সুজন কৈরী: [২] সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বন্ধুত্ব করে ডলার বা গিফট দেয়ার নামে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাতকারী চক্রের ১৫ জনকে গ্রপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। বৃহস্পতিবার রাজধানীর পল্লবীর ১১ নম্বর সেকশনের সি বøকসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। বাংলাদেশে বৈধ ভিসা নিয়ে ব্যবসার উদ্দেশে আসলেও গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ৭ জন পাসপোর্ট ছিড়ে ফেলেছেন।

[৩] শুক্রবার দুপুরে মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে গ্রেপ্তারকৃতদের আনা হলে তারা হই হুল্লোড় করে নিজেদের নির্দোষ দাবি করলেও সিআইডি বলছে, দীর্ঘদিন ধরে তারা অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। তাদের কারো ভিসার মেয়াদ নেই। বাংলাদেশে অবস্থান করে ডলার বা গিফট দেয়ার নাম করে মানুষকে বোকা বানিয়ে প্রতারণা করছিলেন।

[৪] গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- এনজুবেচুকোউ এউগেন দারা (৩০), চুয়াউমা জন ওকেচুকোউ (৪০), উচেন্না দামিয়ান এমেইসিয়ানি (৩০), চিসম অ্যান্থনি একোয়েঞ্জি (৩৫), সাইমন ইফেচুকোউয়েদে ওকাফর (৩০), হেনরি ওসিতা ওকেচুকোউ (৩১), আইফিনয়ি জনপল চিনউইজে (৩২), ওকেকে পিটার (৩২), এমেকা দোনাতাস (৪৮), গোজি ওনইয়েদো (৪৭), পিটার চিকা আকপু (৪৮), ওবিন্না সানডে (৪০), এনওয়ান্না ইয়াং (৩৪), জেরেমিয়াহ চুকউদি এজেওবি (৩৪) ও স্টিফেন ওজিওমা ওবাইকোয়েজে (৩৪)। তাদের কাছ থেকে প্রতারণায় ব্যবহৃত ৯টি ল্যাপটপ, ২২টি মোবাইল ও ৫টি হিসাবের ডায়েরি উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পল্লবী থানায় একটি মামলা করেছেন প্রতারণার শিকার একজন সরকারি চাকরিজীবী।

[৫] এ বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ রেজাউল হায়দার বলেন, আমেরিকান নারী সেনা অফিসারের ভুয়া ফেসবুক আইডি ও হোয়াট্স অ্যাপ ব্যবহার করে গ্রেপ্তারকৃতরা বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের মানুষের সঙ্গে ল্যাপটপ ও মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে ব্যক্তিগত আকর্ষণীয় ছবি পাঠিয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করে। পরে মেসেজের মাধ্যমে বলে, তিনি ইয়েমেন, আফগানিস্তান বা সিরিয়াতে আছেন। তার কাছে কয়েক মিলিয়ন ডলার রয়েছে, কিন্তু ওই দেশে যুদ্ধ চলমান থাকায় যেকোনো সময় সেগুলো নষ্ট হতে পারে। তাই নতুন বন্ধুকে ডলার বা এই মূল্যমান সম্পদ গিফট করতে চান। যদি বেঁচে থাকেন তাহলে এগুলো পরে ফেরত নেবেন।

[৬] তিনি আরও বলেন, এই ধরনের প্রলোভন দিয়ে প্রথমে বন্ধুদের ঠিকানাসহ মোবাইল নম্বর নেয় এবং ওই ঠিকানায় বন্ধুদের মেসেঞ্জার বা হোয়াট্স অ্যাপে গিফট প্যাকেটের ছবি পাঠায়। এরপর মেসেজে যেকোনো একটি এয়ারলাইনসে গিফট প্যাকেটটি বুকিং দেয়া হয়েছে এমন রশিদের ছবি পাঠায়। ঠিক দুই দিন পর বন্ধুর (ভুক্তভোগীর) মোবাইলে ফোন করে ভিডিওকলে এয়ারপোর্ট কাস্টমস অফিসে থাকা গিফট প্যাকেট দেখায় এবং কাস্টমসের ভ্যাট বাবদ বিভিন্ন ধাপে টাকা নিতে থাকে। এভাবে এক সরকারি চাকরিজীবীসহ অসংখ্য লোকের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। ভুক্তভোগী ওই সরকারি চাকরিজীবীর কাছ থেকেই হাতিয়ে নিয়েছে সোয়া ৫ লাখ টাকা। পরে গণমাধ্যমে জানতে পেরে আর টাকা না পাঠিয়ে সিআইডিকে বিষয়টি জানান প্রতারণার শিকার ওই সরকারী চাকরিজীবী। এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে অনেক লোকের কাছ থেকে চক্রটি বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

[৭] শেখ রেজাউল হায়দার বলেন, এ পর্যন্ত আমাদের পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, চক্রটি ভারত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দুবাই, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের মানুষকে বোকা বানিয়ে গিফট দেয়ার নামে প্রতারণা করে নিজ নিজ দেশের সহযোগী ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তারা একটি আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্র। প্রতিটি দেশেই চক্রের একজন করে সহযোগী রয়েছে।

[৮] সিআইডি কর্মকর্তা বলেন, এর আগে সিআইডি প্রায় একইভাবে প্রতারণা করায় গত ২ জুলাই, ৩ জন ও ২১ জুলাই ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের সঙ্গে বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার ১৫ জন প্রত্যেকটি ঘটনায় প্রতারণার টাকা গ্রহণে ব্যবহৃত এক বা একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের নাম মিলে যাচ্ছে। এ থেকেই বোঝা যায়, বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে থাকলেও মূলত তিনটি দল একই চক্রের। তারা এ পর্যন্ত ৫ থেকে ৭ কোটি টাকা প্রতরণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে।

[৯] রেজাউল হায়দার জানান, প্রতারক চক্রটির অনেকে স্টুডেন্ট, খেলাধুলা বা ব্যবসা ভিসায় এসে এই অপরাধে জড়িত হচ্ছে। দেশে নাইজেরিয়ান কমিউনিটি তৈরি করেছে। এরা ঘন ঘন বাসা পরিবর্তন করে। তাই বিদেশীদের বাসা ভাড়া দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক হতে পরামর্শ দেন তিনি। প্রতারক চক্রে দুজন বাংলাদেশি নারী সহযোগী রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।