) ও ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চসহ (ডিবি) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) একাধিক ইউনিট পৃথকভাবে তথ্য সংগ্রহ করছে। পরে সংগৃহীত তথ্যাদি সমন্বয় করে ডাটাবেজ তৈরি করা হবে। তবে এ কর্মযজ্ঞের শুরুতেই মাঠে নেমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে।

তালিকা তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, তাদের কাছে বছরখানেক আগের যে তথ্য-উপাত্ত রয়েছে, তাতে ঢাকা মহানগর এলাকার উঠতি সন্ত্রাসীদের গ্রম্নপ ছিল ৫৩টি। এর মধ্যে ৩১টি ছিল সক্রিয়। অথচ বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের ১২৯ ওয়ার্ডের মধ্যে ১১৩ ওয়ার্ডে উঠতি অপরাধীদের প্রায় দেড়শ' গ্রম্নপ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। প্রতিটি গ্যাংয়ে নূ্যনতম ২০ থেকে ২৫ জন সদস্য রয়েছে। যাদের বেশির ভাগই বয়সে কিশোর ও তরুণ। এছাড়া উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো তথ্য হলো- তাদের নূ্যনতম ৩০ শতাংশ ইয়াবাসহ বিভিন্ন নেশায় আসক্ত। ইতোমধ্যে তাদের অনেকেই বিভিন্ন মাদকদ্রব্য কেনাবেচার সঙ্গেও জড়িয়ে পড়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, প্রাথমিক অনুসন্ধানে যে তথ্য পাওয়া গেছে তাতে ঢাকা মহানগরীর উত্তরা, পলস্নবী, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, লালবাগ, ওয়ারী, সবুজবাগ, রামপুরা, গুলশান, হাজারীবাগ, কাফরুল, যাত্রাবাড়ী ও কদমতলী এই ১৩টি থানা এলাকায় উঠতি সন্ত্রাসীদের তৎপরতা সবচেয়ে বেশি। সেখানে বর্তমানে মোট ৪১টি অপরাধী গ্রম্নপ রয়েছে। এদের মধ্যে কমপক্ষে ২৯টি গ্রম্নপ মাদক ব্যবসা, মোটরসাইকেল ছিনতাই ও ইভটিজিংয়ে সক্রিয়। তাদের অনেকের কাছে চাপাতি, চাকু, রামদাসহ বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র রয়েছে। প্রয়োজনে তারা 'বড় ভাইদের' কাছ থেকে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ধার নিয়ে শক্তি প্রদর্শনের মহড়াও দিয়ে থাকে।

কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শ না থাকলেও তারা শুধু নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য ক্ষমতাসীন দলের মিছিল-মিটিংসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে দলবলে যোগ দিচ্ছে। সুযোগ বুঝে রাজনৈতিক গডফাদাররা অনেক সময় তাদের রাজনৈতিক কর্মকান্ডের বাইরে চাঁদাবাজি, ভূমিদখল ও টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে ব্যবহার করছে।

রাজধানীর বিভিন্ন পাড়া-মহলস্না ঘুরে স্থানীয় লোকজন, জনপ্রতিনিধি ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উঠতি সন্ত্রাসীদের দলগুলোতে নিম্নবিত্তের পাশাপাশি মধ্য ও উচ্চবিত্ত পরিবারের কিশোররাও রয়েছে। করোনাকালে ওই দলগুলোতে নতুন করে বেকার হওয়া বিপুলসংখ্যক শ্রমজীবী কিশোর ও তরুণ যুক্ত হয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শ্রেফ আড্ডা দিতে গিয়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও এ অপরাধী দলে জড়িয়ে গেছে। এছাড়া অনেকে নিজেকে বাঁচাতে কোনো না কোনো দলে ভিড়েছে। পুরোপুরি সক্রিয় না হলেও তারা দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।

স্পেশাল ব্রাঞ্চের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যায়যায়দিনকে বলেন, ঢাকা মহানগরীতে যে বিপুলসংখ্যক উঠতি অপরাধী বেড়ে উঠেছে, এর অধিকাংশেরই ক্ষমতাসীন দলের কোনো না কোনো নেতার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে রয়েছে। এ কারণে তারা কোনো অপরাধ করে ধরা পড়লেই রাজনৈতিক গডফাদাররা তাদের মুক্ত করতে সামনে এসে দাঁড়াচ্ছেন। নানাভাবে সুপারিশ-তদবির করে তাদের ছাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, যা উঠতি অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণের পথে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গোয়েন্দা পুলিশে এই কর্মকর্তা জানান, অবাক হওয়ার মতো তথ্য হলো, স্কুল-কলেজে পড়ুয়া কিশোর-তরুণরা উঠতি সন্ত্রাসীদের গ্রম্নপে যোগ দিলেও অভিভাবকদের অনেকেরই সে খবর অজানা। এমনকি স্কুল-কলেজ কর্তৃপক্ষও তা জানে না। সেইসঙ্গে পুলিশের কাছেও উঠতি অপরাধী গ্রম্নপের ভয়াবহ বিস্তারের বিষয়টি ছিল অনেকটাই অজানা।

জনপ্রতিনিধিদের ভাষ্য, বর্তমানে উঠতি সন্ত্রাসী-অপরাধীদের তৎপরতা এতটাই বেড়েছে যে, ঘরের বাইরে বের হতে অনেকে অনিরাপদ বোধ করছেন। প্রতিটি পাড়া-মহলস্নার অলিগলির মোড়, চায়ের স্টল ও রাস্তাঘাটের বিভিন্ন স্পটে তারা রাতদিন পালাক্রমে আড্ডা দিচ্ছে। এছাড়া সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে তারা রেস্টুরেন্টপাড়া খ্যাত বিভিন্ন এলাকা ও বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে বেশি ভিড় করছে। সেখানে ইভটিজিং, দামি গাড়ির সঙ্গে নিজেদের মোটরসাইকেল ইচ্ছাকৃতভাবে ধাক্কা লাগিয়ে মোটা অঙ্কের ক্ষতিপূরণ আদায় ও মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া তাদের নৈমিত্তিক কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অপরাধ বিশেষজ্ঞরা জানান, এক সময় রাজনৈতিক গডফাদারদের কাছে টপটেররদের কদর থাকলেও বেশ আগেই সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। এমনকি অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরাও রাজনৈতিক নেতাদের কাছে আগের মতো তেমন পাত্তা পাচ্ছে না। এ অবস্থায় অনেকেই এ পথ থেকে সরে এসেছে। এছাড়া পুলিশের অব্যাহত তৎপরতার মুখে টপটেরররা বেশ আগেই দেশছাড়া। এ অবস্থায় তারা কেউ কেউ পাড়া-মহলস্নার উঠতি সন্ত্রাসীদের কাজে লাগিয়ে নিজ সাম্রাজ্য ধরে রাখার চেষ্টা করছে। বিদেশ থেকে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা তুলছে। এছাড়া দখলবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধেও উঠতি সন্ত্রাসীরা হাত পাকাচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে উঠতি অপরাধী গ্রম্নপগুলোর তালিকা তৈরি করে তাদের দ্রম্নত আইনের আওতায় আনা জরুরি বলে মনে করেন অপরাধ পর্যবেক্ষকরা।

এ প্রসঙ্গে ডিএমপি কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংস্থা থেকে এ ধরনের একটি তালিকা পাঠানো হয়েছে। সেখানে অনেকের নাম রয়েছে। ওই তালিকা ধরে আমরা প্রতিদিনই পাড়া-মহলস্নায় অভিযান চালাচ্ছি। অভিযানে আটককৃতদের নামে অপরাধমূলক কর্মকান্ড ঘটানোর প্রমাণ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি যেসব কিশোরের নামে অপরাধমূলক কর্মকান্ডের তথ্য নেই কিন্তু বখাটেপনার অভিযোগ রয়েছে তাদের অভিভাবকদের থানায় ডেকে সতর্ক করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, অভিযানের পাশাপাশি ডিএমপির প্রতিটি ক্রাইম ইউনিটকে উঠতি সন্ত্রাসীদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ তালিকা যাচাই-বাছাই করে আলাদা ডাটাবেজ তৈরি করা হবে। কোনো কর্মকর্তা যদি তথ্য সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয় তবে তাকে তদন্তকাজ থেকে বিরত রাখা হবে বলেও হুঁশিয়ার করেন তিনি।

একই সঙ্গে মাদক নির্মূলে মাদকসেবীদের তালিকা তৈরির নির্দেশনা দিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, মাদকসেবীদের চিহ্নিত করে পরিবারের সঙ্গে কথা বলে তাদের সংশোধনাগারে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এরপরও মাদকসেবীরা সংশোধন না হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঢাকা মহানগর পুলিশের এই শীর্ষ কর্মকর্তা মনে করেন, মাদকসেবীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে না পারলে মাদক নির্মূল যেমন করা যাবে না, তেমনি উঠতি সন্ত্রাসীদের লাগাম টানাও অসম্ভব।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলাম বলেন, কিশোররা আশপাশের বয়োজ্যেষ্ঠদের নানা অপরাধ করে ক্ষমতাবান হতে দেখছে। ফলে তাদের মধ্যে হিরো হওয়ার বাসনা জাগছে। তাই তারা গ্যাং গঠন করে নিজেকে ক্ষমতাবান করতে চায়।

মানবাধিকার কর্মী নূর খান বলেন, এখানে পরিবার ও সমাজের সঙ্গে রাষ্ট্রেরও দায় আছে। রাষ্ট্র ও সমাজে ঘুষ, দুর্নীতি থাকলে ভালো সমাজ আশা করা যায় না। যেখানে ন্যায় বিচার নেই, সেখানে কিশোরদের কাছে মূল্যবোধ ও ভালো আচরণ আশা করা অবান্তর।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়