আরিফ রহমান: শাহ আহমদ শফী। হুট করেই এই নামটার প্রতি খুবই গভীর ব্যক্তিগত কিছু আবেগ জন্ম নিয়েছিলো বছর সাতেক আগে, সেই আবেগ আজও বহাল আছে একই মাত্রায়। শফী মরে গেছেন। অনেক ভেবে দেখলাম তার মৃত্যুতে কোনোভাবে আনন্দিত হতে পারছি কিনা। উত্তর হচ্ছে, না। শফীর মৃত্যুতে আমি কোনোভাবেই আনন্দিত নই। কবিতার কসম, যতোটা নিখুঁতভাবে আমি শফীকে ঘৃণা করতে পেরেছিলাম, ততোটা নিখুঁত বিন্যাসে আজ পর্যন্ত আমি কাউকে ভালোও বাসতে পারিনি। শফীর মৃত্যু আমার কাছে পার্সোনাল লস, শত্রু হারানোর বেদনা। শফীর মৃত্যুতে আমার আফসোস হচ্ছে। আফসোস হচ্ছে যে কজন মানুষ আমাদের জীবন জাহান্নামের বাগান করে গেছে, তাদের পুরুষ সর্দার শফীকে আমরা আমাদের রক্তের, স্বপ্নের আর শ্রমের বাংলাদেশটা দেখাতে পারলাম না। আমরা দেখাতে পারলাম না দেশের সব মেয়েরা স্কুলে যাবে, কলেজে যাবে, বিশ^বিদ্যালয় শেষ করে গবেষণা করতে প্রাচ্যে যাবে, আইন ভাঙবে-আইন বানাবে, রাতে-ভোরে, আলোয়-অন্ধকারে যখন ইচ্ছে বাইরে যাবে।
আমরা দেখাতে পারলাম না। স্কুলগুলোতে আর থাকবে না পৃথক পৃথক কোনো ধর্মের বই, যেখানে কলেজ পর্যন্ত সব ধর্মের কথাই পড়বে মানুষ, পড়বে ধর্মহীনতার কথাও। আমরা দেখাতে পারলাম না এদেশে গণিমতের মাল হবে না কেউ, ধর্মপ্রাণ সংখ্যা গরিষ্ঠের ঘরেও নিজের সন্তানের মতো নিরাপদে থাকবে যেখানে বিধর্মী শিশু, প্রকাশ্যে সেখানে সকল সন্তানদের স্তনপান করাবেন মায়েরা। কিন্তু বিধর্মী শিশু কী। আমরা এও দেখাতে পারলাম না, শিশুদের কোনো ধর্ম নেই ক্ষুধা, কৌতূহল আর স্নেহ ছাড়া। আরও অনেক কিছুই শফীকে আমরা দেখাতে পারলাম না। হয়তো দেখাতে পারলাম না একেবারে কিছুই। শফী জিতে গেলো। আমাদের কাছে শফী নিজের বাংলাদেশ দেখিয়ে দিয়ে মরে গেলো। শফী, পথে ঘাটে তোমার ভাইয়েদের হাতে চাপাতির কোপে আমারও মরেছে অনেক ভাই, বস্তুত যাদের পরকাল বলে কিছু নেই। কিন্তু শফী, তোমার তো পরকাল আছে।
আমার ভাইয়েদের সাথে তোমার নাইবা দেখা হোক, তবুও তোমার ঈশ^রের কাছে প্রার্থনা করি, প্রার্থনা করি শেষ বারের মতো কবর থেকে তুলে ছুড়ে ফেলা আহমেদিয়া শিশুর সাথে পরকালে তোমার অন্তত একবার দেখা হোক, দেখা হোক পুলসিরাতে আমার সকল পরাজয়ের বোঝাপড়া সেই করে নেবে তোমার সাথে। এই নির্লজ্জ রাষ্ট্রের মতো নাইবা হলাম, তবু শফী তোমার মৃত্যুতে আমি সত্যিই শোকাহত। ফেসবুক থেকে