সারওয়ার তুষার: আহমাদিয়া সম্প্রদায়ের এক নবজাগতকের লাশ কবর থেকে তুলে রাস্তায় ফেলে রাখার মতো যে ন্যাক্কারজনক ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেছে, এই ঘটনাকে যারা ইনিয়ে বিনিয়েও জাস্টিফাই করার চেষ্টা করবে তারা নিখাদ বর্ণবাদী। পাশাপাশি, আহমাদিয়া-কাদিয়ানি সম্প্রদায়কে ‘অমুসলিম’ ঘোষণার রাজনীতিও বর্ণবাদী রাজনীতি; যে রাজনীতি ‘রাষ্ট্রীয় বর্ণবাদ’-এর মতাদর্শিক পুনরুৎপাদন ঘটায় এবং সামাজিক পর্যায়ে জালের মতো এই মতাদর্শের বিস্তার ঘটায়। এই বর্ণবাদী রাজনীতির একমাত্র উদ্দেশ্য হলো মানুষকে ক্রমাগত রাজনৈতিক অধিকারহীন বর্গে চিহ্নিত করা এবং ‘বধযোগ্য’ নাঙ্গা জীবন হিসেবে উন্মোচন করা।
কিছুদিন আগে একটা লেখায় এই প্রসঙ্গে যা বলেছিলাম, তারই পুনরুক্তি করি : ‘তো, এরকম জৈবিক ও রাজনৈতিক অধিকারহীন নাঙ্গা জীবন যাপন করে বাংলাদেশের মানুষ। তারজন্য এমনকি ফ্লয়েডের মতো ‘মাইনরিটি’ও হতে হয়না তাদের। রাষ্ট্রীয় বর্ণবাদী একচেটিয়া সার্বভৌম ক্ষমতার কাছে এরকম উন্মোচিত নাঙ্গা জীবনের অধিকারীরাই আবার সমাজের জাতিগত-ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক-লৈঙ্গিকভাবে ভিন্নধর্মীদের ‘অপর’ বর্গে চিহ্নিত করে, বর্ণবাদী সার্বভৌম ক্ষমতার মতাদর্শ সমাজে পুনরুৎপাদন করে এবং সমাজদেহের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জালের মতো বিস্তার ঘটায়। ফলে নাস্তিক-শিবির-সমকামী এমনকি রাজনৈতিক অধিকারের জন্য লড়াইরত নাগরিকও সার্বভৌম ক্ষমতার ‘অপর’ ও বধযোগ্য প্রাণ হিশেবে উন্মোচিত হয়। হবস এর সার্বভৌম লেবিয়াথান যৌক্তিকতা পায় মানুষের প্রাকৃতিক অবস্থায় ‘প্রত্যেকে প্রত্যকের বিরুদ্ধে’র অজুহাতে।
বাংলাদেশে আমরা সেই পরিস্থিতির একধাপ অবনমন দেখছি : এখানে প্রত্যেকে প্রত্যকের ‘অপর’। আবার সবাই সার্বভৌম ক্ষমতার ‘অপর’। প্রত্যেকে একেকজন রাজনৈতিক অধিকারহীন সম্ভাব্য জর্জ ফ্লয়েড। নাকি লিমন? ‘রাষ্ট্রীয় বর্ণবাদ’ , সার্বভৌম ক্ষমতা, হত্যাযোগ্য নাঙ্গা জীবন (bare life)--ধারণাগুলো কেউ বাংলায় বিস্তারিত বুঝতে চাইলে, তাকে অবশ্যই পারভেজ আলমের ‘মদিনা’ বইটি পড়তে হবে। ফেসবুক থেকে