শিরোনাম
◈ শ্রীলঙ্কার কা‌ছে আফগা‌নিস্তান হে‌রে যাওয়ায় সুপার ফো‌রে খেলার সু‌যোগ পে‌লো বাংলাদেশ ◈ বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নিয়ে টিউলিপের মিথ্যাচার, নতুন সংকটে স্টারমার: ডেইলি এক্সপ্রেসের রিপোর্ট ◈ শুধু অতীতের নয়, বর্তমানের দুর্নীতি থামাতেও নজর দিতে হবে: বিদ্যুৎ উপদেষ্টা ◈ বাংলাদেশ ও চীন সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নিতে একসাথে এগিয়ে যাবে : প্রধান উপদেষ্টা  ◈ সাফ চ‌্যা‌ম্পিয়নশী‌পে নেপালকে ৪-০ গো‌লে হারা‌লো বাংলাদেশ ◈ শ্রীলঙ্কার প্রতি বাংলা‌দে‌শের সমর্থন, চোখ এড়ায়নি লঙ্কান ক্রিকেট বোর্ডের ◈ আফগানিস্তান-শ্রীলংকা ম্যাচের ফল যেমন হলে লাভ বাংলাদেশের ◈ নির্বাচনী দায়িত্বে অপরাধের সাজা বাড়ছে: অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন ◈ দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত সম্পূর্ণভাবে পৃথক করলো সরকার ◈ কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার পক্ষে নয় বিএনপি : সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরে মির্জা ফখরুল

প্রকাশিত : ১৬ জুলাই, ২০২০, ০১:৫২ রাত
আপডেট : ১৬ জুলাই, ২০২০, ০১:৫২ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দীপক চৌধুরী : আগে দুর্নীতিটাই নীতি ছিল, ভুলে গেছেন অনেকেই

দীপক চৌধুরী : আগে দুর্নীতিবাজ, লুটেরা, অর্থপাচারকারী ও দুর্বৃত্তদের ধরা হত না। এখন ধরা হচ্ছে, গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, বিচার-শাস্তি হচ্ছে। গণমাধ্যমে এদের ইতিহাস আর অপকর্ম তুলে ধরা হচ্ছে। এদেশে কারাগারের ভিতর ঢুকে রাজনীতিবিদদের হত্যা করা হয়েছিল, এর চেয়ে বড় নৃশংস ঘটনা ও অপরাধ আর কী কিছু হতে পারে? জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়েছে। এরচেয়ে বড় ঘটনা কী আছে আর? অনেকেই বলে থাকেন যে, আজকের বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় দুর্নীতির বিষবৃক্ষ। সেসব কথায় পরে আসছি। কারণ, শুনেছি শুধু সাহেদ- ডা. সাবরিনা- আরিফ নয়, শিগগিরই নাকি আরো চমক আসবে!

১৬ জুলাই, আজ। ২০০৭ সালের এই দিনে দেশে জরুরি অবস্থা চলাকালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ধানমন্ডির বাসভবন সুধাসদন থেকে বঙ্গবন্ধুকন্যা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আওয়ামী লীগ এবং তার অঙ্গও সহযোগি সংগঠন দিনটি ‘ ‘শেখ হাসিনা’র কারাবন্দি দিবস’ হিসাবে পালন করে থাকে। কৃষক লীগ দিনটি ‘গণতন্ত্র অবরুদ্ধ দিবস’ নামে পালন করে। সেই নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা গণমানুষের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতীক। মনোকষ্ট নিয়ে সম্প্রতি বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট , অনিয়মে জড়িত, আমরা যাকেই পাচ্ছি এবং যেখানেই পাচ্ছি তাকে ধরছি। আর ধরছি বলেই, চোর ধরে যেন চোর হয়ে যাচ্ছি।’ ‘আমরা ধরি আবার আমাদেরকেই দোষারোপ করা হয়। এটাই হচ্ছে দুর্ভাগ্য। এর আগে তো দুর্নীতিটাই নীতি ছিল। অনিয়মটাই নিয়ম ছিল। সেভাবেই রাষ্ট্র চলেছে।’ হাঁ, এটাই সত্য। করোনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির সাবেক সদস্য ও আলোচিত রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিম। অথচ এই সাহেদ একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। চেক জালিয়াতির একটি মামলায় ১০ বছর আগে ২০১০ সালে তার ছয় মাসের সাজা হয়। তাকে ৫৩ লাখ টাকা জরিমানা করেন ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ। যদি প্রশ্ন করা হয় প্রশাসনে ঘাপটি মেরে এখনো কারা বসবাস করছে? এটা প্রকাশ করা বা ফাঁস করার দায়িত্ব কী আমাদের কারো নয়? অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম কিন্তু একটি মারাত্মক কথা প্রকাশ করেছেন।

সাজাপ্রাপ্ত আসামি হয়েও ১০ বছর ধরে সাহেদের ধরা না পড়া এবং বেশির ভাগ মামলায় খালাস হওয়া প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল গণমাধ্যমে বলেছেন, ‘আমার জানামতে, ব্রিটিশ আমলে এক’শ মামলায় চার্জশিট হলে ৯০ ভাগ মামলায় আসামির সাজা হতো। আর এখন হয়ে গেছে উল্টো। বর্তমানে মামলার ৮৫ থেকে ৯০ ভাগ আসামি খালাস পেয়েছেন। প্রসিকিউশন বিভাগকে ঢেলে সাজানোর সময় এসেছে। অনেকেই বলে থাকেন যে, আজকের বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় দুর্নীতি। এর সাম্প্রতিক ফল পাপিয়া (ওয়েস্টিন), সংসদ সদস্য শহিদ পাপলু (কুয়েত), জি কে শামীম (ঠিকাদার), সাহেদ (রিজেন্ট) ডা. সাবরিনা (জেকেজি) দেশ, সমাজ, অর্থনীতিকে বিষাক্ত করে তুলেছে। বলা যাবে কী দুর্নীতি কখন ছিল না? আগেও ভয়াবহ দুর্নীতি ছিল। কিন্তু ঘটনা চাপা দেওয়া থাকত, এখন গোপন রাখা হয় না, চাপা রাখা হয় না।

চলমান সময়ে, বিশেষত কোভিড-১৯ মহামারিকালে দুর্নীতি সম্পর্কে নতুন করে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে বিষবৃক্ষ আগেও ছিল। রাজনীতিতে দুর্নীতি-দুঃশাসন-খুন এতোটাই ভয়াবহরূপে পৌঁছেছিল যে, যাঁর পরিশ্রম, ত্যাগ-তিতিক্ষা ও আপসহীনতার কারণে আমরা স্বাধীন হয়েছিলাম কিংবা স্বাধীনতা লাভ করেছিলাম তাঁকেই সপরিবারে হত্যার পর সেই হত্যার বিচার বন্ধ করার জন্য ‘ইনডেমনিটি’ পাস করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর ডাকে যে জাতি ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে যুদ্ধ করল, দেশটি পৃথিবীতে নিজের পরিচয়ে দাঁড়াল সেই দেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হল। এবং আইন করা হল, বিচার করা যাবে না। বিদেশে খুনিদের চাকরি দেওয়া, টাকা পাচার করা, দেশের একশ্রেণির রাজনীতিবিদকে চরিত্রহীন বানিয়ে নষ্ট করা হয়েছিল। যুদ্ধাপরাধী খুনি, জুলুমবাজ, ডাকাতদের কারামুক্ত করে দিয়ে রাজনৈতিক দল গঠন করা হল। প্রকৃতপক্ষে সেইদিনই তো রাজনীতি আর রাজনৈতিক নেতার হাত থেকে সরে গিয়েছিল। এরপর একটানা ২১ বছর কাদের হাতে রাজনীতি ছিল? দুর্নীতির খবর এখন উদ্ঘাটিত হচ্ছে, আগে হত না। দুর্নীতিবাজদের বিচার হত না। তাদের জন্য জেল-কারাগার কিছুই ছিল না। এসব ছিল সাধারণ অপরাধী ও বিরোধীমতের রাজনীতিক, গবেষক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবীর জন্য। দেশের কিছু গণমাধ্যম ও পত্রিকা ছাড়া সংবাদপত্র ছিল কুখ্যাত যুদ্ধপরাধী, মানবতাবিরোধীদের হাতে। তখন জানা যেত না সত্য ঘটনা। ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত কী হয়েছিল মনে রাখা দরকার। যারা মন্ত্রিত্ব পেয়েছিল তাদের কেউ কেউ যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী মামলায় ফাঁসিতে ঝুলল। এখন আমরা জানতে পারি, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনার কথা, আমরা জানতে পারি ফিলিপাইন ইনকোয়ারার থেকেও। অবৈধ মানব পাচারসংক্রান্ত খবর, ভূমধ্যসাগরে সলিলসমাধি, লিবিয়ায় প্রাণহানি ঘটলে এবং অতিসাম্প্রতিক সাংসদ শহিদের অবৈধ কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানতে পারি। রিজেন্ট হাসপাতাল কেলেঙ্কারির নায়ক সাহেদ করিম একাধিক বেসরকারি চ্যানেলে দুর্নীতি বিষয়ে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করেছে, নসিহত করেছে দেশের মানুষকে। যে এখন একটি শক্তিশালী

আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে। অর্থাৎ বর্তমান সরকার কাউকেই ছাড় দিচ্ছে না। এদেশের ইতিহাস তো অনেকেরই জানা। দেশের সাবেক প্রধানন্ত্রী, বিরোধীদলের নেত্রী ছিলেন যিনি, তিনিও দুর্নীতি মামলায় জেলে ছিলেন দীর্ঘদিন। এখন মানবিক কারণে ছয়মাসের জন্য বাড়িতে।
দুর্নীতি বিষয়ে অর্থবহ নানা আলোচনাও সম্ভব হচ্ছে এখন। সাহেদ, আরিফ চৌধুরী, ডা. সাবরিনাকে ছাড় দেওয়া হয়নি। তাদের ব্যাংক হিসেব জব্দ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার দুর্নীতি অনিয়মের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতিতে অটল। এটা তাঁর শত্রুরাও স্বীকার করবেন। ইতিমধ্যে দেখা গেছে, কে কোন দল বা মতের সেটি কখনই দেখা হয়নি। যদি আওয়ামী লীগেরও কেউ হয়, এমনকি পদধারী নেতাও যদি হয়, তার বিরুদ্ধেও কিন্তু অতীতে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। শেখ হাসিনার সরকার আমলেও জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ, এমপি, মন্ত্রী জেল খেটেছেন।

লেখক : উপসম্পাদক, দৈনিক আমাদের অর্থনীতি ও কথাসাহিত্যিক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়