মাসুদ রানা: ইংরেজিতে cultural sensitivity বলে একটি কথা আছে। যেটির বাংলা হতে পারে সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতা। লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটসসহ বিভিন্ন বারায় প্রচুর বাঙালির বাস, যাদের সিংহভাগ ধর্মে মুসলিম। বাঙালি ছাড়াও বিভিন্ন জাতিসত্তার মুসলিম আছে এখানে এবং সারা লন্ডনে। আমি সারা লন্ডনের স্কুলগুলোর কথা জানি না। তবে টাওয়ার হ্যামলেটসের কথা নিশ্চিত জানি যে, এখানে কোনো স্কুলেই শূকরের মাংসের তৈরি কোনো খাবার পরিবেশন করা হয় না। কারণ মুসলমানেরা বা ইহুদিরাও শূকরের মাংস খায় না। ইংল্যান্ড ক্রিশ্চিয়ান প্রধান দেশ। যেখানে মুসলমানেরা অতি ক্ষুদ্র একটি সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়। সংখ্যাগুরু হওয়ার পরও শূকরের মাংস প্রিয় সংখ্যাগুরু ক্রিশ্চিয়ানরা স্কুলের খাদ্য তালিকা থেকে সেটি বাদ দিয়েছে। এই যে অন্যের সংস্কৃতি ও ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে তাদের এ্যাকোমৌডেইট করার বিবেচনাবোধ। এটিই হচ্ছে ‘পঁষঃঁৎধষ ংবহংরঃরারঃু’ বা সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতা। বাসদ আদর্শগতভাবে একটি মার্ক্সবাদী হওয়ার কারণে ধর্মনিরপেক্ষতো বটেই, এমনকি নিরীশ্বরবাদী। কোনো ধর্মের প্রতি এই দলের পক্ষপাত থাকার কথা নয়। যদিও আমি বাসদ করি না।
কিন্তু বিশ্বাস করি না যে, বাসদ বরিশালে ‘কোরবানি’ দিয়েছে। কিন্তু এটি আমি নিশ্চিত বলব যে, বাসদ নেতৃত্বের সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতার অভাব আছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পটভূমি থেকে আসা ডা. মণীষা চক্রবর্তী বাসদের নেত্রি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার কারণে, বাসদ একদিকে যেমন ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সমূহের কাছে একটি আস্থার স্থান অর্জন করেছিল। অন্যদিকে এই দলটির সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতার কারণে তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাসদ সহজেই ৫টি গরু জাবাই না করে সমমূল্যের অনেকগুলো খাসি কেটে তাদের মাংস বিতরণ করতে পারত। কোনো প্রকারের বৈষম্য ও কোনো সম্প্রদায়ের বিশ্বাস ও আবেগকে আহত করা ছাড়া। আমি বাসদের নেতা হলে, কখনও গরু কোরবানি দিয়ে মাংস বিতরণের এই কর্মসূচির অনুমোদন দিতাম না। আমি বলতাম, মানুষকে মাংস খাওয়াতে হলে গরু নয়, খাসির মাংস খাওয়াতে। পরিশেষে বলব, বাসদসহ সকল রাজনৈতিক সংস্থাকেই এই সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতার বিষয়টি মনে রেখে ও ধারণ করে চলতে হবে। বাসদের উচিত বরিশালের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে বিষয়টিকে সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে একটি অসংবেদনশীল কর্ম হিসেবে মূল্যায়ন করে বিষয়টির ইতি টানা। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :