এম নজরুল ইসলাম : মানব সভ্যতার বিকাশে নারীরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলছেন। অতীতে সারা দুনিয়ায় নারীরা নানাভাবে বঞ্চনার শিকার হয়েছেন। কিন্তু আজকের দিনে সেই অবস্থা আর নেই। নারীর প্রতি পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি অনেক পরিবর্তন হয়েছে। পারিবারিক এবং সামাজিক মূল্যবোধে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।
মায়ের জাতি বলে নারীর প্রতি যে শ্রদ্ধা ও সহানুভূতি দেখানো হতো সেটা এখন প্রায় অতীত। নারীরা আজ মানুষ হিসেবে শ্রদ্ধা পাচ্ছেন। বিশে^র অনেক দেশে আজ নারী যাজক আছেন। ভারতের মণ্ডপে নারী পুরোহিত আছেন। সুইজারল্যান্ডে এক মসজিদে নারী ইমাম রয়েছেন। আজ প্রায় সব দেশে নারীরা যার যার অবস্থানে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করছেন।
আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারী দিবসের মূল কথাটি হলো, শ্রমিক নারীর কাজের সময়, ছুটি, সম্মানজনক বেতনের দাবিতে আন্দোলন। ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ আমেরিকার বস্ত্রশিল্পের নারী শ্রমিকদের কাজের সময় কমানো এবং মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে লড়াই সারা বিশে^ আলোড়ন তোলে। পরবর্তীকালে যুক্ত হয় মেয়েদের ভোটের অধিকারের দাবি। এসব দাবি আদায়ের উদ্দেশ্যে ১৯১০ সালের ৮ মার্চ ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে কর্মজীবী নারীদের বিশ^ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ওইদিন অর্থাৎ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হয়। এরপর থেকে প্রতিবছর ৮ মার্চ সারা বিশে^ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
উন্নত দেশের নারীদের মতো বাংলাদেশের নারীরাও আজ দাপটের সহিত এগিয়ে চলছেন। তারা ঘর গোছাচ্ছেন, স্বামী-সন্তানকে যথাযথ আদর-যত্ন করছেন। করছেন আয়-উপার্জনও। একসময় ডাকসুর ভিপি ছিলেন একজন নারী। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি নারী-পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছেন। তাতে বিপুলসংখ্যক শহীদ হয়েছেন। বাংলাদেশের নারী এভারেস্টের চূড়ায় লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়েছেন। আন্তর্জাতিক দাবায় গ্র্যান্ড মাস্টার খেতাব পেয়েছেন বাংলাদেশের একজন নারী। রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে নারীর অংশগ্রহণের মান হিসেবে বিশে^র মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ।
দেশের দুটি বড় রাজনৈতিক দলের প্রধান নারী। দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, জাতীয় সংসদের স্পিকারও নারী। এ ছাড়া কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীও নারী। সরকার, প্রশাসনসহ বিভিন্ন পেশায় নারীদের অবস্থান খুবই সুদৃঢ়। তাদের অনেকেই বিস্ময়কর সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। তাইতো ইকোনমিক্সে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. অমর্ত্য সেন বলেছেন, ‘নারী উন্নয়নে দক্ষিণ এশিয়ার রোল মডেল বাংলাদেশ।’ কিছু কিছু নারীবাদী বলেন, ‘কোনো নারীই কোনো পুরুষের ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়।’ আসলে নারী-পুরুষ নিজ নিজ অবস্থানে সমুজ্জ্বল। কেউ কারও প্রতিপক্ষ তো নয়ই, বরং একে অপরের পরিপূরক। বিবাহিত জীবনে নারীর কাছে তার স্বামী তার ব্যক্তিগত সম্পত্তি, আবার পুরুষের কাছে তার স্ত্রী তার ব্যক্তিগত সম্পত্তি, এটা তো অনিবার্য সত্য।
মানবতন্ত্র বলে বৈষম্যহীন ও হিংসাবিহীন সমাজই কেবল নারী-পুরুষের স্বনির্ভরতা ও সমানাধিকার নিশ্চিত করতে পারে। আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে আসুন আমরা সবাই যার যার ভেতরের শুভ বোধগুলোকে জাগ্রত করি। নিজে উন্নত নৈতিকতার চর্চা করি। অন্যকে করতে উদ্বুদ্ধ করি।
লেখক : সর্ব ইউরোপীয় আওয়ামী লীগের সভাপতিঅস্ট্রিয়া প্রবাসী লেখক, মানবাধিকার কর্মী
সূত্র : সময়ের আলো