মুসবা তিন্নি : [২] রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের থেকে জানা যায়, আম্পানের যে গতিবেগ ছিল তা রাজশাহী পৌঁছার আগেই দুর্বল হয়ে পড়েছিলো। ঝড় হিসেবেই রাজশাহী ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় প্রবেশ করে আম্পান। এর স্থায়িত্ব ছিলো আধা ঘণ্টার মতো। এর প্রভাবে রাজশাহী অঞ্চলে দমকা ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়। সেইসঙ্গে ভারী বৃষ্টিপাতও হয়। বৃহস্পতিবার রাত ২টা ৫৫ মিনিট থেকে ২টা ৫৮ মিনিট পর্যন্ত বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিলো ঘণ্টায় ৫৯ কিলোমিটার। এটি অবশ্য ঘূর্ণিঝড়ের মাত্রায় পড়ে না। বাতাসের গতি ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটারের ওপরে থাকলে তাকে ঘূর্ণিঝড় বলে। রাজশাহীতে ঘূর্ণিঝড়ের একধাপ নিচের মাত্রার ঝড় হয়েছে। সেইসঙ্গে বৃষ্টিপাতও হয়েছে। বুধবার ভোর ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৮১ মিলিমিটার।
[৩] তবে এই ঝড়েই ভেঙে পরেছে ছোট্ট শালিক পাখির ঘর। গাছের ডালে পরিবার নিয়ে বাসা বেধেছিলো সে। পরিবারের সদস্য ছয়জন। তবে তারা সবাই এখন মৃত। গতকাল রাতে ঝড়ের তাণ্ডব কেড়ে নিয়েছে তাদের প্রান। ভেঙে পড়া ছোট্ট ঘরটায় ছিলো চারটি সদ্য চোখ না ফোটা বাচ্চাদের অর্ধমৃত দেহ এবং একটি ডিম। বাচ্চাদের মায়েরাও মারা গেছে স্থানীয়রা পাখির লাশ ফেলে দিয়েছে কুড়ায়। তবে অর্ধমৃত বাচ্চাদের ভেঙে যাওয়া ঘরটিকে ঘিরে ছিলো এলাকার ছোট ছেলেমেয়েদের নানা কৌতূহল। কেউ বলেছে তুলে নিয়ে গিয়ে যত্ন করলে হয়তো বেঁচে যাবে এরা। কেউবা মৃত পাখিদের ঘর দেখে কান্না করেছে। তবে শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যায়নি তাদের।
[৪] বস্তুত, এপ্রিল ও মে এখন চলছে পাখির প্রজনন মৌসুম। অর্থাৎ তাদের বংশবৃদ্ধির কার্যক্রম। বাসার স্থান নির্বাচন, বাসা তৈরি, ডিম দিয়ে তাতে তা দেওয়া এবং সবশেষে ডিম ফুটে ছানা বের হওয়া। এভাবে নির্ধারিত হয় পাখিদের জীবনচক্র। কিন্তু ঝড়বৃষ্টির এই মৌসুমটি পাখির জন্য মারাত্মক বিপজ্জনক। বিশেষ করে পাখির ছানাদের ক্ষেত্রে। এই সময়ের বিরামহীন ঝড়বৃষ্টিতে অনেক ক্ষেত্রে পাখির ছানাগুলো তাদের বাসা থেকে মাটিতে পড়ে যায়। এই দৃশ্য দেখে কারো কারো হৃদয়ে মায়া-মমতার জন্ম হয়। ঝড়ে মাটিতে পড়ে যাওয়া কোনো পাখির ছানাকে পুনরায় গাছের তুলে দেওয়া কিংবা পাশের গাছের পাখির বাসায় রেখে দেওয়ার আনন্দ সীমাহীন। মাটিতে পড়ে যাওয়া পাখির ছানাকে গাছে তুলে এমন ভালোলাগার আশ্চর্য অনুভূতির সঙ্গে আমরা অনেকেই জড়িয়ে পড়তে পারি। শুধু ইচ্ছেটাই এখানে প্রধান।
[৫] রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী সুলতানা শারমিন আহমেদ বলেন, যারা এখন বাড়িতে আছেন একটু খেয়াল করবেন, ঝড়ের পরপরই কখনোবা আপনার বাসার আশপাশে গাছের পাখির ছানাটিও মাটিতে পড়ে যেতে পারে। তাই পাখির চিরশত্রু বিড়াল, কুকুর এদের হাত থেকে পাখির ছানাটিকে বাঁচাতে তাড়াতাড়ি গাছে তুলে দিন। যদিও কাজটা একদমই ছোট, তবে আমাদের প্রকৃতির রক্ষায় পাখির পরবর্তী প্রজন্ম রক্ষার্থে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে জানান তিনি।
[৬] এ বিষয়ে কথা হয় রাজশাহী জেলার প্রানী সম্পদ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড. অন্তিম কুমার সরকারের সাথে, তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের যে ব্যাপকতা ধারণা করা হয়েছিলো ততটা ভয়াবহ রুপ রাজশাহীতে দেখা যায়নি। পূর্বেই ঘূর্ণিঝড়ের কবল থেকে রক্ষার জন্য জেলার গবাদি পশুর খামার এবং স্থানীয়ভাবে যারা পশুপালন করেন তাদের সতর্ক করা হয়েছিলো তাই রাজশাহীতে গবাদি পশুর কোনো প্রকার ক্ষতি হয়নি। তবে গাছে বাসা বাধা পাখিরা এর শিকার হতে পারে। তবে এখনো তেমন ব্যাপকতা লক্ষ করা যায়নি।
আপনার মতামত লিখুন :