সুজন কৈরী : গণমাধ্যমের সাইনবোর্ড ও সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের সীল ব্যবহার করে বিভিন্ন সরকারি- বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেয়ার নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে দুই জনকে আটক করেছে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। সেইসঙ্গে দুটি প্রতিষ্ঠান সিলগালা করা হয়েছে। আটকরা হলেন- নিউজ ২১ টিভি ও এবি চ্যানেলের মালিক মো. শহিদুল ইসলাম ও সাপ্তাহিক সময়ের অপরাধ চক্রের মালিক আমেনা খাতুন।
র্যাব বলছে, অনুমোদনহীন টিভি চ্যানেল ও পত্রিকার সাইনবোর্ডে ১০ থেকে ১২টি সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এক হাজার বেকার যুবক-যুবতীদের কাছ থেকে আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র। চক্রটি নিউজ ২১ টিভি, এবি চ্যানেল ও সাপ্তাহিক সময়ের অপরাধ চক্র নামের ভুয়া টিভি চ্যানেল ও পত্রিকার নাম ব্যবহার করতো। অভিযানকালে আটকদের অফিসে তল্লাশি চালিয়ে বিভিন্ন নামের উপ-সচিব, যুগ্ম-সচিবসহ সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের জাল সীল, জাল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ৮২টি, চাকরীর ভুয়া বিজ্ঞাপন এবং বিভিন্ন ভুয়া নথিপত্র উদ্ধার করা হয়।
মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর পল্টন ও মগবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে র্যাব-৩ পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত এমন প্রতারক প্রতিষ্ঠানের খোঁজ পায়। আদালতের নেতৃত্ব দেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু।
অভিযান শেষে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু বলেন, অনুমোদনহীন টিভি চ্যানেল ও পত্রিকার সাইনবোর্ডে স্বাস্থ্য বিভাগ, কারিগরি ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, বিআইডবিøটিএ ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এমন সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেয়ার নামে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে আটকরা। চক্রটি প্রতারণা করে এক হাজার বেকার যুবকদের কাছ থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
তিনি বলেন, সরকারি ওই প্রতিষ্ঠানগুলোতে যখন আসল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হতো তখন চক্রটি তাদের অফিসের ঠিকানা দিয়ে তাদের মতো করে বিজ্ঞপ্তি দিতো। তাদের দালাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বেকারদের টার্গেট করতো। এমনকি তারা স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপসচিব ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের যুগ্ম সচিবের সিল জালিয়াতি করে নিয়োগ পত্র দিতো। যা সম্পূর্ণই ভুয়া।
পলাশ কুমার বসু আরও বলেন, ব্রাইট এসোসিয়েট লিমিটেড নামক একটি প্রতিষ্ঠানের প্যাডে তারা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিগুলো দিতো। কিন্তু এ্যাসোসিয়েট লিমিটেড নামক কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব নেই। সাপ্তাহিক সময়ের অপরাধ চক্রের অফিস থেকেই এই প্রতারণা করত এবং সকল ভিকটিম টাকা লেনদেন করেছে এই অফিসেই। অভিযানে দেখা যায়, তাদের অফিসের ডায়েরিতে লেখা রয়েছে, কবে কার কাছ থেকে কত টাকা নিয়েছে।
র্যাব ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, এছাড়াও সাপ্তাহিক সময়ের অপরাধ চক্রের সারা দেশের বিভাগ, জেলা ও উপজেলার অফিসে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি তারা প্রকাশ করেছে যাতে ৫৭০ জনের নিয়োগ দেয়া হবে। কিন্তু তাদের বিভাগ-জেলা-উপজেলায় কোনো অফিস ও পত্রিকার কোনো পদের অস্তিত্ব নেই। এটি মূলত প্রতারণামূলক। তারা এই চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেখিয়ে সারাদেশে বেকারদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কারো কাছ থেকে চার লাখ, তিন লাখ আবার কারো কাছ থেকে দুই লাখ পর্যন্ত টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে চক্রটি সরকার এবং সাধারন জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে।