শিরোনাম
◈ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি: কী পাচ্ছে বাংলাদেশ, কী হারাতে পারে? ◈ রাতেই সোহরাওয়ার্দীতে জড়ো হচ্ছেন জামায়াতের নেতাকর্মীরা (ভিডিও) ◈ চাপাতি হাতে ব্যাগ ছিনিয়ে পুলিশের সামনেই হেঁটে গেলো ছিনতাইকারী, ভিডিও ভাইরাল ◈ রাশিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত ভারতের বৃহত্তম তেল শোধনাগার নায়ারা রিফাইনারির ওপর ইইউর নিষেধাজ্ঞা ◈ রাতের আকাশে ভেসে উঠলো ‘নাটক কম করো পিও’ (ভিডিও) ◈ জটিল ভয়ানক যে রোগে আক্রান্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প! ◈ কুড়িগ্রামে চাঁদা দাবি করা জামায়াতের সেই নেতা সাময়িক বহিষ্কার ◈ বড়াইগ্রামে এক বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে দুই বিষয়ে দুই পরীক্ষার্থী ফেল! ◈ টাঙ্গাইলে পুলিশ হেফাজতে বিএনপি নেতার রহস্যজনক মৃত্যু ◈ এনসিপি’র মার্চ টু গোপালগঞ্জ তলিয়ে দেখা দরকার: শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি

প্রকাশিত : ০২ অক্টোবর, ২০২০, ০৬:২৬ সকাল
আপডেট : ০২ অক্টোবর, ২০২০, ০৬:২৬ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

এমসি কলেজ মন্দিরের টিলায় সাইফুর চক্রের শিকার হয়েছেন বহু তরুণী

ডেস্ক রিপোর্ট: সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে দলবদ্ধভাবে গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনায় এজাহারভুক্ত ছয় আসামির ডিএনএ নমুনা পরীক্ষার জন্য রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় পুলিশের পাহারায় তাদেরকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। যাদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে তারা হচ্ছে- সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, তারেক আহমদ, অর্জুন লস্কর, রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান। এই ছয় আসামির পাশাপাশি আইনুদ্দিনসহ আরো দুইজন পাঁচ দিনের রিমান্ডে রয়েছে।

সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (গণমাধ্যম) জ্যোতির্ময় সরকার বলেন, এজাহারনামীয় ছয আসামিকে পুলিশ ডিএনএ পরীক্ষার জন্য সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যায়। সেখানে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করার পর তাদেরকে আবার পুলিশের হেফাজতে নিয়ে আসা হয়। প্রসঙ্গত, করোনার কারণে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হলেও সিলেট এমসি কলেজের ছাত্রাবাস জোর করে খোলা রাখে ছাত্রলীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা। গত ২৫ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যায় এক তরুণী গৃহবধু স্বামীকে নিয়ে নিজস্ব কারে এমসি কলেজ মেইন গেটের কাছে এসে নামেন। এ সময় ছাত্রলীগের ছয় ক্যাডার তাদের জিম্মি করে ছাত্রাবাসে নিয়ে যায়। সেখানে মারধরের পর স্বামীকে বেঁধে তরুণীকে ধর্ষণ করে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে ওই দম্পতিকে ছাত্রাবাস থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ধর্ষণের শিকার তরুণীকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওসিসি সেন্টারে ভর্তি করা হয়। গণধর্ষণের ঘটনায় ছয়জনের নামে মামলা করা হয়েছে শাহপরাণ থানায়।

একই মামলায় অজ্ঞাত আরো তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। অভিযুক্ত সবাই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। পুলিশ অভিযুক্ত সবাইকেই গ্রেফতার করেছে। সাইফুর চক্রের শিকার হয়েছেন বহু তরুণী : এ দিকে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা তরুণী গৃহবধূকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণের ঘটনার পর বেরিয়ে আসছে নরাধমদের আরো অপকর্মের কাহিনী। গত প্রায় এক যুগ সময়ে তাদের দ্বারা অসংখ্য তরুণী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে তাদের স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল ফোন সেট ও টাকা-পয়সা। মানসম্মান ও প্রাণের ভয়ে এত দিন কেউ মুখ খুলতে সাহস পাননি।

ক্ষমতাসীন দলের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকায় তারা অবাধে চালিয়ে আসছিল তাদের দুর্বৃত্তপনা ও লাম্পট্য। কিন্তু গত শুক্রবার গণধর্ষণের ঘটনায় সব অপরাধীকে গ্রেফতারের পর তাদের আরো অপকর্মের কাহিনী এখন সিলেটবাসীর মুখে মুখে। যাদের পৃষ্ঠপোষকতায় এই ধর্ষক চক্র দুর্বৃত্তপনায় এত দূর এগিয়ে ছিল, তারা এখন নীরব থাকলেও কিছুদিন পর এরা ধর্ষকদের রক্ষায় তৎপর হয়ে উঠবে- এমন আশঙ্কা করছেন অনেকেই। তাই ধর্ষকদের গডফাদারদেরও গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি দেয়ার দাবি উঠেছে সব মহল থেকে। বিভিন্ন সূত্রে জানায় যায়, বিপুল আয়তন নিয়ে এমসি কলেজের অবস্থান। কলেজের পেছন দিকে রয়েছে মন্দিরের টিলা। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, যারা এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে ঘুরতে যান তারা একসময় নির্জন এই টিলাটির কাছে চলে যান।

আর ওখানে গেলেই পড়তেন বিপদে। ছাত্রলীগের সাইফুরের নেতৃত্বে ওই চক্রের সদস্যরা মন্দিরের টিলায় বসে আড্ডা দিত, ইয়াবা সেবন করত। আর কেউ গেলেই ‘ব্ল্যাকমেইল’ করা হতো। প্রেমিক-প্রেমিকা হলে তাদের ছবি তুলে আদায় করা হতো মুক্তিপণ। স্বামী-স্ত্রী গেলে কখনো কখনো স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে গণধর্ষণ করা হতো। এমন ঘটনা ওই টিলায় ঘটেছে অহরহ। কিন্তু কেউ কোনো প্রতিকার পেতেন না। সম্ভ্রম, টাকা-স্বর্ণালঙ্কার ওদের কাছে বিলিয়ে দিয়ে ফিরতে হতো শূন্য হাতে। সম্প্রতি এক দিন বিকেলে জগন্নাথপুরের এক তরুণ তার তালতো বোনকে নিয়ে এমসি কলেজ বাংলোর পেছনে গিয়ে বসেন। এমন সময় সাইফুর চক্রের সদস্যরা তাদের পায়। একপর্যায়ে অসামাজিক কাজের অভিযোগ তুলে তারা ওই তরুণ-তরুণীর ছবি তোলে। এরপর ছেলেটিকে বেঁধে তরুণীকে গণধর্ষণ করে। টাকাও চায় তরুণীর কাছে। শুধু এই ঘটনাই নয়, খোদ এমসি কলেজের ভেতরে এ ধরনের বহু ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয়রা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন।

এক তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে এমসি কলেজের গার্ড মাইকেলকে ক্যাম্পাসেই গণধোলাই দেয়া হয়েছিল। স্থানীয়রা বিক্ষুব্ধ হয়ে তাকে গণধোলাই দেয়। সাইফুর-রনি সিন্ডিকেটের হয়ে কাজ করত এই মাইকেল। কেউ ক্যাম্পাসে গেলেই মাইকেল খবর দিত ওই সিন্ডিকেটকে। মন্দিরের টিলার ঢালু জায়গাতে ছিল সাইফুর, রনি ও রবিউলদের আড্ডাস্থল। স্থানীয়রা জানান, বিকেল হলেই ধান্ধায় বের হতো তারা। চলে আসত ওখানে। প্রতিদিনই মন্দিরের টিলায় ঘুরতে যায় তরুণ-তরুণীরা। আর তাদেরই টার্গেট করে ওরা। তাদের হাতে সম্ভ্রম হারানো অনেক তরুণী বিচার না দিয়ে চলে যান। এমসি কলেজের হোস্টেল এলাকায় আগে নারী ধর্ষণের ঘটনা কখনো ঘটেনি। কিন্তু গত এক বছর ধরে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছে হোস্টেলে বসবাসকারী শিক্ষার্থীরা। তারা জানায়, সন্ধ্যা নামলেই হোস্টেলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা খুব প্রয়োজন ছাড়া রুম থেকে বের হতো না; কিন্তু প্রায় সময়ই সাইফুর-রনি প্রাইভেট কার, সিএনজি অটোরিকশায় মহিলাদের নিয়ে এসে হলে ঢুকত। তারা শিক্ষক বাংলোতে চলে যেত।

এসব ঘটনা দেখলেও কেউ কোনো প্রতিবাদ করতে সাহস পেত না। হোস্টেলে সুপার থাকতেন না। ফলে হোস্টেল নিয়ন্ত্রণ করত তারাই। এমসি কলেজের পাশেই রয়েছে আলুরতল এলাকা। একই এলাকায় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ অবস্থিত। বিকেল হলেই অনেক পর্যটক স্ত্রী ও বান্ধবীকে নিয়ে সেখানে ঘুরতে যান। তারা নির্জন, নিরিবিলি টিলায় গেলেই ওই এলাকায় একটি চক্র তাদের একইভাবে ব্ল্যাকমেইল ও ধর্ষণ করত। এ ধরনের অনেক ঘটনা এখন স্থানীয়দের মুখে মুখে। বর্তমান অধ্যক্ষ প্রফেসর সালেহ উদ্দিন আহমদ দায়িত্ব গ্রহণের আগে কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন নিতাই চন্দ্র চন্দ। সাবেক ওই অধ্যক্ষের কাছে সাইফুর-শাহ রনি ও রবিউল চক্র হোস্টেলে বসবাসকারী কয়েকজন শিক্ষার্থীর বেতন ও খাওয়ার বিল মওকুফের দাবি জানায়।

এতে অস্বীকৃতি জানালে তারা অধ্যক্ষের কক্ষ ভাঙচুর করে। বর্তমান অধ্যক্ষ দায়িত্ব গ্রহণের পরও নানাভাবে তারা প্রভাব বিস্তার করে। এ কারণে অধ্যক্ষ নিজেই স্বীকার করেছেন, তিনি অসহায় ছিলেন। নিরাপত্তার অভাব ছিল : আয়তন অনুযায়ী মুরারী চাঁদ (এমসি) কলেজের নিরাপত্তাব্যবস্থা যথেষ্ট নয়। ১৪৪ একর এলাকা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত এমসি কলেজে অপ্রতুল সীমানা প্রাচীর এবং আলো স্বল্পতার বিষয়টিও নিরাপত্তায় ব্যাঘাত ঘটিয়েছে। গত বুধবার সন্ধ্যায় সিলেট ছাড়ার আগে প্রেস ব্রিফিং করে এমন তথ্য জানান শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) শহিদুল খবির চৌধুরী। এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণের ঘটনায় গঠিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গত মঙ্গলবার সিলেটে আসে।

দুই দিন সিলেটে থেকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন ছাড়াও কলেজ অধ্যক্ষ, শিক্ষক, পুলিশ, সাধারণ মানুষ, ভিকটিম ও তার স্বামীর সাথে তারা কথা বলেন। বুধবার রাতে তারা ঢাকায় ফিরে গেছেন। গতকাল মন্ত্রণালয়ে তাদের প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা ছিল। এরপর এক সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। শহিদুল খবির চৌধুরী বলেন, এ রকম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গণধর্ষণ একটি নিন্দনীয় ঘটনা। যেহেতু আমরা শিক্ষার সাথে জড়িত, তাই আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখছি। মন্ত্রণালয় আমাদের বলেছে তিন দিনের মধ্যে প্রাথমিক এবং সাত দিনের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে। আমরা এমসি কলেজের প্রশাসনসহ অনেকের সাথে কথা বলেছি, ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেছি। তিনি বলেন, বিষয়টি স্পর্শকাতর, তাই নির্যাতিতা নারীর সাথে কথা বলাটা খুব সহজ হয়নি। তবু আমরা চেষ্টা করেছি কথা বলার। তদন্তের স্বার্থে এটি করা দরকার ছিল।

জানা গেছে, করোনা সংক্রমণের পর থেকে এমসি কলেজ বন্ধ থাকার মধ্যেও ছাত্রাবাস খোলা রেখে শিক্ষার্থীদের থাকতে দেয়া নিয়ে কলেজ প্রশাসন কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছে। এ অবস্থায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ওই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সূত্র: নয়া দিগন্ত

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়