হাসনাত কাইয়ূম : এককালে কলেরা মহামারি ছিলো। গ্রামদেশে কলেরাকে ওলাউঠা বলা হতো। তাই গ্রামে গ্রামে ওলা বিবর পুজা-সিন্নি হতো। আর রাতের বেলা পীর-ফকির-হুজুরেরা বা তাদের সাহসী মুরীদেরা গ্রাম পাহাড়া দিতো। আমরা হযরত আলীর তরবারির আঘাতে ওলাবিবির কল্লা কাটাার গল্প শুনে সাহসের চেয়ে বেশি ভয় পেতাম। রাতের বেলা ঘরের পেছনের বেড়া ঘেষে ঘেষে, বাড়ির পেছনের ঝোপের দিকে, মুন্ডুহীন, বুকের উপর চোখ লাগানো, পেছন দিকে হাটা, ওলা বিবির নড়াছড়ার ঝমঝম শব্দ শুনে ভয় পেতাম। আমাদের গ্রাম পাহাড়া দিতো সিন্ধু ভাই। সিন্ধু ভাই বিয়ে-শাদী করেন নাই। হাতে একটা দুষমন নিয়ে রাতের বেলা গ্রামের এ মাথা ওমাথা পাহাড়া দিতো।
তার হাতের দসমন থেকে যে ঝনঝন আওয়াজটা বের হতো সেটা আমাকে সাহস দিতো । কখনো কখনো এক এক পাড়ার বাঁণ ভেঙে যেতো আর ওলাবিবি ঘর কি ঘর, বাড়ি কি বাড়ি, পাড়া কি পাড়া, সাফ করে দিতো। বহু পরে জানা গেলো, কলেরা হলে শরীরে পানি আর লবন শুন্যতা দেখা দেয় বলে মানুষ মারা যায়। ওষুধ কোম্পানিগুলো প্রথমে স্যালাইন পরে ওর-স্যালাইন বাজারে আনলো। ব্রাক এসে বললো, যাদের ঘরে ওর-স্যালাইন বা খাবার স্যালাইন নাই, তারা ‘এক মুটো গুড়, এক চিমটি লবন, এক গ্লাস পানিতে গুটা দিলেই খাবার স্যালাইন তৈরি হয়ে যাবে। ব্রাকের এই হাতে বানানো স্যালাইন প্রতিবছর কতো লাখ শিশুর জীবন বাচঁয়েছে তার হিসাব নেই। ব্রাকের হাতে বানানো স্যালাইনের গল্প নিয়ে তখনকার ওষুধ প্রশাসন এমন কোন নাটক করেছিলো নাকি? মনে আসছে না ।
আজকে যা করোনা তাও একদিন দূর হবে। আমি যেমন আজকে ওলাবিবির কথা স্মরণ করছি, আগামীতে এমনই কেউ হয়তো অন্য কোনো দেও-দানো, অন্য কোন ভুত-প্রেতের বাণিজ্য আর শাসনকালের কথাও স্মরণ করবে। ফেসবুক থেকে