মাজহারুল ইসলাম, বিপ্লব বিশ্বাস : [২] জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) মুর্শিদাবাদের অন্যতম শীর্ষ সংগঠক আবদুল করিম ওরফে বড় করিমকে গ্রেপ্তার করেছে কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। কলকাতা পুলিশের বরাতে শুক্রবার আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, মুর্শিদাবাদের সূতি থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
[৩] এসটিএফের গোয়েন্দাদের দাবি, এই মূহুর্তে এই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের ৩ শীর্ষ নেতার একজন করিম। সংগঠনের অর্থ জোগাড় থেকে বিস্ফোরক সরবরাহ এবং ‘লজিস্টিক’ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ছিল তাঁর। বর্তমানে তিনি সংগঠনের প্রধান সালাউদ্দিন সালেহিনের ঘনিষ্ঠ বলে দাবি গোয়েন্দাদের।
[৪] গোয়েন্দা সূত্রে জানায়, ২০১৮ সালে দলাই লামার বুদ্ধগয়া সফরের সময় খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের ছক করে নিষিদ্ধ জঙ্গি গোষ্ঠী জেএমবি। ততদিনে জেএমবি-র সংগঠন ২ টি ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। সালাউদ্দিন সালেহিন, জহিদুল ইসলামসহ শীর্ষ নেতারা ভারতে সংগঠন বিস্তার করা শুরু করে। খাগড়াগড়ের সঙ্গে সঙ্গে বেলডাঙা, বীরভূমের সমস্ত মডিউল ভেঙে যাওয়ায়, তারা নতুন নিয়োগ করা যুবকদের নিয়ে তৈরি করে ধূলিয়ান মডিউল।
[৫] মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ, সূতিসহ জঙ্গিপুর মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকায় সেই সংগঠন তৈরি হয়। ধূলিয়ান মডিউলকেই ব্যবহার করা হয় বুদ্ধগয়ায় বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কলকাতা পুলিশের এসটিএফ ধূলিয়ান মডিউলের অন্যতম চাঁই পয়গম্বর শেখ এবং জমিরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে। সেসময় তল্লাশি চালাতে গিয়ে সামশেরগঞ্জে আবদুল করিমের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় প্রায় ৫০ কিলোগ্রাম অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটসহ বিভিন্ন ধরনের বিস্ফোরক। সে সময় গোয়েন্দাদের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে যায় করিম। ধরা পড়ে মডিউলের আরও এক সদস্য ছোট করিম।
[৬] গোয়েন্দাদের দাবি, এ ২ বছরে জেএমবি সংগঠনটিতে অনেক পরিবর্তন হয়। জহিদুল ওরফে কাওসারের সঙ্গে সালাউদ্দিনের আদর্শগত বিরোধ থেকে এদেশের জেএমবি সংগঠনেও আড়াআড়ি ভাগ তৈরি হয়। দক্ষিণ ভারত থেকে একে একে ধরা পড়ে কাওসার এবং তাঁর ঘনিষ্ঠরা। গত বছরের গোড়ার দিকে সালাউদ্দিন তৈরি করে জামাতুল মুজাহিদিন হিন্দ অর্থাৎ জেমবি’র ভারতীয় শাখা।
[৭] এসটিএফের গোয়েন্দাদের দাবি, গত কয়েক বছরে বড় করিম বাংলাদেশেও জেএমবি-র সালাউদ্দিন গোষ্ঠীর লোকজনদের সঙ্গে দেখা করেছে এবং বৈঠক করেছে। করিমের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল সালাউদ্দিন এবং বাংলাদেশে জেএমবির অন্য এক শীর্ষ নেতা মাস্টারের। এরা দু’জন ২০১৫ সালে করিমের বাড়িতেও থেকে গিয়েছেন।
[৮] করিম বাংলাদেশের সংগঠনের একটি অংশের সঙ্গে সমন্বয় রাখছিল। এসটিএফের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের কাছে পাওয়া শীর্ষ এবং সক্রিয় জেএমবি নেতাদের তালিকায় প্রথম সারিতে রয়েছে করিমের নাম।
[৯] ডিসি এসটিএফ অপরাজিতা রাই জানিয়েছেন, করিম সংগঠনের তৃতীয় শীর্ষ নেতা। কয়েকদিন আগেই মুর্শিদাবাদে ফেরে করিম। এই ক’বছর কেরেলা, তামিলনাড়ুসহ দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন এলাকায় এ রাজ্যের শ্রমিকদের ভিড়ে গা ঢাকা দিয়েছিল সে। সম্ভবত কোভিড আতঙ্কের জেরে বা লকডাউনে বিপাকে পড়ে নিজের এলাকায় ফেরেন করিম। তার খবর পেয়ে আমরা প্রথমে সামশেরগঞ্জে করিমের বাড়িতে তল্লাশি চালাই। এরপর আরও ৫ জায়গায় তল্লাশি চালানোর পর সূতি থানা এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। করিমকে গ্রেপ্তারের পর সংগঠনের বাকি ২ নেতা সালাউদ্দিন এবং মিন্টু খানকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন এসটিএফের গোয়েন্দারা।