শিরোনাম
◈ ভিত্তিহীন ও এআই-জেনারেটেড তথ্য নিয়ে বক্তব্য দেওয়ায় দুঃখ প্রকাশ রিজভীর ◈ রোকেয়া পদকজয়ীদের সংবর্ধনায় প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস, ওসমান হাদির ওপর হামলায় উদ্বেগ প্রকাশ পদকপ্রাপকদের ◈ আফগানিস্তানকে হারিয়ে যুব এশিয়া কাপে বাংলা‌দে‌শের সুন্দর সূচনা ◈ আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ না হই, দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে: তারেক রহমান ◈ ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন কে এই ফয়সাল? ◈ ওসমান হাদির হামলা নিয়ে ডিএমপি কমিশনারের নামে 'ভুয়া ফটোকার্ড' ছড়ানোর বিষয়ে সতর্কতা ◈ 'ফিরে এসো প্রিয় ওসমান হাদি': আসিফ আকবর ◈ ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন: ভোটের আট ভাগের এক ভাগ না পেলে জামানত বাজেয়াপ্ত, ইসির পরিপত্র জারি ◈ ওসমান হা‌দির চিকিৎসায় মে‌ডিকেল বোর্ড গঠন, সর্বশেষ যা জানা গেল ◈ তারেক রহমানের দেশে ফেরা ও নিরাপত্তা নিয়ে যা জানালেন সালাহউদ্দিন আহমদ

প্রকাশিত : ২৭ অক্টোবর, ২০২০, ১০:৩৪ দুপুর
আপডেট : ২৭ অক্টোবর, ২০২০, ১০:৩৪ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

তুষার আবদুল্লাহ: উৎসবের রঙ ভালোবাসা, আমি ধূসর উৎসব চাই না, চাই আমার উৎসব হোক সবার

তুষার আবদুল্লাহ: অবয়বপত্রে গোত্রের অভাব নেই। পেশাগত গোত্র ছাড়াও রকমারি উপলক্ষের এবং বন্ধুত্বের অজুত গোত্র আছে। প্রতিদিন কুড়িখানেক নেমন্তন্ন আসে, এসবে যুক্ত হবার। দুই একটিতে যোগ দিইনি এমন বলা যাবে না। কিন্তু সপ্তাহ না পেরোতেই অস্বস্তিতে পড়েছি। গোত্র যাদের নিয়ে বা যে প্রতিপাদ্যের, সেই বিষয়ে না গিয়ে, এখানে অপ্রাসঙ্গিক আলোচনাই বেশি হতে দেখি। কোনও কোনও আলোচনা বা মন্তব্যের লক্ষ্য হয়ে ওঠে ব্যক্তি বা বিশেষ গোষ্ঠী। তাই ওই ধরনের গোত্র থেকে সরে এসেছি সন্তর্পণে। পরে ডাকাডাকিতেও আর ফিরে যাইনি। এমনই এক গোত্রের সঙ্গে যুক্ত হই, বন্ধুত্বের আবদারে। বন্ধুত্বের কাঙালিপনা তো কমবেশি সবারই আছে। আমিও ব্যতিক্রম নই।

বন্ধুত্বের ভালোবাসার উষ্ণতা ভালোই জমে উঠছিল। হারিয়ে যাওয়া, ঝাপসা হয়ে আসা মুখগুলো আবারও সজীব সতেজ হয়ে ফিরে আসতে থাকে। দেড় কুড়ি বছরেও, মনের বয়স বাড়েনি কারও। সেই গোত্রেই শারদীয় দুর্গা পুজো উপলক্ষে লিখলাম, হয়ে যাক লাড্ডু উৎসব। নাড়ু উৎসবও বলা যেতো। কিন্তু কে বানাবে নাড়ু? গোত্রে আমাদের সনাতন ধর্মের বন্ধুরা একটু নিষ্ক্রিয় থাকায় তাদের কাছে আবদার করতে পারিনি। লাড্ডুতো কেনাই যাবে। কতো রকমের লাড্ডু পাওয়া যায়। নাড়ুও সহজলভ্য, কিন্তু বাহারি লাড্ডুর আয়োজন করতে ইচ্ছে হলো। ছোটবেলায় শারদীয়ার ষষ্ঠী থেকে দশমীতে সনাতন ধর্মীয় বন্ধু, প্রতিবেশী এবং শিক্ষকদের বাড়ি ঘুরে ঘুরে নাড়ু, লাড্ডু খেতাম। অন্যান্য পুজোতেও খেয়েছি। ওই স্মৃতিতে দেখলাম শুধু আমি না, অন্য বন্ধুরাও ফিরে যেতে চাইলো। আমি শৈশব, কৈশোরে ফিরে গিয়ে প্রস্তাব রাখলাম ইচ্ছা করলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে প্রতিমা দেখতে যেতে পারি আমরা। স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে লাড্ডু খাবো। এই প্রস্তাব রাখা মাত্র একজন বন্ধু জানালেন, প্রতিমা দেখার মধ্যে তিনি নেই। এই বলার মধ্যে এক প্রকার বিদ্রুপ ছিল। বিষয়টি আমাকে আহত করে। আমি ভাবতে থাকি আমার বন্ধু কি শৈশব-কৈশোরের স্মৃতিচ্যুত হলো?

শহরে, গ্রামে যেখানেই আমরা বড় হই না কেন, কোনও উৎসবই ব্যক্তিগতভাবে উদযাপিত হতে দেখিনি। শুধু ধর্মের নিজস্ব আচারটুকু ছাড়া বাকি সবটুকুই ছিল সবার। ঈদের দিন জামাত থেকে ফিরতে ফিরতেই বন্ধু, প্রতিবেশীদের দলে যোগ হতে থাকতো অন্য ধর্মের প্রিয়জনেরাও। বন্ধুদের বাড়ি বাড়ি যাওয়া, সিনেমা দেখা, বিনোদন কেন্দ্রে বেড়াতে যাওয়ার সময়ও ওরা যোগ দিতো। আসলে ওরা যে অন্য ধর্মের, তখনকার বিদ্যায়তন ও সামাজিক পরিবেশের কারণে সেই ভাবনাটিই আসতো না। একইভাবে পুজো, বড়দিন, বৌদ্ধ পূর্ণিমার দিনেও একই উৎসব চিত্র। আমরা, অর্থাৎ যারা মুসলমান, তাদের ছাড়া অপূর্ণ সেই উৎসবও। এখনো তাই। পূজা মণ্ডপে, বৌদ্ধ মন্দিরে, গির্জায় ওই ধর্মের লোকদের সঙ্গে মুসলমানদের ভিড়ও কিন্তু কম থাকে না। এই ভিড়, ওই ধর্মের প্রতি, ওই ধর্মের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা জানাতে। সামাজিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে কোনও ধর্মই এককভাবে অবস্থান করতে পারে না। বিশেষ করে কোনও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে। রাষ্ট্রের ধর্ম ইসলাম হলেও, অন্য ধর্মের সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্বও তখন আরও প্রবল হয় রাষ্ট্রের ওপর।

রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ, এবং তার নাগরিকেরা যে ওই অবস্থান থেকে সরে গেছে, এই অভিযোগ, অনুযোগের সুযোগ নেই। নিত্য শহর, গ্রাম ঘুরে আমি বেশ জানি, মানুষে মানুষে সম্প্রীতি কমেনি। গ্রামে সম্প্রীতির বন্ধন এখনও অটুট। জটিলতা বা সাম্প্রদায়িকতার মনরোগ আছে কিছু কিছু ব্যক্তির মাঝে। তারা হিন্দুকে বাড়িভাড়া দিতে চান না। চাকরি দিতে চান না। হিন্দুদের তাদের উৎসব আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাখেন। খ্রিস্টানদের বেলাতে, বৌদ্ধদের বেলাতেও যেমন এমনটা হয়, তেমনটা আবার হিন্দু অধ্যুষিত বা হিন্দু বাড়ির মালিকের ক্ষেত্রে মুসলমানদের বেলাতেও ঘটছে। সম্পত্তি দখলের সঙ্গে কোনও ধর্ম নয়, জড়িত রাজনৈতিক প্রভাব। রাজনীতি গ্রাম, শহরের মানুষকে বিচ্ছিন্ন করতে সাম্প্রদায়িকতার মন্ত্র কানে তুলে দিচ্ছে। রাজনীতির এই ষড়যন্ত্রকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। দিলে উৎসবের রঙ ‘ভালোবাসা’, ‘সম্প্রীতি’ ধূসর হতে থাকবে। আমি ধূসর উৎসব চাই না। চাই আমার উৎসব হোক সবার।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়