তপন মাহমুদ লিমন: শিপ্রা রানী দেবনাথ, সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও তাহসিন রিফাত নূরÑ এরাও হত্যার শিকার হতে পারতন। স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এই তিন শিক্ষার্থীই, যারা নিহত অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহার সঙ্গে ছিলেন বা যে কেউ। বাড়তি কয়েকটা গুলি খরচ হতো। কাউকে এতো সহজে মেরে ফেলা যায়, তা যে এখনই বুঝতে পেরেছি তা নয়। পৃথিবীর ইতিহাস পাঠের ফলে সে ধারণা অনেক আগেই লাভ করেছি। কিন্তু এই সহজ হত্যাকেও যে দিনের পর দিন বৈধতা দেওয়া যায়, তা চোখের সামনে দেখছি অনেকদিন ধরে। রোজ অবাক হচ্ছি যখন শিক্ষিত বলে দাবি করা মানুষজনকেও বোঝাতে কষ্ট হয়, ক্রসয়ায়ার কোনো বিচার নয়, এটা বিনা বিচারে হত্যা-এটা ভালো নয়।
আফসোস আরো লাগে যখন, সংসদে খোদ আইন প্রণেতারাও ক্রসফায়ার দাবি করেন ঘটনার বিচারে। যাদের কাজ তদন্ত করা তাদের হাতে বিচারের ভার তুলে দিলে, আদালত রেখে লাভ কী? অনেক সাধারণ মানুষকেও বলতে শুনি, বিচারের আশা করে লাভ নেই, তাই ক্রসফায়ারেই খুশি। কিন্তু তাতে যে আইনের শাসনের ‘বারোটা’ বেজে যাচ্ছে তার খেয়াল করার সময় কই? আমরা নিজেরা আক্রান্ত হবার আগে কোনো কিছু বুঝি না। বুঝতে চাইও না।
আইন ও বিচারের মূলনীতি হলো, কোনো নিরপরাধ মানুষ যেন সাজা ভোগ না করেন। আর একটা মানুষ অপরাধী কিনা, তা প্রমাণের দায়িত্ব আদালতের। আর এই ব্যবস্থা কতোটা স্বচ্ছ তার উপর নির্ভর করে সমাজে বা রাষ্ট্রে আইনের শাসন আছে কিনা? সভ্যতারও মাপকাঠি এটা। বিনা বিচারে হত্যা প্রমাণ করে এই সমাজে গণতন্ত্র নেই, বিচার নেই, মনুষ্যত্ব নেই। আর আমার কাছে মনে হয়, বিনা বিচারে হত্যা শুধু অপরাধই নয়, পাপও। এই অপরাধ ও পাপে গোটা জনপদ যখন আক্রান্ত, তখন আমি বা আপনি যারা এর বিনা বিচারে হত্যার বিরুদ্ধে তারা নেহায়েত সংখ্যালঘু। তাদের কথার দাম এ সমাজে নেই। যদিও ইতিহাস বলবে, সবচেয়ে দামী কথাগুলো এরাই বলছে। তাই, বারবার বলে যাই ক্রসফায়ার নামের হত্যাকাণ্ড বন্ধ করুন। ক্রসফায়ারের সঙ্গে অগণতন্ত্র, দুর্বল বিচারিক ব্যবস্থা, পুলিশি রাষ্ট্র, বিরাজনীতিকরণ এইসব রাজনৈতিক প্রত্যয়গুলোর গভীর সম্পর্ক আছে, এটা উপলব্ধি করাও জরুরি।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, সাংবাদিকতা বিভাগ, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ
আপনার মতামত লিখুন :