রাজু আলাউদ্দিন: [২] একদিকে দ্রুত গতির বুলেট ট্রেন চালানোর স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। অন্যদিকে এখনও রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতনের টাকা বস্তায় ভরে ট্রেনে করে ঘুরে ঘুরে স্টেশন থেকে স্টেশনে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। রেলের উন্নয়নে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ বাড়লেও পরিবর্তন হয়নি ১৩০ বছর আগের বেতন পরিশোধ পদ্ধতির। দেশে এত ব্যাংক ব্যবস্থার সুবিধা ঘটলেও তারা এখনো পরে আছে সেই ব্রিটিশ আমলের নীতিমালায়।
[৩] করোনাভাইরাস রোধে ২৬ মার্চ রেল চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হলেও, ঢাকার কমলাপুর স্টেশন থেকে একটি ট্রেন সিলেট স্টেশনে পৌঁছায়। ১৯ এপ্রিল বেসরকারি সংবাদ মাধ্যম সময় টেলিভিশনসহ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, লকডাউন ভেঙে রাজধানী কমলাপুর থেকে যাত্রী নিয়ে সিলেট যায় একটি ট্রেন। তখনই লকডাউনে ট্রেন যাত্রার আসল কারণ বেরিয়ে আসে।
[৪] রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোফাজ্জেল হোসেন সময় সংবাদকে জানান, ওটাকে সম্পূর্ণ ট্রেন বলা যায় না। ওইটা অসম্পূর্ণ ট্রেন ছিল ইঞ্জিনের সাথে ৪টি বগি নিয়ে ট্রেনটি রেলের কর্মচারীদের বেতন দিতেই সিলেট গিয়েছিল। মাঝপথের স্টেশনগুলোতে রেলের কিছু কর্মচারী উঠেছিল ট্রেনটিতে যাদের সবাই দায়িত্ব পালনের জন্যই জায়গা বদল করছিলেন। বিষয়গুলো নিয়ে জানতে চাইলে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন সময় সংবাদকে বলেন, ‘লকডাউন ভেঙে ট্রেন যাত্রী পরিবহন করেছে এটা ঠিক নয়। রেলের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের বেতন দেয়ার ক্ষেত্রে বহুকাল থেকেই এ প্রথা চলে আসছে। শুধু সিলেটেই কর্মরত অন্তত ৩০০ কর্মচারীর ১ কোটি ২০ লাখ টাকা বেতন নিয়ে সেদিন ট্রেনটি সিলেটে গিয়েছিল।
[৫] এ টাকার নিরাপত্তা দিতে সাথে বেশ কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মী পাঠানো হয়েছিল বলে ট্রেনে অতিরিক্ত লোক মনে হয়েছে। মূলত ওই ট্রেনে যারা ছিলেন তারা সবাই রেলের কর্মচারী, সেখানে বাইরের কোনো লোক ছিল না। এরমধ্যে অবৈধভাবে যাত্রী ছিল না। অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় ব্যাপারটি তদন্ত করে দেখছে রেলওয়ে। ইতোমধ্যে সিলেট স্টেশনের কয়েকজন কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকার কারণে সাময়িকভাবে ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
[৬] রেলওয়ের অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ১৮৯০ সাল থেকেই এমনটা চলে আসছে। কর্মচারীদের বেতনের প্রক্রিয়াটি আধুনিকায়নের চেষ্টা চলছে বেশ ক’বছর ধরেই। কিন্তু সেটি এগোয়নি। ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের (ইএফটি) মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যাংককে বেতন স্থানান্তর কার্যক্রম এখনও চালু করা যায়নি। বিশ্বায়নের এই যুগে ২০২০ সালে এসেও ট্রেনে করে বেতনের টাকা পরিবহনের ঘটনায় বিস্মিত হয়েছেন অনেকেই। সময় টিভি