প্রভাষ আমিন: ক্রসফায়ার হলো আসলে ঠাণ্ডা মাথার খুন। এভাবে কয়েক হাজার মানুষকে খুন করা হলেও কোনো বিচার হয়নি। বরং আত্মরক্ষার অধিকারের কথা বলে সেই খুনের পক্ষে সিনিয়ররাও সাফাই গেয়ে সেই খুনি পুলিশকে আরও একটি খুনের দিকে এগিয়ে দেয়। একটি শৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য ‘মোরাল হাই’ মানে উচ্চ নৈতিক মনোবলটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বিচারহীন, জবাবদিহিতাহীন অবাধ ক্রসফায়ারের মানে মানুষ খুনের সুযোগ পুলিশ বাহিনীর নৈতিক মনোবলকে শূন্যে নামিয়ে এনেছে। পুলিশ কার্যত এখন খুনে বাহিনী। পুলিশকে দিয়ে যখন আপনি একটা অন্যায় কাজ করাবেন, সে তখন আরো দশটা অন্যায় করে নেবে। ক্রসফায়ার হলো সকল অন্যায়ের গোড়া। ক্রসফায়ার মানে একগুচ্ছ অন্যায়ের সমাহার। প্রথমে ঠাণ্ডা মাথায় খুন, তারপর একটি ডাহা মিথ্যা গল্প, তারপর সেই খুনকে জায়েজ করার জন্য খুন হয়ে যাওয়া মানুষটির চরিত্রহনন। একই ফর্মুলা চলে আসছে বছরের পর বছর।
মেজর (অব.) সিনহার ক্ষেত্রে তার চরিত্র হনন করার সাহস পায়নি পুলিশ। এখন সবাই পড়েছে তার সহকর্মী শিপ্রা দেবনাথের চরিত্র হননে। আর বাংলাদেশে নারীর চরিত্র হননের চেয়ে সহজ আর কিছু নেই। তার হাতে সিগারেট আর মদের বোতলসহ কিছু ছবি নেট দুনিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। দুর্ভাগ্যজনক হলো, সেই ছবিগুলো প্রচার করছেন, পুলিশের সদস্যরাই বেশি। আর সেইসব ছবির নিচে যেসব নোংরা মন্তব্যের ঢল, প্রতিটির জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হতে পারে। প্রথম কথা হলো, মেজর (অব.) সিনহাকে যেখানে খুন করা হয়, শিপ্রা সেখানে ছিলেন না। শিপ্রা সিগারেট খায় না মদ খায়, তাতে কার কী যায় আসে।
বাংলাদেশে সিগারেট খাওয়াও অপরাধ নয়, একজন হিন্দু সম্প্রদায়ের নারীর মদ খাওয়াও অপরাধ নয়। তাহলে তাকে কেন এভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হেয় করা হচ্ছে? যেহেতু পুলিশই এগুলো ছড়াচ্ছে বেশি। তাই ধরে নিচ্ছি, শিপ্রা এর প্রতিকার চাইতেও পুলিশের কাছে যেতে পারবে না। শিপ্রা মদ-সিগারেট খায়, এতে কিন্তু সিনহা হত্যা জায়েজ হয়ে যায় না। আমি একটা জিনিস বুঝি না, প্রদীপ আর লিয়াকতের মত খুনিদের বাঁচাতে পুলিশের অন্য সদস্যরা এমন উঠে পড়ে লেগেছেন কেন? ৭ জন খুনির বিচার হলে পুলিশের ভাবমূতি উজ্জ্বল হবে, বাহিনীর মোরাল হাই হবে। তাদের বাঁচাতে চাইলে বরং পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি আরও ক্ষুন্ন হবে। ফেসবুক থেকে