হাসিনা আকতার নিগার : কোভিড ১৯ মানুষের জন্য আগামী দিনের এক গল্প । যে গল্পে থাকবে প্রতিটি মহামারীর মত মানুষের প্রিয়জন হারানোর শোক । ক্ষুধার যন্ত্রণায় মৃত্যুকে উপেক্ষা করে বাঁচার তাগিদ। আরও থাকবে করোনা ভাইরাস থেকে মানুষকে বাঁচানোর জন্য ফ্রন্টলাইনের যোদ্ধাদের কথা। তবে যে নির্মম সত্য গল্পকে বেদনাদায়ক করবে তা হলো, জীবিকার কাছে জীবন তুচ্ছ। করোনা ভাইরাসের ভয়ানক পরিস্থিতিতে জীবন রক্ষার চেয়ে জীবিকার তাগিদ যে অনেক বেশি তা লকডাউন কালে কঠিন ভাবে প্রমাণিত হচ্ছে।
গত মার্চ থেকে লক ডাউন বা সরকারি ছুটি চলছে দেশে। মানুষের জীবন যাত্রাতে এ লকডাউন ক্রমশ বিষাদের ছাপ ফেলছে। কারন সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে গেছে মানুষের জীবিকার স্থলগুলো। আয় রোজগারে এর চরম প্রভাব পড়বে কোভিড ১৯ এর দুর্যোগ কেটে গেলেও। প্রায় ২ কোটি মানুষের আর্থিক অবস্থা দারিদ্র্য সীমার নীচে নেমে আসবে। বর্তমানে দেশের বেশির ভাগ নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের আয় রোজগার নেই বলে তারা লক ডাউন মানতে নারাজ। মানুষের কাছে করোনা ভাইরাসের কারনে মৃত্যুর চেয়ে বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে জীবিকা। তাই গার্মেন্টস কর্মীরা চাকরি বাঁচাতে কাজে আসছে। আবার দিন মজুর খেটে খাওয়া মানুষরা রাস্তায় নেমেছে কাছের সন্ধানে। অনেক প্রাইভেট অফিসে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষ কাজ করছে। কারণ চাকরিটা টিকে থাকলে জীবন চালাতে পারবে।
সরকার লকডাউনে মানুষকে ঘরে থাকতে ত্রান দিচ্ছে। বিভিন্ন প্রনোদনা প্যাকেজ ঘোষণা দিয়েছে দেশের অর্থনীতিকে সচল করতে। কিন্তু এসব প্যাকেজ কার্যকর করার আগে জীবিকার নিশ্চিয়তা জরুরি। যা এখন পর্যন্ত কেউ পায়নি। বরং অনেক প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান হয় বেতন বন্ধ করছে না হয় অর্ধেক করে দিচ্ছে। কল কারখানাতে কর্মী ছাটাই হচ্ছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সারা বিশ্বকে চিন্তিত করে তুলেছে। সেখানে বাংলাদেশে ঘোষিত লকডাউনের অঘোষিত শিথিলতা প্রমান করে - জীবন বাঁচানোর সাথে জীবিকার ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে নিয়ন্ত্রণহীন সমাজ দেশ।
মানুষের জন্ম মৃত্যু হলো নিয়তির বিধান। কিন্তু বেঁচে থাকতে হলে অর্থ উর্পাজন করতে হবে। ব্যক্তি, সমাজ দেশ সব টিকে আছে এ অর্থের উপর। অর্থের কাছে আবেগ ভালোবাসা মায়া তুচ্ছ। তাই অন্য দেশের মত বাংলাদেশ সরকার ও লকডাউনে মানুষের ঘরে থাকার বিষয়ে নমনীয় অবস্থান নিয়েছে। যদিও করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের হার মে মাসে বাড়ার আশংকা রয়েছে। তথাপি গার্মেন্টস, পরিবহন সীমিত আকারে নিয়ম মেনে চালু করতে বলা হয়েছে। আর মানুষ কতটা নিয়ম মানছে তা দৃশ্যমান।
কোভিড ১৯ এর মহামারীর সংকট অতীতের ইতিহাসের সাথে অনেকটা অমিল। জীবনের পরিবর্তনের সাথে চাহিদা বাড়ছে মানুষের৷ জীবিকার তাগিদে শহরে থাকা মানুষদের শুধু ত্রান দিয়ে জীবন চলে না। তাদের নগদ অর্থের প্রয়োজন। লকডাউনের কারণে মানুষের বাড়ি ভাড়া, স্কুল কলেজে বেতন, সহ অন্যান্য প্রয়োজন বন্ধ হয়ে যায়নি। তাই চাল ডাল দিয়ে মহামারী দিন কাটালেও ঋনের চিন্তা শেষ হয়ে যায়নি। আর এ সংকট থেকে মুক্তি পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সকল।
শারীরিক চিন্তার চেয়ে মানসিক চাপে বির্পযস্ত মানুষ। অন্যদিকে দেশের স্থবির অর্থনীতিতে সরকার থেকে সকল মানুষ সাহায্য সহযোগিতা পাচ্ছে না। প্রশাসনিক কাঠামোতে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়হীনতার এখন সুস্পষ্ট। মানুষ আর্থ সামাজিক অবস্থার তথ্য উপাত্ত নেই বলে নিম্ন বিত্ত, মধ্যবিত্তকে ঘরের বাইরে গিয়ে কাজে করতে হচ্ছে। আর ত্রানের তালিকায় নতুন করে তৈরি হচ্ছে। তবে সে তালিকায় সঠিক ব্যক্তিরা থাকবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। করোনা ভাইরাস থেকে কবে মুক্তি মিলবে তা অনিশ্চিত। তাই এখন মানুষকে কর্মহীন হয়ে অর্থকষ্ট নিয়ে ঘরে থাকা দুস্কর। প্রকৃতপক্ষে এ অদৃশ্য ক্ষুদ্র ভাইরাসটি মানুষকে বুঝিয়ে দিয়েছে জীবিকা ছাড়া জীবন অচল। রোগ যন্ত্রণার চেয়ে ভয়ানক হয় জীবিকাহীন জীবন। তাই অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে মানবিকতা অমানবিকতা এখন কেবল একটা প্রশ্ন দেশ ও মানুষের কাছে।
লেখক পরিচিতি : কলাম লেখক