ডেস্ক রিপোর্ট : দেশের উত্তরে অবস্থিত ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি হ্রাস অব্যাহত আছে। ২৪ ঘণ্টায় বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে সর্বোচ্চ ২০ সেন্টিমিটার কমেছে। একই হারে কমছে আপার মেঘনা অববাহিকার বিভিন্ন নদ-নদীর পানি। কিন্তু করতোয়া, গুড়, আত্রাইয়ের মতো যমুনার শাখা নদীগুলোর পানি ধীরগতিতে হ্রাস পাচ্ছে। পদ্মা থেকেও পানি নামছে খুব ধীরগতিতে।
যমুনার মতো পদ্মাও কোনো কোনো পয়েন্টে বিপদসীমার অনেক উপরে বইছে। যদিও বন্যা কবলিত স্থানগুলো থেকে বানের পানি নেমে যাচ্ছে, কিন্তু এখনও ১৭ জেলার মানুষ ভাসছেন বন্যার পানিতে। পানি বাড়ছে ঢাকার আশপাশের সব নদ-নদীতে।
উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে মেঘনায় ব্যাপকহারে প্রবাহ বেড়েছে। এতে চাঁদপুর থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত মেঘনা এবং এর শাখা নদীগুলো পানিতে টইটম্বুর হয়ে পড়েছে। শেরপুর-জামালপুর সড়ক যোগাযোগ এখনও বন্ধ রয়েছে।
সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (এফএফডব্লিউসি) বলেছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি সমতল আরও ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে। পদ্মার পানি ২৪ ঘণ্টা এবং আপার মেঘনার পানি আরও ৪৮ ঘণ্টা হ্রাস অব্যাহত থাকতে পারে।
কিন্তু স্থিতিশীল আছে গঙ্গা আর ঢাকার আশপাশের নদ-নদীর পানি। আগামী ২৪ ঘণ্টায় গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নওগাঁ, নাটোর, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হতে পারে। কিন্তু রাজধানীর নিম্নাঞ্চল থেকে বন্যার পানি হ্রাস শুরু হতে আরও ২৪ ঘণ্টা লাগতে পারে।
এফএফডব্লিউসি ও আবহাওয়া বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ভেতরে ও বাইরে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত আছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিংয়ে ৬৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
আসাম, মেঘালয়সহ পূর্বাঞ্চলীয় অন্য রাজ্যগুলোতে উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত নেই। দেশের ভেতরে সাতক্ষীরায় ৭৫, যশোরে ৭৩ মিলিমিটার, রাজশাহীতে ৬৪ ও চট্টগ্রামে ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া প্রায় সারা দেশেই কম-বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
সাধারণত একদিনে ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হলে তা স্থানীয় এবং ৩০০ মিলিমিটার পরিমাণ বৃষ্টি হলে তা অন্তত ১০ দিনব্যাপী বন্যার সৃষ্টি করে। সেই হিসাবে বিদ্যমান বৃষ্টিপাত নদীগুলোতে বন্যার পানিতে যুক্ত হচ্ছে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, অন্তত ১৫টি নদী ২৪টি স্থানে বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে- পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, করতোয়া, গুড়, আত্রাই, ধলেশ্বরী, বালু, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ, টঙ্গী খাল, কালিগঙ্গা, বংশী, আড়িয়ালখাঁ ও তিতাস।
এগুলোর মধ্যে পদ্মা গোয়ালন্দ, ভাগ্যকুল, মাওয়া ও সুরেশ্বর পয়েন্টে প্রবাহিত হচ্ছে বিপদসীমার উপরে। গোয়ালন্দ পয়েন্টে সবচেয়ে বেশি ৭৩ সেন্টিমিটার উপরে আছে পানি। নাটোরের সিংড়ায় গুড় নদী আছে বিপদসীমার ৭০ সেন্টিমিটার উপরে। এই নদী থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় মাত্র ৪ সেন্টিমিটার পানি কমেছে।
যমুনার অন্য শাখা নদী থেকেও একইভাবে পানি খুব কমই কমছে। অন্যদিকে ঢাকার চারপাশের নদীতে বাড়ছে পানি। নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যায় ২ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে ২৪ ঘণ্টায়। এ নদীটি আছে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপরে।
ধলেশ্বরী ঢাকা জেলার জাগির পয়েন্টে বিপদসীমার ৬৭ সেন্টিমিটার উপরে আছে। এছাড়া বংশী নায়েরহাটে ২১ সেন্টিমিটার, টঙ্গীতে টঙ্গীখাল ৩৬ সেন্টিমিটার, ডেমরায় বালু ১৮ সেন্টিমিটার এবং মিরপুরে তুরাগ নদ ৪৬ সেন্টিমিটার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। ধলেশ্বরী বাদে বাকি সব নদীতে গত ২৪ ঘণ্টায় পানিপ্রবাহ বেড়েছে।
প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
শেরপুর : শেরপুরের বন্যার পানি কমা অব্যাহত থাকায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। বন্যার পানি সরে যাওয়ার পর বিভিন্ন স্থানে বন্যার ক্ষয়ক্ষতির চিত্র ভেসে উঠতে শুরু করেছে। শেরপুর ব্রহ্মপুত্র সেতুর কাছে ব্রহ্মপুত্রের পানি ২৪ ঘণ্টায় আরও ৫ সেন্টিমিটার কমে তা এখন বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা এফএম মোবারক আলী বুধবার দুপুরে জানান, বন্যায় বীজতলা, আউশ ধান, রোপা আমন, পাট ও সবজিসহ ২ হাজার ১৬০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। আগামী ২-১ দিনের মধ্যে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ শুরু করা হবে।
কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে সব নদনদীর পানি দ্রুতই কমছে। ফলে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও দুধকুমরসহ সবক’টি নদ-নদীর পানি বিপদসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ফলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। তবে বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। সদর উপজেলার শুলকুর বাজার এলাকার বাসিন্দা মহিতুল্লাহ সরকার জানান, পানি কমতেছে কিন্তু বাড়ি যেতে আরও কয়েকদিন লাগবে। কারণ আমাদের বাড়িতে এক হাটু কাদা ও ঘরবাড়ি মেরামত করতে হবে।যুগান্তর, বিডি নিউজ