গোলাম মোর্শেদ : [২] রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় বাংলাদেশ শ্রম ইনস্টিটিউটের বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে কাজ করতে বাধ্য করার মাধ্যমে অন্তত ১১৩৬ শ্রমিককে মৃত্যু এবং আরো ২৫০০ শ্রমিককে স্থায়ী পঙ্গুত্বের দিকে ঠেলে দেওয়ার ভয়াবহ ও নেক্কারজনক ঘটনাটির পর সাত বছর পেরিয়ে গেছে। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিলে রানা প্লাজা ভবনের নাজুক পরিস্থিতি এবং সে অবস্থায় কাজ করতে শ্রমিকদের অনীহা ও আপত্তির বিষয়গুলো অজানা ছিল না মালিকপক্ষের। তারপরও গুণ্ডাদের দিয়ে পিটিয়ে ও জোরজবরদস্তি করে শ্রমিকদের কারখানায় ঢুকানো হয়েছিল আর ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ঘটেছিল হাজার মানুষের মৃত্যু ও জখম হওয়ার ঘটনা।
[৩] বিবৃতিতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, আমরা মনে করি, ঠণ্ডামাথায় খুনের এ ঘটনার বিচার আজও হয়নি মালিকপক্ষের ষড়যন্ত্র এবং সরকারের দায়িত্বহীনতার কারণে। এ বিচারহীনতা প্রতিদিন বাংলাদেশের সাধারণ ও খেটেখাওয়া নাগরিকদের শোষণ ও বঞ্চিত করার নতুন নতুন পথকে উৎসাহিত করে চলেছে। এত বড় হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়া বাংলাদেশের জন্য এক ‘জাতীয় কলঙ্ক’। এ থেকে মুক্তির উপায় হলো প্রকৃত দোষীদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করা এবং জবাবদিহিতার আওতায় আনা। আজ করোনাকালে গার্মেন্ট শিল্পে যে অরাজকতা ও অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছে তা ওই বিচারহীনতা ও জবাবদিহিতা না থাকার কারণেই। শিল্পের কল্যাণে সরকার বিশেষ ঋণসহায়তা দিয়েছে। অথচ নিয়োজকেরা ন্যায্য পাওনা না দিয়ে শ্রমিকদের যেভাবে পথে নামতে বাধ্য করেছে, তা নজিরবিহীন। তাদের নির্লজ্জ দায়িত্বহীনতার কারণে আজ দেশের কোটি কোটি মানুষ মৃত্যু ঝুঁকিতে পড়েছে।
[৪] দেশ ও জাতির কল্যাণে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন ও মতপ্রকাশের অধিকার সুনিশ্চিত করা প্রয়োজন। কর্মস্থলে দুর্ঘটনার শিকার শ্রমিক-কর্মচারীদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়া ও পুনর্বাসনের জন্য আইন ও গাইউলাইন থাকা আবশ্যক। আশা করি, শ্রমিক-পেশাজীবীদের, অর্থাৎ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের, জীবন-জীবিকা নিরাপদ ও সমৃদ্ধ করতে সরকার, মালিকপক্ষ ও শ্রমিক সংগঠনসমূহ আরো সাহসী, দায়িত্বশীল, উদ্যোগী ও আন্তরিক ভূমিকা রাখবে।