সাবরিনা শারমিন: স্কুলে যাবার পথেই শৈশব থেকে একজন নারী শিশু বাইরের পরিবেশের সাথে প্রথম পরিচিত হয়। আমাদের বেড়ে ওঠার সময়গুলোতে আমরা বাইরের বিপরীত লিঙ্গের অপরিচিত পুরুষদের মানসিকতা লক্ষ্য করে বড় হয়েছি, যা এখনো দেশের বিভিন্ন্ন পরিস্থিতি দেখে মনে পরে যায়। আমাদের এলাকার অনেক মেয়েই একটি সময়ে এক সাথে কয়েকজন মিলে হেঁটে স্কুলে যেতাম। তাতে ক্লাস সেভেন পর্যন্ত বেশির ভাগ সময়েই হেঁটে যাওয়ার প্রতিই আগ্রহ ছিলো। কারণ তাতে খেলাধুলা করার মতো আনন্দ ছিলো। যাহোক, আমার মতো সকল শিশু মেয়েরাই স্কুলে যাবার পথেই বাইরের জগতের পুরুষদের সাথেই প্রথম পরিচয়ে হয়েছে। তখনের সময়ের মানসিকতার সাথে বর্তমান সময়ের বিপরিত লিঙ্গের মানুষের মানসিকতার যে খুব উন্ন্নতি হয়েছে তা কিন্তু বলা যাচ্ছে না। সে সময়ে চলার পথে শিশুমনে প্রথমদিকে যে পরিচয়টুকু পেয়েছিলাম, তাতে তখন থেকেই অনুভব করেছিলাম, প্রাপ্তবয়স্ক বিপরীত লিঙ্গের বাইরের পরিচিত পুরুষেরা নারী শিশুদের প্রতি ভীষণ হিংসাত্মক। যেন এটিই ওদের মনে বেশি পীড়া দেয় যেন ওদের এটিই মনে হয়, নারী শিশুদের যা আছে ওদের তা নেই কেন?
তাই নারী শিশু দেখলেই তাদের হিংসাত্মক কিছু একটা করা চাই। ঠিক এরকম একটি অবস্থা। একবার ক্লাস সিক্সে বান্ধবীদের সাথে হেঁটে স্কুলে যাচ্ছিলাম। আমাদের যাওয়ার পথে রাস্তায় বড় বড় ট্রাক চলাচল করতো। ওই ট্রাকের উপররের এক সাথে গোটা দশেক লোক চোখে পরতো যারা মেয়েদের দেখলে একসাথে হাসাহাসি করতো আর নাচানাচি করতো। কখনো হয়তো আমড়ার আটি ছুড়ে মারতো, লুঙ্গি উঁচু করে দেখাতো। আবার একজনের দেখাদেখি অন্যরাও সেটা করতো। মাঝে মাঝে ওরা ট্রাকের উপর থেকে ইটের টুকরাও ছুঁড়ে মারতো। একবার অনেক বড় একটি তিন কোণা ইটের টুকরো কোথা থেকে যেন আমার কপালের বা দিকে হঠাত করে এসে বলের মতো ফুলিয়ে দিয়ে গেলো। আমি মুহূর্তেই যেন সেন্স হারিয়ে ফেলেছিলাম কপালের অংশের দিকটায়। হাত দিয়ে দেখি ছোট ক্রিকেট বলের মতো একটি বল হয়ে গেছে। সাথে অল্প অল্প রক্ত। বুঝতে বাকি রইলো না এই কাজ ট্রাকের উপরের ওই লোকদের কাজ। ওরা এসব করে ভীষণ আনন্দ উপভোগ করতো। এসব করে হাসিতে লুটিয়ে পরতো। মনে হতো ওদের যেন আমাদের উপর কীসের একটা রাগ আর ক্ষোভ, যা তাদের অন্যকে আঘাত করা থেকে বিরত রাখতে পারতো না। গত শুক্রবার একজন নারী পর্বতারোহী সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফেরার সময় সংসদ ভবন এলাকায় চন্দ্র্রিমা উদ্যানের পাশে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। আমার কিন্তু এটিকে মোটেও দুর্ঘটনা মনে হচ্ছে না। আমার মনে হচ্ছে তাকে গাড়ি চাপা দেওয়া মানুষটি আমাদের ছেলেবেলার সেই ইট ছুঁড়ে মারা লোক ওটি। নারী হয়ে সাইকেল চালাচ্ছে , তাই তাদের চাপা দেওয়ার ইচ্ছে হয়েছে। মেরে ফেলার ইচ্ছে হয়েছে। তাই মেরে ফেলেছে। এ ছাড়া ওদের আর উপায় নেই। এটি ওদের জন্য আনএভিটেবল। এটি ওদের করতেই হয়। ফেসবুক থেকে