মো. আখতারুজ্জামান : [২] পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, সুদৃঢ় অতীতকাল হতেই বৃটেন বিশ্ববাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে, যা সাম্প্রতিক সময়ে আরো বেড়েছে। ব্রেক্সিট পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ২০২৭ সাল পর্যন্ত বৃটেনে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা নিয়ে পণ্য রপ্তানি করতে পারবে, যা আমাদের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক একটি বিষয়।
[৩] বুধবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি আয়োজিত এক ওয়েবিনারে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম প্রধান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রাবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন এবং যুক্তারাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম।
[৪] শাহরিয়ার আলম বলেন, দু’দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়নে, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ক ডায়ালগ আয়োজন, দু’দেশের বাণিজ্য সংগঠনসমূহের মধ্যে যোগাযোগ আরো সুদৃঢ় করতে হবে। বৃটিশ-বাংলাদেশীদের আরো বেশি হারে বাংলাদেশে বিনিয়োগে উৎসাহী করার প্রস্তাব করেন।
[৫] তিনি বলেন, বাংলাদেশ তরুণ জনগোষ্ঠী তথ্য-প্রযুক্তিখাতে বেশ সম্ভাবনাময় এবং এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বৃটিশ তথ্য-প্রযুক্তি ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানসমূহ বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারে।
[৬] ডিসিসিআই সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগকারী দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্যের অবস্থান দ্বিতীয়, যেখানে ২০২০ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত যুক্তরাজ্য ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানসমূহ বাংলাদেশে ২.৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। দেশে বৃটিশ বিনিয়োগ আকর্ষণে তিনি নতুন পণ্যের উদ্ভাবন এবং পণ্যের বহুমুখীকরণে উপর জোরারোপ করেন।
[৭] অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগ আরো বৃদ্ধিতে তিনি বাংলাদেশী রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ, যথাযথ নীতিমালা ও কৌশল প্রণয়ন, ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় হ্রাস, দ্রুততম সময়ে অবকাঠামো এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর কার্যক্রম বাস্তবায়ন, খুবই জরুরি বলে মত প্রকাশ করেন।
[৮] যুক্তারাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম বলেন, বৃটিশ বাণিজ্য সংগঠনসমূহ বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনা এবং ব্যবসা-বাণিজ্য খাত বিষয়ে খুব বেশি অবগত নয়। সেই সঙ্গে এ অবস্থা উত্তরণে বাংলাদেশের চেম্বার ও এসোসিয়েশনগুলোকে যোগাযোগ আরো বৃদ্ধি করতে হবে।
[৯] বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রাবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ একান্ত আবশ্যক।
[১০] তিনি জানান, বাংলাদেশের ঔষধ, তথ্য-প্রযুক্তি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সেবা এবং আর্থিক খাতসমূহে বৃটিশ বিনিয়োগ আকর্ষণে যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।
[১১] হাইকমিশনার বলেন, সম্প্রতি বৃটেনে ‘বাংলা বন্ড’ চালু হয়েছে, যা দু’দেশের উদ্যোক্তাদের আত্নবিশ^াস ফিরিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তিনি দুদেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণে বাংলাদেশস্থ বৃটিশ হাইকমিশন হতে সর্বাত্নক সহযোগিতার আশ^াস প্রদান করেন।
[১২] প্রাণ আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী বৃটেনে বাংলাদেশী পণ্য ও সেবা রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণে দু’দেশের মধ্যকারমুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর, রপ্তানি পণ্যের বহুমুখী করতে হবে। বাংলাদেশী কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো বেশি হারে লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে প্রবর্তিত ‘বাংলা বন্ড’-এ বিনিয়োগ করার প্রস্তাব করেন।
[১৩] রহিম আফরোজ স্টোরেজ পাওয়ার বিজনেসের নির্বাহী পরিচালক ফারাজ এ রহিম, বৃটেনে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতের পণ্য রপ্তানির উপর জোরারোপ করেন। বাংলাদেশে বৃটিশ বিনিয়োগ আকর্ষণে আমাদের স্থানীয় উদ্যোক্তাদের সাথে যুক্তরাজ্যের কোম্পানীগুলোকে যৌথ বিনিয়োগে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
[১৪] ইনসেপটা ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মোক্তাদির বৃটেনে বাংলাদেশী ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যের নিবন্ধন পেতে সেদেশের এমএইচআরএ’র সাথে বাংলাদেশী ঔষধ নিয়ন্ত্রন সংস্থার যোগাযোগ স্থাপনে বাংলাদেশস্থ বৃটেনের দূতাবাসকেসহযোগিতার আহ্বান জানান।
[১৫] তিনি জানান, যুক্তরাজ্যে প্রায় ৪-৫ বিলিয়ন বৃটিশ পাউন্ডের জেনেরিক বাজার রয়েছে, যা আমাদের ফার্মাসিউটিক্যাল খাতের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময়।
[১৬] বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, সফটওয়্যার এবং তথ্য-প্রযুক্তি সেবাখাতে গতবছর বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এখাতে পণ্য রপ্তানিতে যুক্তরাজ্যর অবস্থান দ্বিতীয়। তিনি ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবট তৈরিতে নিয়োজিত যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমাদের হাইটেক পার্কে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
[১৭] ডিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি হোসেন খালেদ বলেন, তৈরি পোষাকের বাইরে বৃটেনে বাংলাদেশী পণ্য রপ্তানির পরিমাণ মাত্র ৭ শতাংশ। সেই সঙ্গে এ অবস্থা উত্তরণে আমাদের পণ্যের বহুমুখীকরণের কোন বিকল্প নেই।
[১৮] তিনি দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ সম্প্রসারণে ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় হ্রাস এবং ভ্যালু চেইন স্থাপনের প্রস্তাব করেন। হোসেন খালেদ বলেন, বাংলাদেশের সেবাখাতে বৃটিশ বিনিয়োগের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে এবং এ লক্ষ্য পূরণে দুদেশের উদ্যোক্তাদের যৌথ বিনিয়োগে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
আপনার মতামত লিখুন :