দীপক চৌধুরী : প্রহরীকে আটকে সরকারি বাসায় ঢুকে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের ইউএনও ওয়াহিদা খানমকে কুপিয়ে জখম করার ঘটনা মারাত্মক ভয়ঙ্কর। এই ঘটনায় ইউএনওর চিকিৎসার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর নির্দেশে রাতে জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস ওই ইউএনওকে দেখতে যান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালে। তাকে রংপুরে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে জরুরি ভিত্তিতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে রাজধানীর এই হসপিটালে আনা হয়। রাতে তার সফল অস্ত্রোপচার করা হয়।
ইউএনওর সরকারি বাসভবনের ভেন্টিলেটর কেটে দুই দুর্বৃত্ত তার শয়নকক্ষে ঢুকে পড়ে। এর আগে দুর্বৃত্তরা ওই বাসভবনের নিরাপত্তা প্রহরীকে বেঁধে প্রহরীর কক্ষে তালা দিয়ে আটকে রাখে। ইউএনওর বাবা ওমর আলীকে (৬০) দুর্বৃত্তরা গুরুতর জখম করে। বুধবার শেষ রাতের ঘটনা এটি। এরপরই ইউএনওদের নিরাপত্তার বিষয়টি সামনে এসেছে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিছুসংখ্যক উপজেলায় এখনো সেরকম পরিবেশ গড়ে উঠেনি। আসলে,বাস্তবতা খুব কঠিন। ইউএনও অফিসের কার্যাবলী দীর্ঘ। এর সিংভাগেই সুপারভিশন কর্মকর্তা হিসেবে জেলা প্রশাসকদের গাইড-লাইন থাকে। উপজেলা নির্বাহী অফিস মোটেই ছোট নয়। বলা যায়, এটাই তৃণমূলের মানুষের অফিস। প্রতিটি উপজেলায় একটি করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মূলত কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং স্থানীয় পর্যায়ে উপজেলা পরিষদের কাজে সহায়তা করেন। তাদের কার্যক্রম কতো ব্যাপক তা তুলে ধরছি। শুধু ব্যাপকতা নয়, তাদের কাজ করতে হয় বিভিন্ন স্পর্শকাতর ইস্যুতেও। জনপ্রশাসন ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে ইউএনকে ৬১টি কাজের সঙ্গে ওঠাবসা করতে হয়। এছাড়া তিনি সাধারণ প্রশাসন, রাজস্ব প্রশাসন, ফৌজদারি প্রশাসন ও উন্নয়ন প্রশাসন বিষয়ে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। আপ্যায়ন ও ‘কফি’ খাওয়ানোর পর জনপ্রশাসনের একজন কর্মকর্তা বিরাট একটি তালিকা হাতে ধরিয়ে বললেন, ‘আপনি এখান থেকেই তথ্য পাবেন।’ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের উল্লেখযোগ্য কাজ হলো- কেন্দ্রীয় সরকারের সকল প্রকার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা এবং বিভিন্ন বিভাগের কাজের সমন্বয় করা। অন্যান্য দায়িত্ব হলো, ০১। আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড তদারকিকরণ, ০২। সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন, ০৩। সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ তদারকি ও বাস্তবায়ন, ০৪। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় পূর্বপ্রস্তুতি ও পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ,০৫। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন, ০৬। ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন, ০৭। আশ্রয়ণ প্রকল্প, আদর্শ গ্রাম, আবাসন প্রকল্প গ্রহণ ও তাদের বাস্তবায়ন, ০৮। অসহায় মানুষদের বিভিন্ন আশ্রয়নে সংস্থানকরণ, ০৯। আবাসনবাসীদের ঋণ প্রদান ও তাদেরকে স্বাবলম্বীকরণ, ১০। উপজাতীয়দের ঋণ প্রদান তাদেরকে স্বাবলম্বী করণ, ১১। মাধ্যমিক বিদ্যালয়/ প্রাথমিক বিদ্যালয়/ মাদ্রাসা পরিদর্শন ও তাদের শিক্ষার মান উন্নতিকরণ, ১২। প্রাথমিক বিদ্যালয় মেরামত/সংস্কার ও আসবাবপত্র প্রদান, ১৩। স্থানীয় জমিজমা সংক্রান্তবিরোধ নিষ্পত্তি করণ, ১৪। ইউনিয়ন পরিষদে ট্যাক্স আদায়ের জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা, ১৫। উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের সাথে সমন্বয় করে স্ব স্ব বিভাগীয় কার্যক্রম বাস্তবায়ন, ১৬। সকল প্রকার পাবলিক পরীক্ষা পরিচালনা, ১৭। খনিজ সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ, ১৮। পতিত জলমহাল বেকারদের মধ্যে ইজারা প্রদান, ১৯। বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান, ২০। বয়স্কভাতা প্রদান, ২১। বিধবাভাতা প্রদান, ২২। প্রতিবন্ধীদের ভাতা প্রদান, ২৪। ভূমি উন্নয়ন কর আদায়, ২৫। ঝাটকা ধরা বন্ধ করার লক্ষ্যে মোবাইল কোর্ট পরিচালন, ২৬। কাজের বিনিময় খাদ্য কর্মসূচী, ২৭। দুর্যোগকালীন ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ ও ভিজিডি, ভিজিএফ, অতিদরিদ্র, কর্মসংস্থান কর্মসূচী বাস্তবায়নন, ২৮। সাধারণ অভিযোগ তদন্ত ও নিষ্পত্তি ২৯। রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্ট, ইনলেটনির্মাণ ও সংস্কার, ৩০। দুঃস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা প্রদান, ৩০। সরকার ঘোষিত বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠান উদযাপন, ৩১। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচন পরিচালনা কর, ৩২। সাইক্লোন সেন্টার স্থাপন, ৩৩। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্যগণের সম্মানি ভাতা প্রদান, ৩৪। প্রচলিত আইন মোতাবেক মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, ৩৫। স্থানীয় সংস্কৃতি উন্নয়ন, ৩৬।খেলাধুলার মান উন্নয়, ৩৭। সামাজিক সম্প্রীতি বজায় রাখা, ৩৮। কৃষি উন্নয়ন, ৩৯। সারের ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ নিশ্চিত কর, ৪০। সমবায় সমিতি গঠন ও ঋণদান, ৪১। আবশ্যক ক্ষেত্রে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৪ ধারা জারি, ৪২। উপজেলা উন্নয়ন তহবিল ও রাজস্ব তহবিলের তদারকি কর, ৪৩। উপজলা পরিষদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়ননে সহায়তাকরণ, ৪৪। বিভিন্ন বিভাগের কর্মকাণ্ডের সমন্বয় করা, ৪৫। প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, ৪৬। বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষা পরিচালনা করা, ৪৮। জেনারেল সার্টিফিকেট মোকদ্দমা পরিচালনা কর, ৪৯। হাট-বাজার ব্যবস্থাপনা কর, ৫০। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন, ৫১। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান/সংস্থার কার্যক্রমের প্রত্যয়নপত্র প্রদান, ৫২। থোক বরাদ্দ/বিশেষ অনুদানের টাকা বিতরণ, ৫৩। ভোটার তালিকা প্রণয়ন বিষয় কাজ ও সমস্যা, ৫৪। স্কাউটিং এর উৎসাহ ও উদ্দীপনা প্রদান ৫৫, খাদ্যশস্য আদমশুমারি, ৫৬। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা, ৫৭। সরকারের নতুন কর্মসূচী সম্পর্কে জনগণকে জানানো, ৫৮। সামাজিক সমস্যা দূরীকরণে জনগণকে উদ্বুদ্ধকরণ (যৌতুক, বাল্যবিবাহ), ৫৯। খাস জমি বন্দোবস্তের প্রক্রিয়াকরণ, অর্পিত সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা নেওয়া। অনেকেই বলে থাকেন, উপজেলা প্রশাসনে কিছু গতানুগতিক কাজ আছে, যা সবাই করতে পারে। কিন্তু গতানুগতিকের বাইরের কাজগুলো কে করবেন? উপরোক্ত কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা ও বাস্তবায়নের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অধীনে অফিস সুপার, সিএ, অফিস সহকারী ও এমএলএসএসগণ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। তারা সার্বিকভাবে তাকে সহযোগিতা করেন।
এখন আসা যাক উপজেলার প্রধান নারীকর্মকর্তা বা নারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রসঙ্গে। নারীকর্মকর্তাদের যোগ্যতা থাকার পরও সার্বিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে পুরুষ জেলা প্রশাসকদের আন্তরিকতা ও সহযোগিতা থাকেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার দেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের দক্ষতা, কর্মনিষ্ঠা ও দেশপ্রেমের সাথে কাজ করতে তাদের একাধিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু প্রশাসনের এই ক্ষেত্রটিতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা রয়েছে কিনা তা গভীরভাবে চিন্তা করার বিষয়।
স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব শামসুল ইসলাম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভে ও দুঃখে নিরাপত্তার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ফেসবুক পোস্টে তিনি বৃহস্পতিবার কিছু প্রশ্ন তুলেন ও কয়েকটি বিষয় এভাবে উল্লেখ করেন যে, ‘‘বেগম ওয়াহিদা খানম জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে! কিভাবে তা সম্ভব? আমার মতো নিশ্চয়ই প্রিয় দেশবাসী হতবাক! স্তম্ভিত! এ পরিকল্পিত ও নৃশংস হামলার ঘটনা দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে দিল আমাদের সহকর্মীরা জীবনের কতটা ঝুঁকি নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করেছেন।’’ শামসুল ইসলাম আরো উল্লেখ করেন, ‘‘আমরাও অতীতে করেছি। দুবৃত্তচক্র কতটা বেপরোয়া, দুঃসাহসী ও আইনের প্রতি অশ্রদ্ধাশীল! যিনি উপজেলার সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বিধান করবেন, আজকে তার নিজের জীবনই বিপন্ন। তিনিই নিরাপত্তাহীন! ওরা শুধু ইউএনওর জীবনই সংকটাপন্ন করেনি, গুরুতর আহত করেছে তাঁর বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবাকেও! তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। দুস্কৃতিকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। মাঠ পর্যায়ে কর্মরত ইউএনওদের বাসায় হাউজগার্ড মোতায়েনসহ নিরাপত্তার জন্য গানম্যান নিশ্চিত করা জরুরি- যা সময়ের দাবি। (বিভৎস ছবিগুলো সচেতনভাবে শেয়ার করলাম না।)’’ তিনি ফেসবুকে যা লিখেছেন তা-ই তুলে ধরা হলো।
তৃণমূলে প্রশাসনের অর্থাৎ উপজেলায় শীর্ষ পদে নারী কর্মকর্তাদের মধ্যে দেশের ৪৯২টি উপজেলায় ৪৪৫ জন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মধ্যে ১৪০ জনই নারীকর্মকর্তা। জেলা প্রশাসক পদে আছেন দশজন নারী। আর প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ে সচিব পদে আছেন এগারো নারী কর্মকর্তা। খাদ্য সচিব, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, ভূমি আপিল বোর্ড, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদসহ রাষ্ট্রের অনেক সর্বোচ্চ পদেও এখন নারীরা। যেমন- বেগম শামীমা নার্গিস, জুয়েনা আজিজ, কামরুন নাহার, বদরুন্নেছা, হোসনে আরা বেগম, কাজী রওশন আক্তার, উম্মুল হাছনা, ড. মোছাম্মাৎ নাজমানার বেগম, ফাতিমা ইয়াসমিন, বেগম সুলতানা আফরোজ, মোছা আছিয়া খাতুন প্রমুখ সিনিয়র সচিব বা সচিব পদে রয়েছেন। শীর্ষ পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নারী কর্মকর্তারা কিন্তু কঠিন পরীক্ষা ও যোগ্যতার মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান প্রতিষ্ঠা করেছেন। জনপ্রশাসন ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের দুজন কর্মকর্তা আপডেট (চার মাস আগের তথ্য) তথ্য না দিতে পারলেও এটুকু বলা সম্ভব যে, সচিবালয়সহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে অনেক নারী কর্মকর্তা দক্ষতা ও যোগ্যতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। তাদের মধ্যে অতিরিক্ত সচিব ৮৯ জন (পুরুষ ৪৩০), যুগ্ম সচিব ৮২ জন (পুরুষ ৫৫৬), উপসচিব ৩৫০ জন (পুরুষ ১৩৪০), সিনিয়র সহকারী সচিব ৪৪৮ জন (পুরুষ ১০৭০) ও সহকারী সচিব পদে প্রায় ৫০০ (পুরুষ ১১০০) নারী কর্মকর্তা দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।
রাজনীতিতে আমরা সম্ভবত ভীষণভাবে এগিয়ে। এখন পৃথিবীতে একটি উদাহরণ হয়েই আছে, এদেশে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, জাতীয় সংসদের স্পিকার- তিনজনই নারী। দক্ষ ও শক্তিশালী প্রশাসন গড়ে তোলার একের পর এক উদ্যোগ নিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।
বর্তমান তথ্য সচিব কামরুন নাহার তখন তথ্যসচিব হননি, প্রধান তথ্য কর্মকর্তা ছিলেন। তার মতে, ‘শুধু প্রশাসন নয়, অনেক ক্ষেত্রেই নারীরা ভালো করছেন। অতীতে নারীদের মধ্যেও একটা ‘ভয়’ কাজ করতো। দায়িত্ব নিতে দ্বিধা করতেন তারা। নারী কর্মকর্তারা গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করতে পারবেন কি না, এমন সন্দেহ একটা সময়ে পুরুষদের মধ্যে থাকলেও এখন অনেকে ক্ষেত্রে তাদের সাফল্য উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হয়। এখন প্রশাসনসহ সকল জায়গাতেই উন্নতি হয়েছে।’
সচিব কামরুন নাহারের মতে, ‘ মাঠ প্রশাসনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীরা নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন। কেবল রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের দিক থেকে নয়, শিক্ষা, প্রশাসন, চাকরি- সব ক্ষেত্রেই নারীর অগতির প্রশংসা করছে বিশ্ব।’
খুব সম্ভবত ৮২ সালের আগে মেয়েরা বিসিএস পাস করলেও এডমিন ক্যাডারে আসতে পারতেন না। সেবারই প্রথম বিসিএসে মেয়েরা এডমিন ক্যাডারে এসেছেন। ২০২০-এ এস আমরা দেখি সর্বত্র মেয়েরা। বিভিন্ন ঘটনায় দেখা গেছে, নারীর ক্ষমতায়নে ভীষণ আগ্রহী শেখ হাসিনা। এখন সেনাবাহিনী, বিজিবিতে নারীরা এগিয়ে আসছে। নারীরা এখন সিনিয়র সচিব, সচিব, অতিরিক্ত সচিব, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, কলেজের প্রিন্সিপাল, র্যাব কর্মকর্তা, পুলিশের ডিআইজি, পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এমন কি বিচারপতিও হচ্ছেন। সব ক্ষেত্রে এগোচ্ছে এই ধারা। যা বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা। তিনি প্রায়ই বলে থাকেন, মেয়েরা পিছিয়ে থাকলে দেশও এগোতে পারবে না। নারীদের এগিয়ে যাওয়ার পরিবেশ ও নারীর ক্ষমতায়ন কেবল তার সদিচ্ছার কারণেই সম্ভব হচ্ছে।
নারীদের সাফল্য দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছে অন্যরা। জেলা প্রশাসক হিসেবে একসঙ্গে এত নারী অতীতে কখনো কাজ করেননি। বাঙালি এমনিতেই রক্ষণশীল। আমাদের সমাজ এখনো পুরুষশাসিত। সমাজে নারীদের বাইরে কাজ করতেই বাধা দেয়া হতো না। কোদাল দিয়ে নারী মাটি কাটবে, নারী কৃষিকাজ করবে, নারী দিনমজুরি করবে এটা ভাবনার বাইরে ছিল।
মেয়েদের স্বপ্ন দেখাতে পছন্দ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পরে আগের চেয়ে নারী কর্মকর্তাদের অনেকে ইউএনও, এডিসি, ডিসি হয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবেও কাজ করার সুযোগ হয়েছিল কবি শাহিদা সুলতানার। এখন তিনি গোপালগঞ্জে জেলা প্রশাস। এই নারী কর্মকর্তা ডিসি হওয়ার আগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব হিসেবে কাজ করেছেন। এ মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানালেন, ‘মাঠ প্রশাসনে একবার যারা ভাল করতে পারেন তারা আলোচনায় থাকেন। সেসব নারী কর্মকর্তাদের পদায়নের চেষ্টা করি আমরাও।’
দেখা গেছে, পুরুষ কর্মকতাদের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করে অনেকে সেটি পানও। ক্ষেত্রবিশেষে জেলা প্রশাসক সার্বিক সহযোগিতা করে থাকেন। মূলত কাজের গতি বাড়াতে নারী কর্মকর্তাদের প্রতি জেলা প্রশাসকদের সহযোগিতামূলক দৃষ্টিভঙ্গী ভীষণভাবে আগ্রহী করে তুলে নারী কর্মকর্তাদের। মাঠ পর্যায়ে জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সিভিল সার্জন, পুলিশ সুপারের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয় এমন পদগুলোতে নারীরা দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন। পুরুষ সহকর্মীদের সঙ্গে কাজ করে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভালো করছেন তারা। সরকারের সিদ্ধান্ত বাবায়নসহ সবকিছুতেই নারীরা যেভাবে গুছিয়ে বা সিনসিয়ারলি কাজ করতে পারেন সেটার প্রতি সরকারের বিশেষ নজর পড়ে।
মাঠ প্রশাসন নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের। নারী ইউএনও পদে নারীদের পদায়ন পর্যায়ক্রমে বাড়ছে কেন জানতে চেয়েছিলাম। এ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব কথাপ্রসঙ্গে জানান, দুর্নীতি প্রতিরোধ, বাল্যবিয়ে রোধ, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মাঠ প্রশাসনে নারী কর্মকর্তারা ভালো করছেন।
লেখক : উপসম্পাদক, আমাদের অর্থনীতি, সিনিয়র সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক