নূর মোহাম্মদ : [২] বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড যেন থামছেই না। ক্রসফায়ার, বন্দুকযুদ্ধ বা এনকাউন্টার নামে আইনশৃঙ্খলাবাহীনির হাতে এসব হত্যাকাণ্ড মাঝে মধ্যেই আলোচনার ঝড় তোলে। সম্প্রতি কক্সবাজারে পুলিশের গুলিতে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের মৃত্যুর ঘটনায় বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
[৩] এর আগে কক্সবাজার-টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ সড়কে কথিত বন্দুকযুদ্ধে কাউন্সিলর একরামুল হকের মৃত্যুর পর একে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে অভিযোগ তোলে তার পরিবার। তবে শুধু সিনহা বা একরামই নন-এরকম বেশ কয়েকটি ঘটনায় সারাদেশে ব্যাপক আলোচনা হয়।
[৪] দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংঘটনের পক্ষ থেকে বার বার দাবি তোলা হয়েছে বিনা বিচারে এসব হত্যা বন্ধ করার জন্য। তবে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও মানবাধিকার সংগঠনের দাবির তোয়াক্কা না করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে একের পর এক হত্যাকাণ্ড চলছেই। এসবের সঙ্গেও জড়িতদের সঠিক বিচার না হওয়ায় অন্যরাও উৎসাহিত হচ্ছে বলে জানান আইনজীবীরা।
[৫] এদিকে বাংলাদেশে আর একটিও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড দেখতে চায় না রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (রাওয়া)। রাওয়ার চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর খন্দকার নুরুল আফসার সোমবার বলেছেন, ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চিরদিনের জন্য বন্ধ করতে হবে। পুলিশ বাহিনীকে পুনর্গঠন করতে হবে।
[৬] বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধে ২০০৬ সালে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) হাইকোর্টে রিট করে। রিটের প্রাথমিক শুনানি করে রুল জারি করা হয়। রুলে নিরাপত্তা হেফাজতে আটক ব্যক্তিদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চান আদালত। এখনো সেই রুল নিষ্পত্তি হয়নি।
[৭] বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) এবং কর্মজীবী নারী জনস্বার্থে ২০০৯ সালে রিট করেন। শুনানি শেষে ক্রসফায়ারের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কেন অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, এ মর্মে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এ রুল এখনো নিষ্পত্তি হয়নি ।
[৮] এছাড়া ২০০৯ সালে মাদারীপুরে বন্দুকযুদ্ধে লুৎফর খালাসী ও খায়রুল খালাসী নিহত হন। পরে গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে হাইকোর্ট সুয়োমোটো রুল জারি করেন। ওই রুলও এখনো পর্যন্ত নিষ্পত্তি হয়নি।
[৯] সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, এসব বিচারবর্হিভূত হত্যা বন্ধ হওয়া উচিৎ। এটা গর্হিত অন্যায় এবং আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুল দেখানো। অস্ত্র জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য নয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য। ১০ শতাংশ লোকের কারনে পুরোবাহিনীর বদনাম হচ্ছে।
[১০] এইচআরপিবি’র প্রেসিডেন্ট মনজিল মোরসেদ বলেন, ১৪ বছরেও রুল নিষ্পত্তি না হওয়া প্রমাণ করে বিচার বিভাগের দুর্বলতা রয়েছে। আমরা বার বার চেষ্টা করেছি রুল শুনানি করার। সরকার এখনো রুলের জবাবও দেয়নি। জবাব না দিলে তো শুনানিও করা যায় না। রাষ্ট্রপক্ষের সহযোগীতা না পেলে শুনানি করা কঠিন। নিয়মিত কোর্ট খোললে আমরা আবারো শুনানির উদ্যোগ নেব।
[১১] তিনি বলেন, ক্রসফায়ারের গল্পটা এখন আর মানুষ বিশ্বাস করেনা। অনেক ওসি একে অর্থ উপার্জনের হাতিয়োর হিসেবে ব্যবহার করছেন। এসব বন্ধ করতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যারা থাকবেন তাদের কমিটমেন্ট দরকার। এছাড়া সরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও রাজনৈতিক দলের প্রভাব বন্ধ করে অপরাধীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে জোর দেন এই মানবাধিকার কর্মী।
আপনার মতামত লিখুন :