চঞ্চল চৌধুরী: আমি যতগুলো ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করেছি,তার মধ্যে অত্যধিক জনপ্রিয় একটি নাটক হলো ‘সাকিন সারিসুরি’।
নাটকটি বৃন্দাবন দাসের লেখা....
এরকম আরো অনেক অনেক দর্শক জনপ্রিয় নাটক বৃন্দাবন দা লিখেছেন।অধিকাংশ নাটকের নির্মাতা ছিলেন সালাউদ্দিন লাভলু।
কি অসাধারন স্ক্রীপ্ট,কি চমৎকার গল্প,কি অসাধারন সব চরিত্র ,কি অসাধারন সব ডায়লগ!!!!
এই নাটকের একটি বিখ্যাত চরিত্র ছিল ‘জাপান ডাক্তার’।
এত বছর পরেও দর্শকের কাছে সমান ভাবে জনপ্রিয় হয়ে আছে এই চরিত্র ও নাটকটি।
এখনও এই নাটকের সুবাদে,অনেক দর্শক আমাকে জাপান ডাক্তার বলেই ডাকে।
শুধু এপার বাংলা নয়,ওপার বাংলার দর্শকের কাছেও ‘সাকিন সারিসুরি’ নাটকটি সমান ভাবে জনপ্রিয়।
ফেসবুকের কল্যাণে প্রতিদিন সেটা বুঝতে পারি।
কি অসাধারন একটা টিম ওয়ার্ক ছিল!!!!
বৃন্দাবন দার লেখায় কি চমৎকার ভাবে সহজ সরল সত্য গ্রামীন জীবন ফুটে উঠেছে!!
এরকম অনেক গুলো নাটক তার সাক্ষী হয়ে আছে,
দর্শকরা তা খুব ভালো করেই জানেন।
সুস্থ্য ও নির্মল বিনোদনের পাশাপাশি কিছু সামাজিক বক্তব্য, বৃন্দাবন দার লেখা নাটক গুলোর প্রধান বৈশিষ্ট্য ও প্রাণ ।
আজ অনেক দিন পর নাটকটির কয়েকটা পর্ব দেখছিলাম।
‘জাপান ডাক্তার’ চরিত্র নিয়ে,ইরেশ যাকেরের উপস্থাপনায় একটা অনুষ্ঠানের রেকর্ডিং হলো।
চোখের সামনে অনেক স্মৃতি ভেসে উঠছিল।
সেই সাকিন সারিসুরি গ্রাম...
যে গ্রামে নাটকটির শ্যুটিং হয়েছিল।
গ্রামটির আসল নাম ‘চটের আগা’।
পুবাইলের সেই ছোট্ট একটা গ্রাম ‘চটের আগা’র সেই রাস্তা,ঘর বাড়ি,গাছপালা...সবকিছু আমাকে অতীতে নিয়ে গেল।
তখনও ঐ গ্রামে বিদ্যুতের আলো পৌছায়নি।বর্ষার সময় আমরা মাটির রাস্তায় কাঁদার মধ্যে,খালি পায়ে,হাঁটু পর্যন্ত কাপড় তুলে,প্রায়ই অনেকে আছাড় খেয়ে শ্যুটিং এর জন্য ঐ গ্রামে পৌঁছাতাম।
বন্যার সময় ঐ গ্রামের চারদিকে জল থৈ থৈ করতো।
আমরা তখন নৌকায় চড়ে সেখানে শ্যুটিং এ যেতাম।
আহারে চলে যাওয়া অতীত।
প্রতিটা দিনের শ্যুটিং ছিল এক একটা উৎসব।
আমি ,মোশারফ, আখম হাসান, খুশী, রওনক, শতাব্দী, মুনতাসির সাজু, খসরু, ছন্দা, সানু, সীমানা, শিখা, মিঠু, বরুন, দিলীপ, শিরীন আপা, হাকিম ভাই, মাসুম আজিজ ভাই, মধুদা, নাজমুল হুদা বাচ্চু ভাই, মহসিন ভাই, মামুন ভাই...আরো সবাই।
সেই একটি টিনের ঘরের মধ্যে দুইটা চকি পাতা,তার মধ্যেই গাঁদা গাঁদি করে সবাই বসে থাকা,শুয়ে থাকা....গল্প গুজব ,আড্ডা আর শ্যুটিং।
আর ফিরে পাবো না সেই দিন গুলি.....
আমাদের ভেতর থেকে অকালে হারিয়ে গেছে আমাদের বন্ধু দিলীপ চক্রবর্তী, চির বিদায় নিয়েছেন শ্রদ্ধেয় অভিনেতা নাজমুল হুদা বাচ্চু ভাই, গোলাম হাবিব মধুদা।
আজ নাটকটি দেখার সময় এঁদের জন্য বুকটা খাঁ খাঁ করে উঠলো......
সত্যিই....লাভলু ভাই পেরেছিলেন এতগুলো মানুষকে নিয়ে একটি পরিবার বানাতে।
সময় হয়তো অনেক বদলে গেছে,কিন্তু মায়া আর ভালোবাসা গুলো সবার জন্য জ্বল জ্বল করছে।
এই সম্পর্ক গুলো তৈরী হয়েছিল বলেই হয়তো,দর্শক ‘সাকিন সারিসুরি’র মত এরকম একটা নাটক দেখতে পেয়েছিল।
এখনও আমরা যারা বেঁচে আছি,ভালো কাজের জন্য,এই সম্পর্কটাই বেশী বোধ করি,
যা আজকের সময়ে দূষ্প্রাপ্য।
এখনও স্বপ্ন দেখি,এই সব আত্মিক সম্পর্ক আর সততার স্পর্শেই এগিয়ে যাবে আমাদের নাটক।
স্যালুট বৃন্দাবন দাস,স্যালুট সালাউদ্দিন লাভলু.....
আর কৃতজ্ঞতা আলী বশির ভাইকে।যিনি আমাদের এই নাটকের প্রযোজক ছিলেন।
আমরা মনে প্রানে চাই,
আবার বাংলা নাটকের সেই সোনালী দিন গুলো ফিরে আসুক।
সবার জন্য ভালোবাসা....
( ছবি : জাপান ডাক্তার’২০২০ )
ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :