সুজন কৈরী: মোবাইল ফোনসেটের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করা চক্রের ১২ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তাদের কাছ থেকে ২৬৫টি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের চোরাই মোবাইল এবং আইএমইআই পরিবর্তনের ৯টি ডিভাইস উদ্ধার করা হয়েছে।
সিআইড বলছে, চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে চোরদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন কিনে এর আইএমইআই পরিবর্তন করে আবার বাজারে বিক্রি করছিল। ফলে মোবাইলটি চোরাই কিনা তা সহজে ধরা যেত না।
গ্রেপ্তরকৃতরা হলেন- মুরাদ খান, লাভলু হাসান, আল আমিন ওরফে অনিক, বশির আলম শুভ, আব্দুল মালেক, মো. তামিম, শাহ আলম, স্বপন, জাহাঙ্গীর আলম, ইমাম হাসান, আরিফ ও আল আমিন। তারা একে অপরের ঘনিষ্ট বন্ধু। সিআইডি তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে।
এছাড়া রাজধানীর লালবাগের নবাবগঞ্জ পার্কের সামনে মোবাইল বিক্রির অভিযোগে ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ রেজাউল হায়দার জানান, বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এই চক্রের ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি’র ঢাকা মেট্রো-পূর্ব বিভাগ।
তিনি বলেন, চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মোবাইল চোরচক্রের কাছ থেকে স্বল্প দামে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোবাইল কেনে তার আইএমইআই পরিবর্তন করার ডিভাইস ব্যবহার করে সমাজের ক্ষতি করছিল। ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন অপরাধীরা হত্যাসহ ছিনতাই, ডাকাতি করে ব্যবহারকারীর মোবাইল নিয়ে যাওয়ার কারণে আগে তথ্য- প্রযুক্তির মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সহজেই অপরাধীদের সনাক্ত করা সম্ভব হতো। কিন্তু সংঘবদ্ধ এই চক্রটি মোবাইল ফোনের আইএমইআই পরিবর্তন করায় চাঞ্চল্যকর মামলার রহস্য উদ্ঘাটনসহ প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সিআইডির এ কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার মুরাদ খান ও লাভলু হাসান শহরের বিভিন্ন চোরদের কাছ থেকে চোরাই মোবাইল ফোন কিনে তার লক খোলা এবং মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করার জন্য অনিক, বশির ও মীম টেলিকমের মালিক আব্দুল মালেকের কাছে দিত। অনিক, বশির ও মালেক ‘জেডথ্রিএক্স’ ডিভাইস ব্যবহার করে মোবাইলের আইএমইআই পরিবর্তন করত। এরপর সুনির্দিষ্ট গ্রাহকের কাছে নির্ধারিত মূল্যের কম মূল্যে মোবাইলগুলো বিক্রি করত। চক্রের সদস্যরা এই ডিভাইসগুলো গুলিস্থানের পাতাল মার্কেটের মাসুদ টেলিকম ও কবির টেলিকম থেকে কিনে বলে জানায়। ডিভাইসগুল চায়না থেকে আনা। মাসুদ এবং কবির টেলিকম অবৈধভাবে ডিভাইসগুলো বাংলাদেশে নিয়ে আসে। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে গত মঙ্গলবার পুরান ঢাকার লালবাগের নবাবগঞ্জ পার্কের সামনের রাস্তায় মোবাইল বিক্রির অভিযোগে ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম ইউনিট। গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছেন- জুয়েল, মাসুদ, দুলাল, জিজাল মোল্লা ওরফে বিপ্লব হোসেন, হাসান, সেলিম, শাহজাহান মিয়া ও খোকন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) নবনিযুক্ত অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হিসেবে এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, উদ্ধারকৃত ৫৫টি মোবাইল বিভিন্ন মডেলের। এসব চোরাই মোবাইল ফোন দিয়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এছাড়া নিরীহ লোকদের অপরাধী হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজধানীতে চোরাই মোবাইল সিন্ডিকেটের সদস্যদের ধরতে আমাদের নিয়মিত অভিযান চলছে। সাধারণ মানুষের উদ্দেশে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, কেউ চোরাই মোবাইল ব্যবহার করবেন না। চোরাই মোবাইল কিনবেন না। কারণ চোরাই মোবাইল দিয়ে অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনার সম্ভাবনা থাকে।