অনলাইন ডেস্ক : আমলকি প্রচুর ভিটামিন সি ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ ফল। এর অন্যতম গুণ হলো একাধিক রোগের নিরাময়ে কার্যকরি ভূমিকা রাখে। রয়েছে একাধি পুষ্টিগুণ। এর ফল ও পাতা দুটিই ওষুধরূপে ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন অসুখ সারানো ছাড়াও আমলকি রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে দারুণ সাহায্য করে। আমলকির গুণাগুণের জন্য আয়ুর্বেদিক ওষুধেও এখন আমলকির নির্যাস ব্যবহার করা হয়।
আমলকির পুষ্টি উপাদান: (প্রতি ১০০ গ্রামে) জলীয় অংশ ৯১.৪ গ্রাম, মোট খনিজ পদার্থ ০.৭ গ্রাম, হজমযোগ্য আঁশ ৩.৪ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ১৯ কেসি, আমিষ ০.৯ গ্রাম, চর্বি. ০.১ গ্রাম, শর্করা ৩.৫ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩৪ মিলিগ্রাম, লৌহ ১.২ মিলিগ্রাম, ক্যরোটিন ০০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি১ .০২ মিলিগ্রাম, ভিটাটিমন বি২.০৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৪৬৩ মিলিগ্রাম। আমলকিতে কমলালেবুর চেয়ে ১৫ থেকে ২০ গুণ বেশি, আপেলের চেয়ে ১২০ গুণ বেশি, আমের চেয়ে ২৪ গুণ এবং কলার চেয়ে ৬০ গুণ বেশি ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে।
ঔষধিগুণ: আমলকির রস যকৃৎ, পেটের পীড়া, হাঁপানি, কাশি,বহুমূত্র ,অর্জীণও জ্বর নিরাময়ে বিশেষ উপকারী। এর পাতার রস আমাশয়ে প্রতিষেধক ও বলকারক। আমলকীর রসের শরবত জন্ডিস, বদহজম ও কাশির হিতকর। হাঁপানি, কাশি, বহুমুত্র ও জ¦র নিরাময়ে এর বীজ ব্যবহার করা হয়।
ব্যবহার: আমলকী থেকে চাটনি, আচার তৈরি হয়। এছাড়াও আয়ুর্বেদীয় ও ইঊনানি ওষুধ তৈরিতে আমলকীর যথেষ্ট ব্যবহার। ত্রিফলার এক ফল হিসেবে বেশ জনপ্রিয় এবং প্রয়োজনীয়। কেটে শুকিয়ে দীর্ঘদিন সংরক্ষন করা যায়। মুখের রুচি ও হজমশক্তি বাড়াতে ব্যবহৃত হয়।
আমলকি খাওয়ার ১০টি উপকারিতা সম্পর্কে-
১. আমলকি চুলের টনিক হিসেবে কাজ করে এবং চুলের পরিচর্যার ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি কেবল চুলের গোড়া মজবুত করে তা নয়, এটি চুলের বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। এটি চুলের খুসকির সমস্যা দূর করে ও পাকা চুল প্রতিরোধ করে।
২. আমলকির রস কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলসের সমস্যা দূর করতে পারে। এছাড়াও এটি পেটের গোলযোগ ও বদহজম রুখতে সাহায্য করে।
৩. এক গ্লাস দুধ বা পানির মধ্যে আমলকি গুঁড়ো ও সামান্য চিনি মিশিয়ে দিনে দু’বার খেতে পারেন। এ্যাসিডেটের সমস্যা কম রাখতে সাহায্য করবে।
৪. আধা চূর্ণ শুষ্ক ফল এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে খেলে হজম সমস্যা কেটে যাবে। খাবারের সঙ্গে আমলকির আচার হজমে সাহায্য করে।
৫. প্রতিদিন সকালে আমলকির রসের সঙ্গে মধু মিশে খাওয়া যেতে পারে। এতে ত্বকের কালো দাগ দূর হবে ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে।
৬. আমলকির রস দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এছড়াও চোখের বিভিন্ন সমস্যা যেমন চোখের প্রদাহ। চোখ চুলকানি বা পানি পড়ার সমস্যা থেকে রেহাই দেয়। আমলকি চোখ ভাল রাখার জন্য উপকারী। এতে রয়েছে ফাইটো-কেমিক্যাল যা চোখের সঙ্গে জড়িও ডিজেনারেশন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
৭. প্রতিদিন আমলকির রস খেলে নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ দূর হয় এবং দাঁত শক্ত থাকে। আমলকির টক ও তেতো মুখে রুচি ও স্বাদ বাড়ায়। রুচি বৃদ্ধি ও খিদে বাড়ানোর জন্য আমলকী গুঁড়োর সঙ্গে সামান্য মধু ও মাখন মিশিয়ে খাওয়ার আগে খেতে পারেন।
৮. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং মানসিক চাপ কমায়। কফ, বমি, অনিদ্রা, ব্যথা-বেদনায় আমলকি অনেক উপকারী। ব্রঙ্কাইটিস ও এ্যাজমার জন্য আমলকির জুস উপকারী।
৯. শরীর ঠাণ্ডা রাখে, শরীরের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে, পেশী মজবুত করে। এটি হৃদযন্ত্র, ফুসফুসকে শক্তিশালী করে ও মস্তিষ্কের শক্তিবর্ধন করে। আমলকির আচার বা মোরব্বা মস্তিষ্ক ও হৃদযন্ত্রের দুর্বলতা দূর করে। শরীরের অপ্রয়োজনীয় ফ্যাট ঝরাতে সাহায্য করে।
১০. ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রেখে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। কোলেস্টেরল লেভেলেও কম রাখাতে যথেষ্ট সাহায্য করে।