রিফাত হাসান: চোখ মুখ ঢেকে বোরকা পইরা কেউ ক্রিকেট খেললে, এইটা কিম্ভূত বটে। অন্তত আমাদের অভিজ্ঞতায়। কিন্তু প্রথম আলো যেইটা দেখালো, বোরকা মেয়েটার স্পিরিট থামাতে পারেনি, বোরকা পইরাও যে মেয়েটা ক্রিকেট খেলছে। এ ধরনের প্রগতি বেশ ভালো, প্রথম আলোর পছন্দ। আমারও বেশ পছন্দই। কিন্তু ডকুপিক সন্দেহের জিনিশ সব সময়। যদি মা ছেলের আনন্দ অবসরের ক্যাপশন না লেখা হতো, তাইলে আমাদের পাঠটি মোটামুটি এই ধরনেরই হইতো। এইটা হোপ হিসেবে তেমন নিষ্পাপ যদিও না, একটু খেপাটেও। ওয়ার অন টেরর পরবর্তী এই ধরনের নানান ডকুপিক আপনার নজরে পড়বে।
শাড়ি পরা একটা মেয়ে সামনে আসছে, আর বোরকা পরা মেয়েটা পেছন চেয়ে দেখছে, যে দূরে সরে যাচ্ছে। এ ধরনের একটা ছবি বেশ পপুলার হইছিলো এক সময়। ওয়েস্টে নানান অ্যাপোলজিটিক ডকুপিক, ভিডিও, আই অ্যাম নট টেররিস্ট ধরনের। খেয়াল করেন, নাইন ইলেভেনের এক বার্ষিকীতেই এই ছবি প্রথম আলো প্রচার করলো। হয়তো অসতর্কেই। একটু স্নেহ, দরদও যেন লাইগা আছে, বোরকাওয়ালির প্রতি। টুপি পরা মাদ্রাসা ছাত্রের প্রতি। যে আদৌতে কারাগারেই আছে। এই স্নেহেই প্রথম আলো উতরে গেলো। আধুনিকতা বা যেকোনো আদর্শের এইটুকু স্নেহরে তো আমারেও স্নেহ ভরে দেখতে হবে। প্রথম আলোরেও। যদিও মাদ্রাসার মোল্লারা আওয়াজ দিতে পারত যে, প্রথম আলো হিজাবি মেয়েদেরে পল্টনে খেমটা নাচাতে ষড়যন্ত্র করছে, এইটা বরদাশত করা হবে না।
ইসলাম গেলো। হয়তো তাই হতো। কিন্তু বাস্তবে, ঘটনা আগে ঘটলো অন্যটা, উল্টো। প্রগতিশীল মোল্লারা আগে চেঁচিয়ে উঠলো, আধুনিকতা গেলো। জাত গেলো ইত্যাদি বইলা। হা হা। মনে রাখতে হবে, আধুনিকতা যে ফ্রিডম এর ধারণা দেয়, তার মানে হলো, রাইট টু চয়েস। কিন্তু বাস্তবে এইটা ভেল্যু ব্যবস্থাই। এইটার চরিত্র রক্ষণশীলতাই, যেমন : বোরকার এখানে জায়গা হবে না। ফ্রান্স যেমন এখন বাংলাদেশে যে প্রগতিশীলরা কথা কইছেন। ফলতো স্বাধীনতা ব্যাবসায়ীরা যে চয়েজ বাইছা নিতে বলে আপনারে, সেখানে কোনো স্বাধীনতাই থাকে না। আধুনিকতার এখনকার যে ফেস, তাতে এর থিকা নিস্তার নেই। এর থিকা মুক্তির যে গান, তা কোনো পোশাকে না, অন্য কোথাও। আমরা সব সময় এটাই কই। কিন্তু বাংলাদেশে এই প্রগতিশীল মোল্লারা যে জন্য চেঁচালো, সেটি কী?
স্রেফ আধুনিকতা, জাত রক্ষা, মনে হয় না। আমাদের ঐতিহাসিক অভিজ্ঞান বলে, এইটা হলো হেইট। সাম্প্রতিক ফেনোমেনন ওয়ার অন টেররের সাথে সাথে, মুসলমান, আর মুসলমানি পোশাকের প্রতি ঐতিহাসিক বাঙালি জাতীয়তাবাদী ঘৃণা, বর্ণবাদ। যার রুট ঐতিহাসিক বর্ণহিন্দুত্ববাদ ও আধুনিক মহাভারতে। জাত ও বর্ণে ছোট, নম শূদ্র ও বাঙালি মুসলমান ও মুসলমানি চিহ্নের যে ক্ষমতা, তার প্রতি ঘৃণা। স্রেফ রক্ষণশীলতা না। আধুনিকতার রক্ষণশীলতার ক্রিটিকের পাশাপাশি, এই মহাভারতের বর্ণবাদরে আপনারা পাঠ করতে পারেন কী? ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :